করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে দেশের রাজস্ব খাত ঘুরে দাঁড়ালেও গত ফ্রেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ফের ধাক্কা খেয়েছে এই খাত। সেই ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনিবআর।
এনবিআরের সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ । প্রবৃদ্ধির এই হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ শতাংশ কম।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে তাতে রাজস্ব আদায়ের এই চিত্রকে হতাশাজনক বলা যাবে না। অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক হলে সামনের দিনগুলোতে আদায় আরও বাড়বে।
রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি কমায় ঘাটতিও বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে এনবিআর।
সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, আলোচ্য অর্থবছরের পাঁচ মাসে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছর এনবিআরের মাধ্যমে সংগৃহীত লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আয় হয়েছে মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩১ শতাংশ। বাকি ৬৯ শতাংশ অবশিষ্ট সাত মাসে আদায় করতে হবে।
চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা, যা কোনোভাবেই অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারা।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করতে হলে প্রবৃদ্ধি বা রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে ৩১ শতাংশ হারে। অথচ, বাস্তবে আদায় বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, লক্ষ্যমাত্রা আর আদায়ের মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে। অবশ্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হবে আগামী এপ্রিলে। তার পরও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না বলে নিউজবাংলাকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা করা হতে পারে। আগামী এপ্রিলে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সম্পদ কমিটির বৈঠকে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হবে।
এনবিআরের হিসাবে অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। এ খাতে আদায় হয়েছে ৪৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি ৯৯৩ কোটি টাকা।
একই সময়ে আয়কর আদায় হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৫ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বরে আমদানি পর্যায়ে আদায় বেশি পিছিয়ে আছে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা ঘাটতিতে রয়েছে। আমদানি শুল্কে আদায় হয় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা ।