আর মাত্র তিন দিন পর বাংলাদেশের মানুষের আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। পদ্মা সেতু পর এবার চালু হচ্ছে বহুল প্রতিক্ষিত মেট্টোরেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ ডিসেম্বর বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করবেন।
রাজধানীর উত্তরা (দিয়াবাড়ি) থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। বুধবার উদ্বোধন করা হবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের, যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
তবে মেট্রোরেল নিয়ে ঢাকায় উৎসবের আমেজ থাকলেও সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতি মন্থর। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) মোট এডিপির মাত্র ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৪৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের এই হার ছিল ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।
অর্থাৎ গত অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর সময়ে মোট এডিপির ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ অর্থ খরচ করেছিল সরকার। এবার একই সময়ে ব্যয় হয়েছে ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।
অবশ্য সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবয়নে এই ধীরগতির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেকে ‘দায়ি’ করছেন সরকারের নীতিনির্ধারক ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপে। সেটি সামাল দিতে ব্যয় সংকোচন করছে সরকার। তার প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ বা আইএমইডি’র সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে এডিপির আওতায় উন্নয়ন কার্যক্রমে সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে, নভেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ পাঁচ মাসে তার মাত্র ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৪৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা।
চলতি বাজেটে বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয় সরকার। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এই টাকার মধ্যে ৪৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ হিসাবেই ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ খরচ হয়েছে, যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায়ও কম। করোনা মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়নের ধীরগতি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আড়াই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ওলট-পালট হয়ে গেছে। তার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়েছে। তবে অনেক দেশের চেয়ে এখনো আমরা ভালো আছি। মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হয়েছে। ব্যয় সংকোচনের কারণে আমরা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে কম মনোযোগ দিচ্ছি। সে কারণে হয়তো আগের তুলনায় খরচ একটু কম হয়েছে। তবে অর্থবছর শেষে দেখবেন, ঠিকই ৯০ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন হবে।’
আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে গুরুত্বপূর্ণ ১৫ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৯ শতাংশ বরাদ্দ বাস্তবায়ন করেছে সেতু বিভাগ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৩০ শতাংশ বরাদ্দ বাস্তবায়ন করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আর বিদ্যুৎ বিভাগ তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ বরাদ্দ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বাস্তবায়ন করেছে বরাদ্দের ২৫ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ২১ শতাংশ, রেল মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে বরাদ্দের ২০ শতাংশ করে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে এই হার ১৯ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় করেছে ১৮ শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১৫ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় করেছে ১১ শতাংশ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ১০ শতাংশ। বরাদ্দের দিক দিয়ে বড় মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বরাদ্দ ব্যয় করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস পর্যন্ত এডিপির অর্থ ব্যয়ে পিছিয়ে থাকার বিষয়ে আইএমইডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম থেকেই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের উদ্যোগ থাকায় বিদেশি পণ্য আমদানি করতে হয় এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। আবার অনেক সময় প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ঠিক থাকলেও প্রকল্পের অর্থ ছাড় না হাওয়ার কারণেও বাস্তবায়ন কম দেখানো হয়। সে রকম কয়েকটি প্রকল্পও আছে।’
অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আসলে অর্থনীতির সব জায়গাতেই লেগেছে। যুদ্ধের ধাক্কা সামাল দিতে সরকার ব্যয় সংকোচনের পথ বেছে নিয়েছে। অতিপ্রয়োজন ছাড়া অন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্য দাতাদের ঋণ-সহায়তা ছাড় কমে যাওয়ায় তাদের সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নও থেমে আছে।’