টানা তিন দিন সূচক বাড়ার পর পতন হলো টানা চতুর্থ দিন। তবে তিন দিনের পর লেনদেনে দেখা গেল ইউটার্ন, যদিও তা বাড়েনি সেভাবে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে তিন চতুর্থাংশ শেয়ারের কার্যত ক্রেতা না থাকার মধ্যে যেসব শেয়ারের লেনদেন হলো, তাতে প্রাধান্য দেখা গেছে দুর্বল কোম্পানির।
পুঁজিবাজার মন্দার মধ্যেও স্বল্প মূলধনি এসব কোম্পানির শেয়ারদর গত কয়েক দিন ধরেই বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৫ পয়সা আয় করে ১ টাকা লভ্যাংশ দেয়া স্বল্প মূলধনি মুন্নু সিরামিকসের দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি ৯.৬৯ শতাংশ। শেয়ারদর আগের দিন ছিল ১৩০ টাকা ৪০ পয়সা। বেড়ে হয়েছে ১৩৪ টাকা ৪০ পয়সা।
কোম্পানির করপোরেট ডিরেক্টর মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ৬ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়ার পর এই দর বৃদ্ধি পেল।
বাংলাদেশ অটোকারস দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৩৭ পয়সা আয়ের বিপরীতে লভ্যাংশ দিয়েছে ৪০ পয়সা। ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫৪ টাকা ১০ পয়সায়।
৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ দর বেড়ে ১৪ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে ইসলামী কর্মাশিয়াল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার।
দরবৃদ্ধির তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে নতুন তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি। এটি বাদ দিলে শীর্ষ দশের ৯টি কোম্পানিরই দরবৃদ্ধির পেছনে তেমন উপযুক্ত কারণ নেই।
শেয়ারপ্রতি ৪ টাকা ৫৪ পয়সা লোকসানে থাকার পরেও আজিজ পাইসের শেয়ারদর বেড়ে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। চতুর্থ স্থানে থাকা কোম্পানিটির শেয়ার ৯৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ১০৪ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
২০২০ সালের পরে আয় বা উৎপাদনের কোনো তথ্য নেই, কিন্তু ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ দর বেড়ে নর্দার্ন জুটের শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২৭৮ টাকা ৪০ পয়সায়।
নামমাত্র আয় করা মুন্নু অ্যাগ্রোর ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ও বিপুল লোকসান ও উৎপাদনে না থাকা জুট স্পিনার্সের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।
শেয়ারপ্রতি ৫ টাকার কাছাকাছি লোকসানে থাকা ইস্টার্ন ক্যাবলসের দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
নামমাত্র আয় ও লভ্যাংশ দেয়া স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
তালিকার দশম স্থানে থাকা অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। অথচ কোম্পানির শেয়ারদরের তুলনায় আয় বা ডিভিডেন্ড ইল্ড মাত্র ১ দশমিক ৫২ শতাংশ।
অবশ্য আগের দিনের চেয়ে শতকোটি টাকার বেশি বেড়েছে লেনদেন। সোমবার হাতবদল হয়েছে ৪৫৬ কোটি ৯৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১১৬ কোটি ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
রোববার হাতবদল হয়েছিল ৩৪০ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, যা তার আগের কর্মদিবসের চেয়ে ৮৪ কোটি ৭৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা তো কমই, একই সঙ্গে ৬ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
আগের দিনের মতোই দরবৃদ্ধির তুলনায় দরপতনের পাল্লা ভারি হওয়ায় সূচক কমেছে ৬ পয়েন্ট। এ নিয়ে চার কর্মদিবসে সূচক কমল ৩০ পয়েন্টের মতো।
গত ১০ ডিসেম্বরের পর টানা তিন কর্মদিবস সূচক বাড়লেও পরের টানা চার কর্মদিবস পতন হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে
সোমবার ৩০টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৫৪টির। এ ছাড়া আগের দর বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে ২৪১টির, যা আগের দিনে ছিল ২২১টি।
৬৬টি কোম্পানির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি। এর মধ্যে রেকর্ড ডেটের কারণে লেনদেন বন্ধ ছিল দুটির।
লেনদেনও ভারসাম্যপূর্ণ ছিল না। মাত্র ৫৪টি কোম্পানিতে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬৩ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকার। বিপরীতে ২৭১টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে কেবল ১৯৩ কোটি ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকার।
পুঁজিবাজারের লেনদেন প্রসঙ্গে ট্রেজার সিকিউরিটিজের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে এই মুহূর্তে ফান্ড আসছে না। টার্নওভার দেখে মনে হচ্ছে ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটগুলোর ইয়ার এন্ডিংকে ঘিরে যে প্রফিট টেকিং এবং সেটেলমেন্টের বিষয় থাকে সেগুলো তারা আগেই গুছিয়ে নিয়েছে। যে কারণে তাদের থেকে সম্ভবত ফান্ড আসছে না, আর প্রত্যাশা করা মনে হয় ঠিক হবে না।’
সূচকে প্রভাব যাদের
সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ৪২ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে বিকন ফার্মা। কোম্পানির দর কমেছে ১ দশমিক ০৫ শতাংশ।
কোহিনূর কেমিক্যালের দর ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ হ্রাসে সূচক কমেছে ১ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট।
বসুন্ধরা পেপারের কারণে সূচক হারিয়েছে ১ দশমিক ০৬ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে ২ দশমিক ২২ শতাংশ।
এ ছাড়াও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, জেনেক্স ইনফোসিস, বেক্সিমকো ফার্মা, ইউনিক হোটেল, সি-পার্ল ও এডিএন টেলিকমের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ১০ দশমিক ০৩ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে মুন্নু সিরামিকস। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
ইস্টার্ন ক্যাবলসের দর ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ১৮ পয়েন্ট।
ইসলামী ব্যাংক সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ০৯ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ।
এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে বার্জার পেইন্টস, বাটা সুজ, মুন্নু অ্যাগ্রো, লুবরেফ বাংলাদেশ, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স ও জেএমআই সিরিঞ্জেস।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৭ দশমিক ০১ পয়েন্ট।
দরপতনের শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ দর কমেছে অ্যাডভেন্ট ফার্মা। প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬ টাকা ৯০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ২৮ টাকা ২০ পয়সা।
এর পরেই ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ দর কমে কোহিনূর কেমিক্যালের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৭০ টাকায়। আগের দিনের দর ছিল ৪৯১ টাকা ৩০ পয়সা।
আমরা টেকনোলজিসের শেয়ারদর ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ কমে লেনদেন হয়েছে ৪০ টাকা ৭০ পয়সায়। আগের দিন দর ছিল ৪২ টাকা ২০ পয়সা।
তালিকায় পরের স্থানে ছিল ফাইন ফুডস, বিডি থাই ফুড, কে অ্যান্ড কিউ, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আমরা নেটওয়ার্কস, জেনেক্স ইনফোসিস ও পেপার প্রসেসিং।