পুঁজিবাজারে তিন কর্মদিবস লেনদেন ও সূচক বাড়ার পর কমল দুই কর্মদিবস।
অর্থনৈতিক চাপ ও রাজনৈতিক উত্তাপ- দুটো নিয়েই যখন স্বস্তির আভাস, তখন পুঁজিবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতের পর আবার উল্টো যাত্রায় গণিতে বানরের অঙ্ককেই আবার সামনে নিয়ে এসেছে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম তিন দিনে ৪৩ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেন তিন শ কোটির ঘর থেকে বেড়ে ছয় শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর চতুর্থ দিনেই পতন দেখা দেয়। বুধবার ১০ পয়েন্টের পরে বৃহস্পতিবার আরও ৩ পয়েন্ট কমল সূচক।
অর্থনৈতিক সংকটের শঙ্কার মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আভাসে নভেম্বর আর ডিসেম্বরে গতি হারিয়ে পুঁজিবাজারের লেনদেন নামে ২০ মাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে।
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের পর রাজনৈতিক উত্তেজনা কমে আসার পর গত তিন দিন পুঁজিবাজারেও বাড়ে গতি।
সমাবেশের আগের কর্মদিবসে লেনদেন ছিল ২৯৫ কোটি ৭৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা। সমাবেশের পরের কর্মদিবস রোববার তা বেড়ে হয় ৪১৪ কোটি ৮৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
সোমবার সেখান থেকে আরও খানিকটা বেড়ে গত ১৪ নভেম্বরের পর প্রথমবারের মতো ছাড়ায় পাঁচ শ কোটির ঘর। হাতবদল হয় ৫৬৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার এখান থেকেও আরও কিছুটা বেড়ে হয় ৬১৬ কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
অন্যদিকে সূচক রোববার বাড়ে ১১ পয়েন্ট, সোমবার ২৭ পয়েন্ট এবং মঙ্গলবার বাড়ে ৪ পয়েন্ট। গত দুই মাসে টানা তিন দিন সূচক ও লেনদেন বাড়ার বিষয়টি এর আগে দেখা যায়নি বললেই চলে।
তবে তিন দিনের পর সেটি আর চার হয়নি। চতুর্থ দিনে এসে আবার কমে যায় লেনদেন। হাতবদল হয় ৪৩০ কোটি ২০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। আগের দিনের চেয়ে কমে প্রায় এক তৃতীয়াংশ বা ১৮৬ কোটি ২০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার সেটি আরও কিছুটা কমে হাতবদল হয়েছে ৪২৫ কোটি ২৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
টানা দ্বিতীয় দিন কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। ৩৬টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে হারিয়েছে ৫৩টির। আগের দিন ২৭টির বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ৬৮টি। আগের দিনের দর বা ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে ২৩৪টির। গতকাল এ তালিকায় ছিল ২৪৬টি কোম্পানি।
রেকর্ড ডেটের কারণে লেনদেন বন্ধ ছিল ৪টি কোম্পানির। বাকি ৬৮টি কোনো ক্রেতা ছিল না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
পুঁজিবাজারের লেনদেন নিয়ে শার্প সিকিউরিটিজের পরিচালক সৈয়দ গোলাম ওয়াদুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিন উত্থানের পরে আবার দুই দিন পতন, তার মানে হলো এর চেয়ে কম দামে বেচার লোক নেই, আর বেশি দামে কেনার লোক নেই।’
তিনি বলেন, ‘বাজার একটু লেভেলে আসছে। এর চেয়ে বেশি পতন হচ্ছে না। উঠছে, আবার নামছে। বাজারের একটা টার্ম হলো মার্কেট কনসোলিডেট করা, অর্থাৎ পতনের পরে এক জায়গায় আবর্তিত হতে থাকে, সেখান থেকে কোনো এক দিকে ধাবিত হয়। সেটা ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে আবার নিম্নমুখীও হতে পারে।’
শীর্ষ ৫ খাত
কোনো খাতেই লেনদেন শত কোটির ঘর অতিক্রম করতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি ৭৩ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে, যা লেনদেনের ২১.৮৫ শতাংশ। আগের দিন এ খাতের লেনদেন ছিল ৭৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বা ২০.৭৪ শতাংশ। এদিন খাতের তিনটি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে আটটির কমেছে ও ২০টির অপরিবর্তিত দরে লেনদেন হয়েছে।
আগের দিনের মতোই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রযুক্তি খাত। খাতটিতে হাতবদল হয়েছে ৪৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা গতকাল ছিল ৫৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এদিন ৪টি দরবৃদ্ধির বিপরীতে পাঁচটির কমেছে ও একটির অপরিবর্তিত থেকে লেনদেন হয়েছে।
তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে প্রকৌশল খাত। লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের দিন এটি ছিল ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এদিন ৬টি কোম্পানির দরবৃদ্ধি ও ২টির দরপতনের বিপরীতে ২৭টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে।
লেনদেন আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে। লেনদেন হয়েছে ৩২ কোটি ৭০ লাখ টাকা, আগের দিন এটি ছিল ৩১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এদিন খাতের ৪টি করে কোম্পানির দরপতন ও দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৮টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে আগের দরে।
পঞ্চম স্থানে থাকা সিরামিকস খাতে হাতবদল হয়েছে ৩১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ খাতে কোনো দরপতন হয়নি। ১টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৪টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে।
সূচকে প্রভাব যাদের
সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন। কোম্পানির দর কমেছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বিকন ফার্মার দর ১ দশমিক ১৩ শতাংশ হ্রাসে সূচক কমেছে ১ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট।
কেডিএস অ্যাক্সেসরিজের কারণে সূচক হারিয়েছে ১ দশমিক ০১ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে ৭ দশমিক ১২ শতাংশ।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সি-পার্ল, সালভো কেমিক্যাল, লুবরেফ বাংলাদেশ, ইউনিক হোটেল, ওরিয়ন ফার্মা ও বিডি থাইফুডের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৯ দশমিক ৩০ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ১১ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে কোহিনূর কেমিক্যাল। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।
মুন্নু সিরামিকসের দর ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৭ পয়েন্ট।
অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ সূচকে যোগ করেছে শূন্য দশমিক ৭৭ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে বেক্সিমকো ফার্মা, বাটা সুজ, মনোস্পুল, ইসলামী ব্যাংক, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বসুন্ধরা পেপার ও পূবালী ব্যাংক।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭০ পয়েন্ট।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ দর বেড়ে মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩৮ টাকা ৩০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ১২৮ টাকা ৭০ পয়সা।
এরপরেই ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ দর বেড়ে মনোস্পুলের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৩২ টাকা ২০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ৩১২ টাকা ৭০ পয়সা।
তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল অ্যাপেক্স ফুডস। ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ৩০৯ টাকা ৭০ পয়সায়। আগের দিনে শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ২৯৩ টাকা।
এ ছাড়া তালিকায় ছিল হাক্কানি পাল্প, কে অ্যান্ড কিউ, নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, পেপার প্রসেসিং, কোহিনূর কেমিক্যাল ও বিডি ল্যাম্পস।
দরপতনের শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ দর কমেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের। প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭২০ টাকা ৩০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ৭৭৮ টাকা ৭০ পয়সা।
এর পরেই ৭ দশমিক ১১ শতাংশ দর কমে কেডিএস অ্যাক্সেসরিজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৭ টাকায়। আগের দিনের দর ছিল ৮২ টাকা ৯০ পয়সা।
সালভো কেমিক্যালের শেয়ারদর ৬ দশমিক ২২ শতাংশ কমে লেনদেন হয়েছে ৬১ টাকা ৮০ পয়সায়। আগের দিন দর ছিল ৬৫ টাকা ৯০ পয়সা।
এ ছাড়া তালিকায় পরের স্থানে জুট স্পিনার্স, লুবরেফ বাংলাদেশ, বিডি থাই ফুড, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স ও ই-জেনারেশন।