বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনাকালের করুণ দশায় পুঁজিবাজার

  •    
  • ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৪:৫৭

৮ মার্চ দেশেও যখন ভাইরাসটির সংক্রমণ হয়, তখন এই আতঙ্ক একেবারে জেঁকে বসে। ১৯ মার্চ কেবল ৪৯ কোটি ১২ লাখ ১৬ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদল হয়। দুই মাসের ছুটি শেষে মের শেষ দিন লেনদেন চালু হয়। এরপর কয়েক দিন হাতবদল হয় এক শ কোটির নিচে। পরে তা বাড়তে থাকে। সেই বছরের জুলাইয়ে যে চিত্র ছিল, আড়াই বছর পর এসে দেশের পুঁজিবাজারে এখন সেই একই চিত্র।

প্রায় আড়াই বছর আগে করোনা মহামারির সময় সাধারণ ছুটির বিধিনিষেধ শেষে পুঁজিবাজার চালু হলে লেনদেনে যে খরা দেখা গিয়েছিল, সেটি ফিরে এসেছে।

গত ৮ কর্মদিবসের মধ্যে ৫ কর্মদিবস তিন শ কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হওয়ার পর এবার তা নেমে এসেছে দুই শ কোটির ঘরে।

এমন চিত্র সবশেষ দেখা গিয়েছিল ২০২০ সালের জুলাই। সে সময় ১৪ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৮ কর্মদিবস দুই শ কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছিল।

সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২৭১ কোটি ৯৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা। আগের দিনও লেনদেন ছিল ৩৪৪ কোটি ৮৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

লকডাউনে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে, এমন আতঙ্কে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিলের পর এটিই সর্বনিম্ন লেনদেন। সেদিন হাতবদল হয় ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমলেও সূচক ১৬ পয়েন্ট। ৫০টি কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ার বিপরীতে এদিন দর হারায় ২৫টি কোম্পানি। ফ্লোর প্রাইসে আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে ২২৮টি কোম্পানি। ৮৭টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।

গত ৩১ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর পুঁজিবাজার মাস দুয়েক চাঙা থাকলেও গত দুই মাস ধরে তা ক্রমেই নিম্নমুখি। ফ্লোর প্রাইস ছাড়িয়ে যেমন কোম্পানির শেয়ারের দর তরতর করে বাড়ছিল, এর মধ্যে সিংহভাগই ফ্লোর প্রাইস বা আশেপাশের দরে নেমেছে।

শক্তিশালী বহু কোম্পানি, যেগুলো বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদেরকে দারুণ মুনাফা দিয়ে আসছে, সেগুলোর শেয়ারেরও ক্রেতা নেই। এখন আলোচনা হচ্ছে, ফ্লোর প্রাইসের কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেছেন, তারা বাধ্য হয়েই ফ্লোর প্রাইস দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে এটি তুলে দেয়া হলে শেয়ারের দর পড়ে গিয়ে বিনিয়োগকারীরা বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। তার মতে, দেশের সামগ্রিক আর্থিক যে পরিস্থিতি, তার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

পুঁজিবাজারের লেনদেন প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ভলিউম কমার কারণই হলো ফ্লোর প্রাইস। আগেও বলেছি, এটা শাখের করাত। তুলে দিলেও সমস্যা, আবার থাকার কারণে বায়ার নাই।’

তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকটের কারণেও বিনিয়োগ কমেছে। আর্থিক খাতে বিভিন্ন অনিয়মের খবর পত্র-পত্রিকায় আসছে। যেগুলো দেখে মানুষ বিনিয়োগের সাহস করবে কীভাবে?’

কেমন ছিল করোনাকালের চিত্র

সারা বিশ্বে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকেই আতঙ্কে পুঁজিবাজারে লেনদেন নেমে যায় তলানিতে। জানুয়ারিতেও দুই শ কোটির ঘরে নেমে আসে। তবে পরে বাড়তে বাড়তে হাজার কোটির ঘরও ছাড়িয়ে যায়।

সে সময় বিশ্বজুড়ে লকডাউনের কারণে মানুষ ছিল আতঙ্কে। ৮ মার্চ দেশেও যখন ভাইরাসটির সংক্রমণ হয়, তখন এই আতঙ্ক একেবারে জেঁকে বসে। ১৯ মার্চ কেবল ৪৯ কোটি ১২ লাখ ১৬ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদল হয়। ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটিতে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগের দিন হাতবদল হয় ৩৪৮ কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

দুই মাসেরও বেশি সময় লেনদেন স্থগিত থাকার পর ৩১ মে চালু হয় পুঁজিবাজার। তবে আতঙ্কের কারণে সে সময়ও বিনিয়োগকারীরা যায়নি ব্রোকারেজ হাউজে। লেনদেন হতে থাকে এক শ কোটি টাকারও নিচে। জুলাইয়ের শুরু থেকে লেনদেন ফের কিছুটা বাড়তে থাকে। সেই বছরের জুলাইয়ে যে চিত্র ছিল, আড়াই বছর পর এসে দেশের পুঁজিবাজারে এখন সেই একই চিত্র।

তখন একটু একটু করে লেনদেন বাড়তে থাকার পর বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হচ্ছিল। এক পর্যায়ে বাজারে দেখা দেয় চাঙাভাব। লেনদেন প্রথমে হাজার কোটি, এরপর দুই হাজার কোটি, এবং এক পর্যায়ে ছাড়িয়ে যায় তিন হাজার কোটির ঘর।

শেয়ারদর বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যসূচক। এক পর্যায়ে ২০১০ সালের মহাধসের পর সর্বোচ্চ সূচকে পৌঁছার পর এক যুগের হতাশা কাটার আলোচনা বড় হয়ে উঠে।

দবে এখন পুঁজিবাজারে ঠিক উল্টো চিত্র। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে উদ্বেগ, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উৎকণ্ঠা তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। পুঁজিবাজারে আতঙ্ক আরও বেশি। এই বাজার ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারী নির্ভর, যারা নানা সময় নেতিবাচক খবরে আতঙ্কিত হয়ে কম দামে শেয়ার বেচে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আবার ইতিবাচক হতে পারে, এমন খবরেও বেশিদামে শেয়ার কিনে পড়ে আরেক ক্ষতিতে।

সূচকে প্রভাব যাদের

সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বিকন ফার্মা। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ২ দশমিক ৮১ শতাংশ।

অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ২২ পয়েন্ট।

ওরিয়ন ইনফিউশন সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে বসুন্ধরা পেপার, সি-পার্ল, ইস্টার্ন হাউজিং, ওরিয়ন ফার্মা, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, জেনেক্স ইনফোসিস ও পূবালী ব্যাংক।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১২ পয়েন্ট।

বিপরীতে সবচেয়ে বেশি শূন্য দশমিক ৭৫ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে কনফিডেন্স সিমেন্ট। কোম্পানির দর কমেছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।

পদ্মা অয়েলের দর শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ হ্রাসে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৪০ পয়েন্ট।

সোনালী পেপারের কারণে সূচক হারিয়েছে শূন্য দশমিক ৩৬ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ।

এ ছাড়াও কোহিনূর কেমিক্যালস, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইউনিক হোটেল, আমরা টেকনোলজিস, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ও ই-জেনারেশনের দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট।

দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০

সবচেয়ে বেশি ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ দর বেড়ে মুন্নু অ্যাগ্রোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭০৮ টাকা ১০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ৬৫৮ টাকা ৭০ পয়সা।

এরপরেই ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়ে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬০৯ টাকা ৫০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ৫৬৭ টাকা।

তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল মুন্নু সিরামিকস। ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ১১৪ টাকা ১০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ১০৭ টাকা।

এ ছাড়া তালিকায় ছিল অ্যাম্বি ফার্মা, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন হাউজিং, বসুন্ধরা পেপার, অলিম্পিক ইন্ডস্ট্রিজ, পেপার প্রসেসিং ও মনোস্পুল।

দরপতনের শীর্ষ ১০

সবচেয়ে বেশি ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ দর কমেছে কনফিডেন্স সিমেন্টের। প্রতিটি শেয়ার লেনদেন ৮৯ টাকায়, যা আগের দিন ছিল ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা।

এর পরেই ২ শতাংশ দর কমে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১২ টাকা ৭০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ১১৫ টাকা।

১ দশমিক ৮৩ শতাংশ দর কমে পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬ টাকা ৭০ পয়সায়। যা আগের দিন ছিল ২৭ টাকা ২০ পয়সা।

এ ছাড়া তালিকায় পরের স্থানে ছিল আমরা টেকনোজিস, কোহিনূর কেমিক্যাল, পদ্মা অয়েল, অগ্নি সিস্টেমস, সোনালী পেপার, বিডি কম ও বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স।

এ বিভাগের আরো খবর