বিনিয়োগ করে মূলধন বাড়িয়ে নেয়ার মনোভাব গতিশীল পুঁজিবাজারের প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান।
রাজধানীর একটি হোটেলে মঙ্গলবার রাতে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিএমবিএ ও পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) যৌথভাবে এ মতবিনিময়ের আয়োজন করে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে উৎকণ্ঠায় গত মাস দুয়েক ধরেই পুঁজিবাজার টালমাটাল। ফ্লোর প্রাইসের কারণে শ তিনেক কোম্পানির শেয়ার একটি নির্ধারিত দরের নিচে নামতে না পারার মধ্যে লেনদেনও দৃশ্যত আটকে রয়েছে ৭০ থেকে ৮০টি কোম্পানিতে।
এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপের কারণে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন কমতে কমতে দুই শ কোটি টাকার ঘরে নেমে যায়।
শেষমেশ নানা শঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে সমাবেশটি হয়েছে শান্তিপূর্ণ। আর বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছে, তাও অনেকটাই নমনীয়। আর এরপর থেকেই অনেকটা হাফ ছেড়ে বাঁচেন বিনিয়োগকারীরা। বাজার ধীরে ধীরে সক্রিয় হতে শুরু করার ইঙ্গিত মিলছে।
এমন পরিস্থিতিতে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করে পুঁজিবাজারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত সংগঠন দুটি।
মতবিনিময়ে বিএমবিএ সভাপতি বলেন, ‘দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন মূলধন বাড়িয়ে নেয়ার জন্য। আগে কোন কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দেয়, সেটা দেখে বিনিয়োগ করতেন, কিন্তু এখন আর সেটা করেন না। এ ধরনের মনোভাবের জন্য বাজারকে গতিশীল করা সম্ভব হয় না।’
ভালো কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে অনীহার জন্য নীতিগত সমস্যা রয়েছে বলে জানান ছায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে পলিসিগত সমস্যা আছে। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের পার্থক্যের পরিমাণ অনেক কম। একটা কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে।
‘একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে অনেক ব্যয় বৃদ্ধি পায়। সেখানে এই সাড়ে ৭ শতাংশ করহার তাদের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। এই পার্থক্য বৃদ্ধি পেলে ভালো কোম্পানি বাজারে আসতে আগ্রহী হবে।’
বাজার গতিশীল রাখতে সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি বাজারের সমস্যা সমাধান নিয়ে। আপনারা লিখেছেন।
‘পরবর্তী সময়ে সরকার সমস্যার সমাধান করেছে। নীতিনির্ধারণে সাংবাদিকদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।’
দেশের পুঁজিবাজারের বিকাশে গুজব বড় বাধা বলে মনে করেন বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বাজারে অনেক অপপ্রচার চলে। যেমন: প্রধানমন্ত্রী মিতব্যয়ী হতে বলেছেন আর তাতে বিনিয়োগকারীরা ধরে নিয়েছেন যে, ২০২৩ সালের দুর্ভিক্ষ শুরু হচ্ছে।’
এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জে চাল, ডাল মজুত আছে। বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই।’
সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের সামগ্রিক উন্নয়নে অতীতে এবং বর্তমানেও একসঙ্গে কাজ করছে সিএমজেএফ ও বিএমবিএ। ভবিষ্যতেও আমরা উভয় সংগঠন বাজারের অগ্রগতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চাই।’
সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় মতবিনিময়ে বিএমবিএ, সিএমজেএফ ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সদস্যরা অংশ নেন।