মাধ্যমিক পর্যায় থেকে পাঠ্যবইয়ে বিনিয়োগ শিক্ষা হিসেবে পুঁজিবাজার, ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা করেছে সংস্থাটি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
সভায় সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ঝুঁকি-সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে সংযোজন করার জন্য প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
বিনিয়োগ শিক্ষার উপযোগিতা এবং প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সর্বজনীন বিনিয়োগ শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্কুল পর্যায়ে নতুন কারিকুলামের কাজ চলমান, যেখানে বিদ্যমান গ্রুপ সিস্টেম আর থাকছে না। ১৬ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা থাকা ধরকার। যেহেতু বিনিয়োগ একটি অবিচ্ছেদ্য জীবন দক্ষতা, তাই নতুন কারিকুলামে বিনিয়োগ, সঞ্চয় ইত্যাদিসহ অর্থায়ন-সম্পর্কিত মৌলিক ধারণা সংযুক্ত করা হবে।’
পাঠ্যক্রমে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘কলেজ পর্যায়ে বিনিয়োগের মৌলিক ধারণা প্রদান করা গেলে পরবর্তী সময়ে তারা বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দক্ষতার সঙ্গে নিতে পারবে।’
বিএসসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডিজিটাল বুথ সারা দেশে বিস্তৃত করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও মানুষ বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন।’
বিনিয়োগের ঝুঁকি নিরসন, উদ্যোক্তা সৃষ্টি, আত্মকর্মসংস্থান ও অন্যান্য প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা-সম্পর্কিত মেলায় বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়াদি অন্তর্ভুক্তের সুপারিশ করেন তিনি।
বিএসইসি মনে করে, দেশের পুঁজিবাজারে অধিকাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। তারা যথাযথ বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত নন। তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক বিবরণী এবং অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্যাদি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন না। তাই তারা গুজব, ধারণা ও আবেগের ভিত্তিতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে বাজার কারসাজির সুযোগ বেড়ে যায়।
তাই বিনিয়োগ শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হলে, পুঁজিবাজারে তথ্য অসামঞ্জস্য কমবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হবেন। এতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল ও দক্ষ হবে। বাজারে কারসাজি কমবে।
বিএসইসি ২০১২ সালে একটি ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, যেখানে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়। এই উদ্যোগকে ফলপ্রসূ করার জন্য স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করার কথা বলা হয়েছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির মতে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়টি স্কুল কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করাই শ্রেয়। স্কুল পর্যায়ের বিনিয়োগ শিক্ষা, একজন নাগরিককে পরিণত বয়সে আয়, ব্যয়, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
তাই দেশে জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বিশেষ ধরনের ‘ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম’ গড়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক পর্যায় থেকে সচেতনতা বাড়াতে মাধ্যমিক থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা তুলে ধরা হবে। পরবর্তী সময়ে কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়টি পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সর্বোপরি বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে মাস্টার্স বিভাগ চালু করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
সভায় আরও অংশ নেন বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম, মিজানুর রহমান ও রুমানা ইসলাম। এ ছাড়াও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, রিপন কুমার দেবনাথ ও পরিচালক মনসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের (বিএএসএম) মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মাহমুদা আক্তার, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন নীলাঞ্জন কুমার সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক সাদেকুল ইসলাম, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রঞ্জিত পোদ্দার, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠাপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) গবেষণা কর্মকর্তা মুরশীদ আকতার, এসিসিএ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রমা তাপসী খান ও বিজনেস রিলেশন এক্সিকিউটিভ মাইশা নানজীবা মুসা।