ঋণখেলাপি থেকে মুক্তির জন্য আবারও বিশেষ সুবিধা দিল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের ঋণের কিস্তির অর্ধেক টাকা ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করলেই আর ঋণগ্রহীতা খেলাপি হবেন না।
রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ‘ঋণ শ্রেণিকরণ’ সংক্রান্ত এমন নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
তবে এ সুযোগ তারাই পাবেন যাদের অক্টোবর থেকে চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে কিস্তি দেয়ার সূচি আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ায় তার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এতে ঋণগ্রহীতাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে।
‘দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখা এবং ঋণগ্রহীতাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ সহজ করতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ৭৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ ডিসেম্বরের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হলে ওই ঋণগুলো খেলাপি করা যাবে না।’
এই সার্কুলারের ফলে সুবিধাপ্রাপ্ত মেয়াদি ঋণগুলোর ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তি বা কিস্তিগুলোর অপরিশোধিত অংশ বিদ্যমান ঋণের পূর্বনির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সম কিস্তিতে (মাসিক ও ত্রৈমাসিক) প্রদেয় হবে।
তবে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অবশিষ্ট মেয়াদকালের সঙ্গে বর্ধিত এক বছর সময়কে বিবেচনায় নিয়ে কিস্তি পুনর্নির্ধারণপূর্বক নতুন সূচি অনুযায়ী আদায় করা যাবে। এছাড়া আগের সার্কুলারের অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ব্যাংক খাতে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এর আগে ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠকে দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় আগামী বছরের জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের খেলাপি না করার দাবি জানায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কোভিড-পরবর্তী ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সার্বিক প্রভাবে রপ্তানির কাঁচামালের দাম বাড়ায় খরচও বেড়েছে। এ জন্য এফবিসিসিআই সদস্যরা জানিয়েছেন যে তাদের ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধাটি আগামী ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দেয়া হোক।
‘কারণ বর্তমানে জ্বালানি ও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেকে কারখানা চালাতে পারছেন না। এলসি না খোলার কারণে কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। এজন্য ব্যবসার ওপর একটা প্রভাব পড়ছে। আর ব্যবসা করতে না পারলে ঋণের কিস্তি দেয়া যাবে না। তাই ঋণ পরিশোধের সুবিধাটি আগামী বছরের জুন পর্যন্ত দেয়া হোক, যাতে কেউ খেলাপি না হয়।’