বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এডিবির ঋণ নিয়েও আসছে সুখবর

  •    
  • ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ২২:০৩

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আইএমএফ ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর এখন অন্য সব দাতা সংস্থাও ঋণ দিতে চাইবে-এটিই স্বাভাবিক। এখন বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ অন্য সব দাতা সংস্থা ও দেশ বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়াবে। আমরা করোনার মতো যুদ্ধের ধাক্কাও দ্রুত সামলে উঠতে পারব।’

১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট অশোক লাভাসা বাংলাদেশে আসছেন। এক সপ্তাহের সফরে গতকাল মঙ্গলবার রাতে তিনি ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। আজ বুধবার দুপুরে তিনি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশে না থাকায় অশোক লাভাসা অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে এডিবি ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বর জানিয়েছেন। ঢাকায় অবস্থানকালে এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট এডিবির অর্থায়নে বাস্তবায়িত কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন করবেন বলে জানান তিনি।

আড়াই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এই চাপ সামাল দিতে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৪৫০ কোটি (৪.৫ বিলিয়ন) ডলার, বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার এবং এডিবির কাছে ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছিল। এ ছাড়া জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা এবং এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক- এআইআইবির কাছে ঋণ-সহায়তা চেয়েছিল বাংলাদেশ।

এর মধ্যে আইএমএফের বহুল প্রতীক্ষিত সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়ে সুসংবাদ পাওয়া গেছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এই ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ পাবে সরকার। বিশ্ব আর্থিক খাতের আরেক মোড়ল সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। এবার ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এডিবির ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য সংস্থটির ভাইস প্রেসিডেন্ট অশোক লাভাসা ঢাকায় এসেছেন।

এডিবি ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট ঢাকায় অবস্থানকালে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীসহ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার এডিবির কাছে বাজেট সহায়তা হিসেবে যে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছিল, সে বিষয়ে আলোচনা হবে। সফর শেষে ম্যানিলায় ফিরে গিয়ে এডিবি সদর দপ্তরে রিপোর্ট করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। তারপর সংস্থার বোর্ডসভায় এই ঋণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এডিবি সব সময় পাশে ছিল। সরকার যে ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে, তা চলমান প্রকল্প সহায়তার বাইরে অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে চেয়েছে। আশা করছি, এই ঋণের ব্যাপারেও সুসংবাদ পাওয়া যাবে। আর খুব শিগগিরই সেই সুসংবাদ পাওয়া যাবে।’

গোবিন্দ বর বলেন, ‘অশোক লাভাসা এডিবির প্রাইভেট সেক্টর অপারেশনস এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট। সে কারণে ঢাকা সফরকালে তিনি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা-প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। ১২ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা ছাড়বেন।’

আড়াই বছরের করোনাভাইরাস মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। ওলোটপালট হয়ে গেছে সব হিসাবনিকাশ। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আমদানি বাড়ায় এবং রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমায় রিজার্ভ কমছেই; বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) ঘাটতি বাড়ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি বেশ কমেছে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। কিন্তু এর পরও ব্যালান্স অফ পেমেন্টে বড় ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি (৪.৫ বিলিয়ন) ডলার।

এই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতেই সরকার দাতাসংস্থাগুলোর কাছে ঋণ চেয়েছিল।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের একজন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইএমএফ ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর এখন অন্য সব দাতা সংস্থাও বাংলাদেশকে ঋণ দিতে চাইবে-এটিই স্বাভাবিক। কেননা, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো উন্নয়ন সংস্থা বা দাতা দেশ আইএমএফের মূল্যায়নকে একটি মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে। আইএমএফ যেহেতু আমাদের ঋণ দিচ্ছে, এখন বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ অন্য সব দাতা সংস্থা ও দেশ বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়াবে। আমরা এখন করোনার মতো যুদ্ধের ধাক্কাও দ্রুত সামলে উঠতে পারব।’

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইএমএফ ঋণ দেয়ার ঘোষণার পর থেকেই সরকার স্বস্তির মধ্যে রয়েছে। সংকট মোকাবিলা করার সাহসও পাচ্ছে। এরই মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক আমদানি ব্যয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। নভেম্বরে রপ্তানি আয়ে রেকর্ড হয়েছে; ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছে। রেমিট্যান্সও কিছুটা বেড়েছে। এ অবস্থায় আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি ফেব্রুয়ারিতে চলে এলে, এরমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণও যদি পাওয়া যায়, সরকারের সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে। ২০২৩ সালকে নিয়ে যতটা ভয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা আর মনে হয় থাকবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর