রাজউক নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারি করার পর গত প্রায় ৪ মাসে রিহ্যাবের কোনো সদস্য জমির মালিকের সঙ্গে কোনো চুক্তি বা সমঝোতায় যেতে পারেননি। নতুন করে কেউই কোনো প্ল্যান পাস করেননি। পুরনো প্রকল্পগুলো নিয়েই অনেকে কাজ করছেন।
এ কারণে আগামীতে ফ্ল্যাটের সংকট তৈরি হবে এবং দামও বাড়বে বলে জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে পাঁচ দিনব্যাপী ‘রিহ্যাব ফেয়ার ২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রিহ্যাবের প্রথম সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ ।
বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে আবাসন খাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন রিহ্যাব ফেয়ার। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিতব্য এ মেলা চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের ফেয়ারে মোট ১৮০টি স্টল থাকছে। এ বছর তিনটি ডায়মন্ড প্যাভিলিয়ন, সাতটি গোল্ড স্পন্সর, ২২টি কো-স্পন্সর, ১৬টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৩টি অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে রিহ্যাব।
লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাব ফেয়ার বিষয়ে জানান ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) কামাল মাহমুদ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) ও মেলা কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা।
কামাল মাহমুদ বলেন, ‘নতুন ড্যাপের কারণে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বসবাস করার জন্য মৌলিক চাহিদার অন্যতম আবাসনের স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
সবার জন্য মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে যাবে। সেজন্য রাজউকসহ ড্যাপের আহ্বায়ক এলজিআরডি মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমাদের উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরেছি। ড্যাপের ঘোষিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) এর পরিমাণ সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। আশা করি ফার এর পরিমাণ সংশোধন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফার হ্রাসের কারণে মূলত ঢাকায় বেশিরভাগ ভবন হবে ৪ থেকে ৫তলা। ফলে আগামীতে আবাসন সংকট প্রকট হবে। ফ্ল্যাটের দাম এবং বাড়িভাড়া বাড়বে। কারণ ফ্ল্যাটের চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।’
রিহ্যাবের সহ-সভাপতি ও মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে সমগ্র নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সঙ্গে ৪০ লাখ শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল দুই কোটি লোকের অন্নের ব্যবস্থা করছে।
এ খাতের আয় পুনরায় বিনিয়োগ হয়েছে অন্য উৎপাদনশীল খাতে। দেশের বেশ কয়েকটি বড় শিল্পগ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছে আবাসন শিল্প দিয়ে। ফলে আবাসন খাত অনেক নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের সৃষ্টি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবকাঠামোগত সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে বড় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে রিহ্যাব। আমাদের ধারাবাহিক কাজের কারণে অনেক নাগরিকের মৌলিক অধিকারের স্বপ্ন সফল হয়েছে। রিহ্যাব সদস্যদের কারণেই ঢাকার বাইরে প্রায় তিন লাখ পরিবার ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব নেতারা বলেন, ‘সব সুযোগ-সুবিধা ঢাকা কেন্দ্রিক হওয়ার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রধান নগরীর মধ্যে ঢাকায় জনসংখ্যা বাড়ছে সবচেয়ে বেশি হারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী ঢাকায় প্রতিদিন ১৭০০ নতুন নাগরিক যুক্ত হচ্ছে। বছর শেষে এই লোকের সংখ্যা সাত লাখের কাছাকাছি।’ রিহ্যাব নেতাদের দাবি, ‘সম্প্রতি প্রতিটি নির্মাণ সামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। নতুন ড্যাপ’র কারণে আমরা আবাসন সেক্টর নিয়ে বড় ধরনের সংকটে রয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বুধবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম রিহ্যাব মেলার উদ্বোধন করবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা ।
বুধবার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলার উদ্বোধন শেষে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা দুপুর ২টা থেকে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। বাকি দিনগুলোতে সকাল ১০ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। মেলায় দুই ধরনের টিকিট থাকছে।
একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি, অপরটি মাল্টিপল এন্ট্রি। সিঙ্গেল টিকিটের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রির টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলা চালাকালে পাঁচবার প্রবেশ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।