পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ থাকলে তা সমন্বয়ের সুযোগ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
শেয়ারের ক্রয়মূল্য ধরে এক্সপোজার লিমিট নির্ধারণের পর যেসব ব্যাংকের বেশি বিনিয়োগ আছে, সেটা সমন্বয় করতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন থেকে এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট ক্রয়মূল্যে নির্ধারণের পর পুঁজিবাজারে কয়েকটি ব্যাংকের বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমার ওপরে রয়েছে। ফলে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত সীমায় আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে সময় দেয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। বিদ্যমান নিয়মে কোনো ব্যাংক তার পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম হিসেবে রক্ষিত স্থিতি, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও পুঞ্জীভূত মুনাফার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
এ বিনিয়োগ হিসাবের ক্ষেত্রে নিজস্ব ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে বিনিয়োগের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য গঠিত প্রতিষ্ঠানের ঋণও বিবেচনায় নেয়া হয়।
চলতি বছরের ৪ আগস্ট শেয়ারের ক্রয়মূল্যকে বাজারমূল্য ধরে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করার নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে মহাধসের পর নানা সময় ব্যাংকে বিনিয়োগের সীমা বা এক্সপোজার লিমিট গণনাপদ্ধতি পাল্টানোর দাবি ছিল। কোনো শেয়ারের ক্রয়মূল্য বা বাজারমূল্যের মধ্যে যেটি বেশি, সেটি হিসাব করেই এই লিমিট গণনা করা হতো। এর ফলে শেয়ারের দর বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলো তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হতো। ফলে বাজারে শেয়ারের বিক্রয়চাপ তৈরি হতো।
এ কারণে শেয়ারের ক্রয়মূল্য ধরে এক্সপোজার লিমিট নির্ধারণের দাবি ছিল। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) এই সুপারিশ করে আসছিল।
আবদুর রউফ তালুকদার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনোভাব পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এর মধ্যে গত ১৮ জুলাই এক্সপোজার লিমিটের হিসাব পরিবর্তনে মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মন্ত্রণালয় থেকে ফিরতি চিঠিতে একটি কৌশলী মতামত দেয়া হয়।
এতে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকেই বাজারমূল্য হিসেবে বিবেচনার মত দেয়া হয়। এর ফলে এক্সপোজার লিমিটের সংজ্ঞায় বাজারমূল্য থাকলেও কার্যত ক্রয়মূল্যতেই সেটি নির্ধারণের সুযোগ তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সেই মত মেনেই সিদ্ধান্ত জানায়।
৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, ‘সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, কোনো ব্যাংক কোম্পানির একক ও সমন্বিত উভয় ভিত্তিতে শেয়ার ধারণের ঊর্ধ্বসীমা নিধারণে সংশ্লিষ্ট শেয়ার করপোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ড ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নিদর্শনপত্রে বাজারমূল্য হিসাবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্রয়মূল্যকেই বাজারমূল্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’
এ নির্দেশনার ফলে অনেক ব্যাংকের বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমার ওপরে রয়ে যায়। এ জন্য সেই অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ে এক বছর সময় দিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
সোমবার জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, ‘পুঁজিবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ৪ আগস্ট সার্কুলার জারির পর ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ২৬ক এর উপধারা (১) অনুযায়ী শেয়ারবাজারে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত যেসব ব্যাংকের সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ (ব্যাংক কর্তৃক অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে সামষ্টিক বা এককভাবে কোনো কোম্পানির শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে) রয়েছে, সেসব ব্যাংকের সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনার জন্য ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’