বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলার

  •    
  • ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ২২:৩৩

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানা গেছে ঠিক। কিন্তু যুদ্ধের ধাক্কায় ইউরোপ-আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ায় রপ্তানি আয় কমতে শুরু করেছে। যদিও নভেম্বর মাসে বেড়েছে। তবে সেটি আগামী দিনগুলোতে বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যালান্স অব পেমেন্টে ঘাটতি বাড়ছে। গত অর্থবছরের মতো এবারও বড় ঘাটতি নিয়েই অর্থবছর শেষ হবে।’

নানা পদক্ষেপে আমদানি ব্যয় কমার পরও বৈদেশিক বাণিজ্যে স্বস্তি আসছে না; উল্টো দিন যত যাচ্ছে, অর্থনীতিতে চাপ ততই বাড়ছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ (৯.৫৯ বিলিয়ন) ডলার। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই ৪ মাসে ২৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।

অন্যদিকে জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ১৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। গত বছরের এই চার মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ১৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।

এ হিসাবেই জুলাই-অক্টোবর সময়ে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

লেনদেন ভারসাম্যেও বড় ঘাটতি

রপ্তানির চেয়ে আমদানি খাতে ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) বড় ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-অক্টোবর সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার।

আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছর। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই কোনো অর্থবছরে ব্যালান্স অব পেমেন্টে এত ঘাটতি দেখা যায়নি।

তার আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে এই সূচকে ৪ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি ছিল।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানা গেছে ঠিক। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ইউরোপ-আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ায় রপ্তানি আয়ও কমতে শুরু করেছে। যদিও নভেম্বরে বেশ বেড়েছে। সেটি আগামী দিনগুলোতে বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।’

‘একই সঙ্গে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও বেশ ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যালান্স অব পেমেন্টে ঘাটতি বাড়ছে। মনে হচ্ছে, গত অর্থবছরের মতো এবারও বড় ঘাটতি নিয়েই অর্থবছর শেষ হবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের আগস্ট মাস থেকে আমদানি ব্যয় বাড়তে শুরু করে। পুরো অর্থবছরজুড়েই সেই উল্লম্ফন দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়েও উল্লম্ফন হয়েছিল, ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছিল ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। সে কারণেই ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি চূড়ায় উঠেছিল।

এবার আমদানি ব্যয়ে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) আমদানিতে প্রবৃদ্ধির চেয়ে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে। কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের চেয়ে অনেক কম, ৮ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৫ শতাংশের মতো।

রেমিট্যান্স বেড়েছে ২ শতাংশ

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম। তবে এবার এই সূচকে উল্লম্ফন নিয়ে অর্থবছর শুরু হয়েছিল। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।

কিন্তু সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই দুই মাসেই দেড় বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অথচ প্রথম দুই মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি করে পাঠিয়েছিলেন।

সব মিলিয়ে জুলাই-অক্টোবর ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে মাত্র ২ শতাংশ বেশি।

সেবা বাণিজ্যেও ঘাটতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। মূলত, বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি ৪.৮৭ বিলিয়ন ডলার

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ১ দশমিক ৩৪ ডলারের ঘাটতি ছিল। অর্থবছর শেষ হয়েছিল গত ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে।

তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ওভারঅল ব্যালান্সে ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

আর্থিক হিসাবেও ঘাটতি

আর্থিক হিসাবেও ঘাটতি মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। অক্টোবর শেষে অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে তা ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ১৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরের ১৪ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

করোনা মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ঋণ-সহায়তা পাওয়ায় গত দুই বছর আর্থিক হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত ছিল বলে জানান আহসান মনসুর।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

এ বিভাগের আরো খবর