১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে রাজনীতি সংঘাতময় হয়ে উঠার আশঙ্কা ভুল প্রমাণের পর পুঁজিবাজারে যে ঝিলিক দেখা দিয়েছিল, সেটি আবার নিভে গেছে। তিন কর্মদিবসে সূচকের পাশাপাশি লেনদেন বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার পর আবার উল্টো স্রোতে কমল তিন কর্মদিবস।
যেখান থেকে লেনদেন বেড়েছিল, নেমে গেছে তার কাছাকাছি। সূচক যতটা বেড়েছিল, কমে গেছে অনেকটাই ততটা।
গণিতের ক্লাসে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে বানরের উঠার মতো চিত্র যেন পুঁজিবাজারে।
অর্থনৈতিক সংকটের শঙ্কার মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আভাসে নভেম্বর আর ডিসেম্বরে গতি হারিয়ে পুঁজিবাজারের লেনদেন নামে ২০ মাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে।
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের পর রাজনৈতিক উত্তেজনা কমে আসার পর ১১, ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর টানা তিন দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক বাড়ে ৪২ পয়েন্ট। বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়ে উঠতে থাকে, বাজার বুঝি সচল হলো আবার।
ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের সমাবেশের আগের কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে লেনদেন ছিল ২৯৫ কোটি ৭৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা। সমাবেশের পরের কর্মদিবস রোববার তা বেড়ে হয় ৪১৪ কোটি ৮৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
সোমবার সেখান থেকে আরও খানিকটা বেড়ে গত ১৪ নভেম্বরের পর প্রথমবারের মতো ছাড়ায় পাঁচ শ কোটির ঘর। হাতবদল হয় ৫৬৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার এখান থেকেও আরও কিছুটা বেড়ে হয় ৬১৬ কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
কিন্তু পুঁজিবাজারের বানর পরের তিন কর্মদিবসেই পিছলে নামল। বুধবার ১০ পয়েন্ট, বৃহস্পতিবার ৩ পয়েন্টের পর রোববার সূচক কমল আরও ১১ পয়েন্ট। তিন দিনে কমল ২৪ পয়েন্ট।
সূচক যতটুকু বেড়েছিল সেই পরিমাণ না কমলেও ২০ কর্মদিবস পরে ৬ শ কোটির ঘরে উঠে দাঁড়ানো লেনদেন ফের অর্ধেকে নেমে গেছে।
মঙ্গলবার ছয় শ কোটি টাকা ছাড়িযে যাওয়া লেনদেন বুধবার নামে ৪৩০ কোটি ২০ লাখ ৯৭ হাজার টাকায়। বৃহস্পতিবার আরও কমে হয় ৪২৫ কোটি ২৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা।
রোববার হাতবদল হয়েছে ৩৪০ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, যা আগের কর্মদিবসের চেয়ে ৮৪ কোটি ৭৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা তো কমই, একই সঙ্গে ৬ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
লেনদেনের সঙ্গে পতন হয়েছে শেয়ারদরেও। ৩০টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দরপতন হয়েছে ৫৫টির। অন্যদিকে ২২১টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর ফ্লোর প্রাইসে।
৮৫টি কোম্পানির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি। এর মধ্যে অবশ্য ৫টির লেনদেন বন্ধ ছিল লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে।
১১৪টি কোম্পানিতে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ থেকে ১ হাজারের মধ্যে, যা খুবই নগন্য। ১০ লাখের ওপর শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৭টি কোম্পানিতে।
৫৮টি কোম্পানিতে শেয়ার লেনদেন হয়েছে এক লাখের ওপরে ১০ লাখের নিচে।
অন্যদিকে টাকার অংকে ১ কোটি টাকার বেশি শেয়ারে লেনদেন হয়েছে ৫৫টি কোম্পানিতে। এই লেনদেনের পরিমাণ ২৫০ কোটি ৩০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
বাকি ২৫১টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ৯০ কোটি ১৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
আগের সপ্তাহের দুই দিন আর নতুন সপ্তাহের প্রথম দিন মিলিয়ে টানা তিন কর্মদিবস সূচক আর লেনদেনের পতন দেখল পুঁজিবাজার
ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী (সিইও) সুমন দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গণিতের বানর তো পিছলাতে পিছলাতে তাও বাঁশের আগায় পৌঁছেছিল, কিন্তু পুঁজিবাজারের বানর তো পৌঁছাতেই পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের আস্থা নেই, এটাই প্রধান কারণ। যতদিন অর্থনৈতিক মন্দার শেষ না হবে ততদিন এ অবস্থা থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা কম। এই সময়ে বাজারে পজিশন নেয়ার কথা থাকলেও কেউ কিনছে না। সবাই নিজের কাছে নগদ টাকা রাখতে চায়।’
সূচকে প্রভাব যাদের
সবচেয়ে বেশি ৪ দশমিক ১৩ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন। কোম্পানির দর কমেছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বিকন ফার্মার দর ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ হ্রাসে সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৮২ পয়েন্ট।
কোহিনূর কেমিক্যালের কারণে সূচক হারিয়েছে ২ দশমিক ৩১ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
এ ছাড়াও ওরিয়ন ফার্মা, মুন্নু সিরামিকস, জেনেক্স ইনফোসিস, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড, এডিএন টেলিকম, মুন্নু অ্যাগ্রো ও ইসলামী ব্যাংকের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ১৬ দশমিক ১৭ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৫১ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বাটা সুজের দর ২ দশমিক ২০ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট।
ইস্টার্ন ক্যাবলস সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৭ দশমিক ২১ শতাংশ।
এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে সি-পার্ল, বসুন্ধরা পেপার, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, অ্যারামিট ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ দর বেড়েছে প্রথম দিন লেনদেন শুরু হওয়া ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সায়।
এরপরেই ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ দর বেড়ে জুট স্পিনার্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৩৬ টাকা ৯০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ৩০৯ টাকা ৮০ পয়সা।
তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল অ্যাপেক্স ফুডস। ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ৩৩৪ টাকা ৪০ পয়সায়। আগের দিনে শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ৩০৯ টাকা ৭০ পয়সায়।
এ ছাড়া তালিকায় ছিল অ্যারামিট ইন্ডাস্ট্রিজ, ইস্টার্ন ক্যাবলস, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, অ্যাম্বি ফার্মা, রংপুর ফাউন্ড্রি, বিডি ল্যাম্পস ও সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ।
দরপতনের শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ দর কমেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের। প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৬৬ টাকা ৩০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ৭২০ টাকা ৩০ পয়সা।
এর পরেই ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ দর কমে মুন্নু অ্যাগ্রোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৭৭ টাকা ৮০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ৮৩৬ টাকা ৮০ পয়সা।
মুন্নু সিরামিকসের শেয়ারদর ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কমে লেনদেন হয়েছে ১৩০ টাকা ৪০ পয়সায়। আগের দিন দর ছিল ১৩৮ টাকা ৩০ পয়সা।
এ ছাড়া তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে কোহিনূর কেমিক্যাল, সোনালী আঁশ, ফাইন ফুডস, বিডি কম, বিডি ওয়েল্ডিং, জেনেক্স ইনফোসিস ও বিডি থাই ফুড।