চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) সংশোধিত বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয় কৃচ্ছসাধনের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ সম্প্রতি এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করে সব মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত কল্পে মধ্য মেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতায় সব মন্ত্রণালয়ের চলতি অর্থবছরের বাজেট সময়মত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সংশোধিত বাজেট’ প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এ জন্য নতুন নিয়ম জারি করা হলো।
অর্থবিভাগের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে যে পরিমাণ বরাদ্দ রাখা হয়েছে সংশোধিত বাজেটে ব্যয়সীমা (পরিচালন এবং উন্নয়ন) একই রাখতে হবে। অর্থাৎ সংশোধিত বাজেটে কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। উন্নয়ন বাজেটের অর্থ অব্যায়িত থাকলে সেই বরাদ্দ পরিচালনা বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে এরইমধ্যে সব ধরনের যানবাহন ক্রয়, কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো, জ্বালানি খাতে ব্যয় সাশ্রয়সহ নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংশোধিত বাজেটে যাতে এসব খাতে বরাদ্দ না চাওয়া হয় সে জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অপ্রযোজনীয় ব্যয় পরিহার করে সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনের কথা বলা হয়েছে।’
চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন বাজেটে বা এডিপি দুই লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যয় সংকোচনকে মাথায় রেখে এবার সংশোধিত বাজেটের কাজ শুরু করেছেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা। অগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য সম্পদ কমিটির বৈঠকে সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করা হবে।
পরিপত্রে বলা হয়, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব যানবাহন ক্রয় বন্ধ করা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ অর্থ অন্য কোনো খাতে স্থানান্তর করা যাবে না।
সরকারি ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে জ্বলানি খাতে বরাদ্দ অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ খাতে ২৫ শতাংশের বেশি ব্যয় না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অর্থমন্ত্রণালয় বলেছে, এই দুটি খাতে বরাদ্দ করা অর্থ অন্য কোনো খাতে স্থানান্তর করা যাবে না।
রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি বিবেচনা করে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ চাওয়ার কথা বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থবিভাগের পরিপত্রে বলা হয়, গত দুই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস এবং চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের ধারা বিবেচনা করে সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন করতে হবে। বেতনভাতা খাতে চলতি অর্থবছরের তিন মাসের প্রকৃত ব্যয়ের ভিত্তিতে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ চাইতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ভাতায় বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। প্রায় ২১ লাখ সরাকরি চারিজীবি সরকারি কোষাগার থেকে নিয়মিত বেতন ভাতা পান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, মূল বাজেটে সংস্থান ছিল না, এমন কোনো সম্পদ সংগ্রহের জন্য সংশোধিত বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে না।তবে অপ্রত্যাশিত খাত থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, উন্নয়ন বাজেটেও ব্যয় করার ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। অনুমোদন হয়নি- এমন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা যাবে না।
চলতি অর্থবছরে যে সব প্রকল্প সমাপ্ত হবে সে গুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হবে। তবে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া অর্থ সম্পূর্ণ ব্যয় করা যাবে।
সংশোধিত নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রেখে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে পরিপত্রে। এ ছাড়া সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দবিহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না।
ঘূর্ণিঝড়, বন্যাউত্তর পুনর্বাসন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি চুক্তি সম্পাদন হয়েছে, এমন সব প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে যুক্ত করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয় অর্থবিভাগের জারি করা পরিপত্রে।
তবে বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির সুনিশ্চিত অঙ্গীকারপ্রাপ্ত প্রকল্প ছাড়া কোনো অননুমোদিত কারিগরি সহায়তা প্রকল্প সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
সংশোধিত এডিপিতে এলাকাভিত্তিক প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে পরিপত্রে। এ ছাড়া ধীর গতি সম্পন্ন প্রকল্প হতে বরাদ্দ কর্তন করে দ্রুত বাস্তবায়ন গতি সম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।