বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাল-গমের দাম সহনীয় রাখতে এগিয়ে এলো বাংলাদেশ ব্যাংক

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৯:০০

টিসিবির হিসাব বলছে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম এক মাসে বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ; এক বছরে বেড়েছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। এক মাসে সুর চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়েছে; এক বছরে বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

বাজারে চাল ও গমের দাম সহনীয় রাখতে এই দুটি খাদ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম এলসি মার্জিন ধার্য করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বুধবার এক সার্কুলার জারি করে এই নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো ‘চাল ও গম আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন সংরক্ষণ’ শীর্ষক সার্কুলারে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা (সাপ্লাই চেইন) বিঘ্নিত হওয়ায় খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যশস্যের মূল্যের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ভবিষ্যত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য দেশের প্রধান খাদ্যশস্য চাল ও গমের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখা আবশ্যক।

`এই প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাল ও গমের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষে চাল ও গম আমদানির ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে নগদ মার্জিনের হার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো।

ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো। এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান না করা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এলসি খোলার সময় নেয়া অগ্রিম অর্থ এলসির নগদ মার্জিন হার নামেও পরিচিত।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যে দেখা যায়, বুধবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি মেটা চাল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৬০ টাকা। আর সরু (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে ৭৫ টাকা)।

কিন্তু রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, টিসিবির এই দামের চেয়ে কেজিতে ৩/৪ টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির হিসাবই বলছে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম এক মাসে বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ; এক বছরে বেড়েছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। এক মাসে সুর চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়েছে; এক বছরে বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

টিসিবির হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খোলা আটার দাম বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ময়দার দামও প্রায় একই হারে বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানি পণ্যের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সম্প্রতিক সময়ে চাল ও গম আমদানির পরিমাণ বেড়েছে।

সরকারি-বেসরকারি দুই পর্যায়েই খাদ্যের প্রধান উপাদান চাল ও গম আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ বাড়ছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির জন্য ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। সেপ্টেম্বরে তা প্রায় ৭ গুণ বেড়ে ২৯ কোটি ৪৮ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

শতাংশ হিসাবে সেপ্টেম্বরে চাল আমদানির এলসি বেড়েছে ৫৮৫ শতাংশ। আর ঋণপত্র নিষ্পত্তি বেড়েছে ১০০ শতাংশের বেশি।

শুধু চাল নয়, খাদ্য তালিকার আরেক গুরুত্বপূর্ণ পণ্য গম আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ১০৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ ছিল ৩৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের। আগস্ট মাসে ছিল ১৭ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

এই দুই খাদ্য পণ্যে আমদানির এলসি বৃদ্ধির বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে খাদ্য আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। বেসরকারি খাতের মাধ্যমে চাল ও গম আমদানি করছে সরকার।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে চালের মজুত কম রয়েছে। ফলে সরকার চাল ও গমের মজুত আগের চেয়ে বাড়াতে চায়। এ জন্য সরকার চাল আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সরকার চাল কিনবে। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যেসব কর্মসূচি চলমান আছে, সেসব কর্মসূচির জন্য চাল আমদানি করতে হচ্ছে। মোট কথা, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সরকার এখন বেশি বেশি চাল আমদানি করছে।’

তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জন্য সংকট তৈরি হয়েছে। সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আগাম সতর্কতা হিসেবে এগুলো বেশি পরিমাণে আমদানি করা হচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির জন্য মোট ৬৩৬ কোটি ৫ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়। আগস্টে এই অঙ্ক ছিল ৪১৩ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। এ হিসাবে সেপ্টেম্বরে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৫৩ শতাংশ।

আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হিসাবে দেখা যায়, এই তিন মাসে খাদ্য পণ্য (চাল ও গম) আমদানির জন্য মোট ২৫৮ কোটি ৮০ লাখ (২.৫৯ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামগুলাতে সব মিলিয়ে ১৬ লাখ ৫২ হাজার ১১১ টন খাদ্য মজুত আছে। এরমধ্যে চাল ১৩ লাখ ২১ হাজার ৪১২ টন। গম ৩ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৮ টন এবং ধান ১ হাজার ৭৭১ টন।

চাল আমদানির শুল্ক সুবিধা আরও ৩ মাস

এদিকে মাত্র ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক দিয়ে চাল আমদানির সুযোগ আরও তিন মাস বাড়িয়েছে সরকার।

গত ৭ ডিসেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা এ শুল্ক সুবিধা নিয়ে চাল আমদানি করতে পারবে বলে জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই রেয়াতি শুল্কে চাল আমদানির আগে প্রত্যেক চালানের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় মনোনীত একজন যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা থেকে লিখিত অনুমোদন নিতে হবে।

দেশে চালের দাম বাড়তে থাকায় গত ২২ জুন চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার এবং ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে চাল আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়।

এরপর গত অগাস্টে আরেকটি প্রজ্ঞাপনে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার বহাল রেখে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।

এবার সেই সুযোগ ৩১ মার্চ পর্যন্ত আরও তিন মাস বাড়িয়েছে এনবিআর।

তবে এই সুযোগ শুধু আতপ ও সেদ্ধ চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাসমতি, সুগন্ধি বা অন্য কোনও চাল আমদানির ক্ষেত্রে এই শুল্কছাড় পাওয়া যাবে না।

এ বিভাগের আরো খবর