বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সংকটকালেও ফল আমদানি বেড়েছে সাড়ে ৩ গুণ

  •    
  • ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৩:২৯

সব ধরনের ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয় ব্যাংকের ঋণসুবিধা। কিন্তু সুস্বাদু ও পুষ্টিকর আপেল, আঙুর, কমলা, মাল্টাসহ কোনো ফলের আমদানিই কমেনি। বরং প্রতি মাসে আগের মাসের তুলনায় তা বেড়ে চলেছে।

দেশে ডলার সংকটের মধ্যে মে মাসে ফল আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে সরকার। জুলাইতে বন্ধ করে দেয়া হয় পণ্য আমদানিতে ব্যাংকের ঋণসুবিধা। মনে করা হচ্ছিল, এসবের প্রভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় ফলের আমদানি কমে আসবে। কিন্তু ঘটেছে তার উল্টোটা। কমেনি, বরং আরও বেড়েছে ফলের আমদানি।

সুস্বাদু ও পুষ্টিকর আপেল, আঙুর, কমলা, মাল্টাসহ কোনো ফলের আমদানি কমেনি। প্রতি মাসে আগের মাসের তুলনায় তা বেড়ে চলেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে প্রথম মাস জুলাইয়ের চেয়ে বিভিন্ন ধরনের ফল আমদানি ৬১ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন বেশি হয়েছে। শতকরা হিসাবে যা ২২০ শতাংশ বেশি।

জুলাইয়ে ফল আমদানি হয়েছিল ২৭ হাজার ৯৪৫ টন। নভেম্বরে তা প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেড়ে ৮৯ হাজার ৪৮৪ টনে উঠেছে।

নভেম্বর মাস শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে তথ্য সংগ্রহ করায় পুরো মাসের আমদানির হিসাব পাওয়া যায়নি। পুরো মাসের হিসাব করলে ব্যবধানটা আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘ফ্রেশ ফ্রুটস’ ও ‘ড্রাই ফ্রুটস’- এই দুই ক্যাটাগরিতে দেশে সব ধরনের ফল আমদানি করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘ফ্রেশ ফ্রুটস’ ও ‘ড্রাই ফ্রুটস’- এই দুই ক্যাটাগরিতে দেশে সব ধরনের ফল আমদানি করা হয়। ড্রাই ফ্রুটস ক্যাটাগরিতে খেজুর, কিশমিশ ও বাদাম আমদানি করা হয়। ফ্রেশ ফ্রুটস ক্যাটাগরিতে রয়েছে আপেল, কমলা, নাশপাতি, আঙুর, মাল্টা, মান্দারিন, আনার, ড্রাই চেরি, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ ৫২ রকমের ফল।

এসব ফল আমদানি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, নিউজিল্যান্ড, মিসর, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ভারত, থাইল্যান্ড, তিউনিশিয়া, পোল্যান্ড ও ব্রাজিল থেকে।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক রাকিব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের চাহিদার ৪০ শতাংশের মতো ফল দেশেই উৎপাদন হয়, বাকিটা আমদানি করতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমদানি করা এসব ফলের উৎপাদন দেশে নেই বললেই চলে। এ কারণে এসব ফলের প্রায় সবটাই আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হয়। সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়ে থাকে আপেল, কমলা, আঙুর ও মাল্টা।’

চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর দেশে বিপুল পরিমাণ ফল আমদানি করতে হয়। এর জন্য ব্যয় হয় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। এই চাপ সামাল দিতে ব্যয় সংকোচনের জন্য নানা পদক্ষেপ নেয় সরকার। সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আমদানি ব্যয় কমাতে নেয়া হয় বিভিন্ন পদক্ষেপ। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ যাতে আরও কমে না যায়, সে জন্য নেয়া হয় এ সব পদক্ষেপ।

জুলাইতে বন্ধ করে দেয়া হয় পণ্য আমদানিতে ব্যাংকের ঋণ সুবিধা। তবে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর আপেল, আঙুর, কমলা ও মাল্টাসহ কোনো ফলের আমদানি কমেনি। ছবি: নিউজবাংলা

২৪ মে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসজাত পণ্যের পাশাপাশি সব ধরনের ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

তার আগে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কহার ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। এরপর সেটি দাঁড়ায় ২৩ শতাংশে। প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকেই তা কার্যকর করা হয়।

ফল আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ২৫ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ এবং অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট ৪ শতাংশ নির্ধারিত ছিল।

ওই ঘোষণার পর থেকে এর সঙ্গে বাড়তি ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পরিশোধ করতে হয় আমদানিকারকদের।

এত সব বিধিনিষেধের পরেও ধারাবাহিকভাবে ফল আমদানি বেড়েছে। জুলাই মাসে ফল আমদানি হয় ২৭ হাজার ৯৪৫ মেট্রিক টন। আগস্টে ৭ হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন বেড়ে ফল আমদানি হয় ৩৫ হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন।

আগস্টের তুলনায় ১০ হাজার ৩০৬ মেট্রিক টন আমদানি বৃদ্ধি পায় সেপ্টেম্বরে। আমদানি হয় ৪৫ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন ফল।

অক্টোবরে আমদানি দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৬৮১ মেট্রিক টনে, যা আগের মাসের তুলনায় ৭ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন বেশি।

নভেম্বরে আমদানি হয়েছে ৮৯ হাজার ৪৮৪ মেট্রিক টন, যা আগের মাসের তুলনায় ৩৫ হাজার ৮০৩ মেট্রিক টন, যা প্রায় ৬৭ শতাংশ বেশি।

এই তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের চেয়ে সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসে ২২০ শতাংশের বেশি ফল আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ জুলাই মাসের চেয়ে নভেম্বরে ফল আমদানি বেড়েছে ৬১ হাজার ৫৩৪ টন।

তবে গত বছরের তুলনায় এই সময়ে ফল আমদানি কমেছে ১৭ শতাংশের বেশি। গত বছর জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ফল আমদানি হয় ৩ লাখ ৪ হাজার ৯১৭ দশমিক ২২ মেট্রিক টন।

ফ্রেশ ফ্রুটস ক্যাটাগরিতে আপেল, কমলা, নাশপাতি, আঙুর, মাল্টা, আনার, ড্রাই চেরি, ড্রাগন ও স্ট্রবেরিসহ ৫২ রকমের ফল আমদানি করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা

বিপরীতে চলতি বছর আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৬ দশমিক ৯১ মেট্রিক টন, যা আগের বছরের তুলনায় ৫২ হাজার ৫৩০ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন বা ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হয়েছে। আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে, ফলেও দাম বেশি পড়ছে।

বেশি দামে বিক্রি করতে গেলে মানুষ কিনছে না। তার ওপর ডলার সংকট থাকায় আমদানির এলসি খুলতেও সমস্যা হচ্ছে। তাহলে আমদানি কমবে না কেন? তাই ফল আমদানি কমেছে।’

আমদানির পরিসংখ্যান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের সংগঠনের সদস্য রয়েছে। যে যার প্রয়োজন মতো আমদানি করে। কত আমদানি হচ্ছে সেটার হিসাব আমাদের কাছে নেই, রাখাও সম্ভব নয়। সদস্যরা বিভিন্নভাবে আমদানি ও বিক্রি করে থাকে।’

ফল আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা কড়াকড়ি ছিল না বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ফলের ওপর বা কমার্শিয়াল এলসির ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল না বা নেই। এক্সটার্নাল সাইডে অসুবিধার কারণে ডলারের যে ডিমান্ড, সাপ্লাইয়ে সমস্যার কারণেই একটু সমস্যা হতে পারে। তবে কেউ যদি ওপেন করে বিধিনিষেধ নেই, কারণ এটা হলো খাদ্যদ্রব্য।’

তিনি বলেন, ‘আমদানি যে হচ্ছে, তা আশপাশের ছোটোখাটো দোকানে ফলের সমারোহ দেখলেই বোঝা যায়। আজকেও কমলা কিনলাম ২০০ টাকা কেজি। ভালো এবং অনেক বড় বড় কমলা। তার মানে যতটা চিন্তা করা হচ্ছে, অবস্থা ততটা খারাপ নয়। আমদানিতে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি।’

অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ফলের ক্রেতা কমেনি। মতিঝিলের খুচরা ফল বিক্রেতা সালমান ইসলাম বলেন, ‘ফলের সরবরাহও আছে, ক্রেতাও আছে। দাম বেশি। বিক্রি একটু কম। তাই বলে ক্রেতা নাই, এমন না।’

তিনি বলেন, ‘আগের বছর বাজারে যে পরিমাণ আমদানি হতো, তার চেয়ে কম হচ্ছে। এইটা পাইকারি বাজারে গেলেই বোঝা যায়। আগের যেখানে ১০ ট্রাক মাল নামতে দেখা যেত, সেখানে ৭ ট্রাক দেখা যায়।’

আমদানিকারক সংগঠনের নেতা রাকিব হোসেন বলেন, ‘ফল খাওয়া বিলাসিতা নয়। এটা মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজন। এ জন্য মানুষ এটাকে আর বাড়তি খরচ মনে করে না। এ জন্য ফলের চাহিদা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘শুল্কারোপ ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে খরচ বেড়েছে ফল আমদানিতে, যার কারণে প্রতিটি ফলের দামই বেড়েছে। আগের বছরের তুলনায় বিক্রি কিছুটা কম, আমদানিও কম। তবে ক্রেতা এখনও আছে।’

আমদানি খরচ বৃদ্ধির প্রভাবে ফলের দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে ফল কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।

খুচরা বিক্রেতা ইলিয়াস হোসেন কিরণ বলেন, ‘ফুজি আপেল আগে বিক্রি করতাম ১৮০ টাকা কেজি, সেটা এখন ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। মাল্টা ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, সেটা এখন ২৫০০ টাকা। কমলার কেজি ছিল ১২০ টাকা, বর্তমানে সেটা ২০০ টাকা কেজি। এখন মৌসুম শুরু হয়েছে। ভারতীয় কমলা আসতে শুরু করেছে। দাম হয়তো একটু কমতে পারে।’

ক্রেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘ফলের দাম তো অনেক বেশি। আগের তুলনায় কম কিনি। পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য না কিনে উপায় নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর