বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত বিএসআরএম গ্রুপের দুই কোম্পানি তাদের প্রথম প্রান্তিকে বড় লোকসান দেখিয়েছে।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর লোকসানের কারণও ব্যাখ্যা করেছে তারা। জানিয়েছে, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে এই লোকসান হয়েছে।
পাশাপাশি জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এটিও একটি বড় কারণ।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এই আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করা হয়।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে প্রতি তিন মাস অন্তর আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে প্রকাশ করতে হয়।
কোন কোম্পানির কত লোকসান
বিএসআরএম গ্রুপের দুই কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসান দিয়েছে বিএসআরএম স্টিল রি রোলিং মিলস লিমিটেড।
কোম্পানিটি তিন মাসেই প্রতি শেয়ারে লোকসান দেখিয়েছে ৫ টাকা ৫১ পয়সা।
২৯৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ২৯ কোটি ৮৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬২৬টি। এই হিসাবে কোম্পানিটি তিন মাসেই লোকসান দিয়েছে ১৫২ কোটি ২৭ লাখ ৮১ হাজার ৫৯২ টাকা।
আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৪ টাকা ২৯ পয়সা। অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা ছিল ১২৮ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪৫ টাকা।
অন্যদিকে বিএসআরএম স্টিল শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে ৯৩ পয়সা।
৩৭৫ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কেম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ৩৭ কোটি ৫৯ লাখ ৫২ হাজার ৫০০টি। এই হিসাবে কোম্পানিটি লোকসান দিয়েছে ৩৪ কোটি ৯৬ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৫ টাকা।
আগের বছর এই সময় তাদের প্রতি শেয়ারে মুনাফা ছিল ২ টাকা ৯৮ পয়সা। অর্থাৎ ২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি ১১২ কোটি ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫০ টাকা মুনাফা করেছে।
আইন অনুযায়ী আয় যদি অস্বাভাবিক হারে বাড়ে বা কমে, তাহলে তার ব্যাখ্যা দিতে হয়।
এই আর্থিক হিসাব প্রকাশের সঙ্গে সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছে কোম্পানি দুটি।
সেখানে বলা হয়েছে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি করে আনা কাঁচামালের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাই উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী পণ্যের দাম বাড়েনি। ফলে লোকসান হয়েছে।
এ ছাড়া জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ না থাকায়ও উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
কতটা বেড়েছে ডলারের দর
করোনাকালে ২০২০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ডলারের দর ছিল স্থিতিশীল। তবে চলতি বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মুদ্রা টাকাও ব্যাপক হারে দর হারাতে থাকে।
২০২১ সালের আগস্ট মাসে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়।
তখন ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ও খোলাবাজারের দরের মধ্যে পার্থক্য ছিল কমই। বরং গোটা বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে দর ধরে রাখতে চেষ্টা করেছে।
তবে আন্তব্যাংকে ডলারের দর এখন এক শ টাকার কিছু বেশি। তবে এই দরে আমদানিকারকরা ডলার পান না।
চলতি বছরের অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের খোলা বাজারে ডলারের দাম ১২০ টাকা উঠে যায়। এখন কিছুটা কমে ১১২ টাকার মতো দাঁড়িয়েছে।
বিএসআরএম স্টিল রি-রোলিং মিলসের কোম্পানি সচিব শেখর রঞ্জন কর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর আমরা ডলারের দাম ৮৬ টাকা দিতাম। আর এই বছর ডলারের দাম ১১০ টাকা দিয়েছি। ডলারের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের কাঁচামাল ৯৫ শতাংশ আমদানি করা। তাই আমাদের খরচ বেড়ে গেছে।’
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে খাদ্য, জ্বালানি, শিল্পের উপকরণের দর বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দেয়।
কেবল বিএসআরএম গ্রুপ নয়, এর আগে বহু কোম্পানিই একই কারণে তাদের আয় কমে যাওয়া বা লোকসান দেয়ার কথা জানিয়েছে পুঁজিবাজারে।