কর অব্যাহতি সুবিধা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভ্যাট সদস্য (বাস্তবায়ন) ড. মইনুল খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও ১০ ডিসেম্বর ভ্যাট দিবস পালন করবে এনবিআর।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কর অব্যাহতি সুবিধা সব দেশেই আছে। শিল্পকে সুরক্ষা দিতে এটি এক ধরনের সহায়তা। তবে এই সুবিধা একবারে উঠিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে কমানো হবে।’
আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো। এ জন্য বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এসব কথা বলেন।
আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘সরকার কর অব্যাহতি দিয়েছে শিল্প খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য। এ সুবিধা এক সঙ্গে উঠিয়ে নিলে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে সবকিছু একসঙ্গে মানা যাবে না।
‘এটা করা হলে দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সেটা আইএমএফও জানে। কাজেই সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে কর অব্যাহতি সুবিধা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা, যাতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
চেয়ারম্যান মনে করেন, নীতি-সহায়তার ক্ষেত্রে এনবিআর এক জায়গায় স্থির থাকে না। প্রতি বছর বাজেটে কিছু পরিবর্তন করা হয়। আগামী অর্থবছরও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘সবাই কর অব্যাহতি বললেও আমরা এটাকে লজিস্টিক সাপোর্ট বলে থাকি। এ ধরনের অর্থনৈতিক পলিসি প্রতিটি দেশেই রয়েছে। আইএমএফ যেটা বলে আসছে, সেটা হলো ভর্তুকি কমানো। নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকি এটা এনবিআরের বিষয় নয়। ভর্তুকি আসলে এক ধরনের সাপোর্ট। যারা এসব পরামর্শ দেয় তাদের দেশে ভর্তুকি আরও বেশি। বিশেষ করে জাপান ও ইউরোপে ভর্তুকি ছাড়া কৃষি উৎপাদন হয় না। তারা হয়তো ভিন্ন ফর্মে ভর্তুকি দিয়ে থাকে।’
ভ্যাট অটোমেশন কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘অটোমেশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণ ভ্যাটদাতারা এখনও অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি। এর ব্যবহার আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে রাজস্ব আহরণের সম্পর্ক থাকে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আহরণে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। আমরা এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও রাজস্ব আহরণে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। আমরা রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার চেষ্টা করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এনবিআরের সংগৃহীত অর্থের ৩৭ শতাংশ আসে ভ্যাট খাত থেকে। নভেম্বর পর্যন্ত ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশের বেশি।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ১২তম ভ্যাট দিবস উপলক্ষে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সেমিনার ও সেরা ভ্যাটদাতাদের সম্মাননা দেয়া হবে। ওই অনুষ্ঠানে নয়টি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।