বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খাবারের দাম শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি

  •    
  • ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ২৩:৪৭

নভেম্বরে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। একই মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ; খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতির পারদ নামছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তবে অবাক করার মতো তথ্য দিয়েছে সরকারি এ সংস্থাটি। বিবিএসের হিসাব বলছে, শহরের চেয়ে গ্রামে খাবারের দাম বেশি।

গতকাল সোমবার পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত নভেম্বরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। নভেম্বরে শহর এলাকায় পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

এর অর্থ হলো গত বছরের নভেম্বরে গ্রামের মানুষ ১০০ টাকায় যে খাবার পেয়েছিল, এ বছরের নভেম্বরে তা কিনতে ১০৮ টাকা ২৩ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। আর গত বছরের নভেম্বরে শহরের মানুষ ১০০ টাকায় যে খাবার কিনেছিল, এ বছরের নভেম্বরে তা কিনতে ১০৭ টাকা ৯৫ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। বিবিএসের এই হিসাবই বলছে, শহরের চেয়ে গ্রামে খাবারের দাম বেশি।

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলানগরে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মূল্যস্ফীতির এই তথ্য প্রকাশ করেন। তথ্যে দেখা যায়, নভেম্বরে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অক্টোবরে এই হার ছিল সামান্য কম, ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। নভেম্বরে গ্রামে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর (ডাবল ডিজিট) ছাড়িয়ে ১০ দশমিক ৩১ শতাংশে উঠেছে। অক্টোবরে হয়েছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

নভেম্বরে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। অক্টোবরে এই হার ছিল একটু বেশি, ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। নভেম্বরে শহরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অক্টোবরে হয়েছিল ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে

বিবিএসের হিসাবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অক্টোবরে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। তার আগের মাস আগস্টে উঠেছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে। ওই মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। এরপর আর এই সূচক ৯ শতাংশের ওপরে ওঠেনি।

নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। অক্টোবরে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। অন্যদিকে নভেম্বরে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হয়েছে। তবে বাজারে চালসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ফার্মের মুরগি ও ডিমের দাম ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের দামই কমেনি।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মোট চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরু চাল (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অক্টোবরে এই দুই ধরনের চালই কেজিতে ৫-৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল। ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডালসহ কয়েকটি পণ্যের দাম নভেম্বরে নতুন করে বেড়েছে। এমনকি বাজারে নতুন ওঠা শীতের সবজি এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি সংস্থা টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) সরবরাহ করা বাজারদরেও নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের দাম কমার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি সম্পর্কে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে বারবার বলে আসছি, আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরোর মূল্যস্ফীতির তথ্যের সঙ্গে বাজারের বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন হয় না। বিবিএস ১৭ বছর আগের ভিত্তিবছরকে (২০০৫-০৬) ভিত্তি ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করে। অথচ জিপিডির হিসাব দেখায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে। বাস্তব চিত্র পাওয়ার জন্য মূল্যস্ফীতির তথ্যও ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে হিসাব করা উচিত বলে আমি মনে করি।’

শহরের চেয়ে গ্রামে খাবারের দাম বেশি কেন- এ প্রশ্নের উত্তরে আহসান মনসুর বলেন, ‘এর সঠিক কোনো উত্তর আমার জানা নেই। তবে এমন হতে পারে যে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে গ্রামের সব পণ্য এখন দ্রুত শহরে চলে আসছে। সে কারণে গ্রামে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়ায় দাম বেড়ে যাচ্ছে।’

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করার সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে, আমরা বলেছিলাম আশা করছি মূল্যস্ফীতি কমবে। মূল্যস্ফীতি কমেছে। অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৯১ ছিল। এই মাসে নেমেছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশে।’

সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতি কমার পাশাপাশি বেড়েছে মজুরি সূচক। অর্থাৎ ব্যক্তির গড় আয় কিছুটা বেড়েছে। অক্টোবরে মজুরি সূচক ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। নভেম্বরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার প্রবণতা ছিল। ঠিক এ রকম একসময়ে গত ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পর পরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এই দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। গত ২৯ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানো হলেও বাজারে তার প্রভাব ছিল না বললেই চলে।

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশের অর্থনীতির উদ্বেগজনক ও স্পর্শকাতর সূচক এখন মূল্যস্ফীতি। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠে প্রায় শতাংশে পৌঁছেছে। ইউরোপের দেশগুলোও ধুঁকছে। যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভও হচ্ছে।

মজুরি সূচক বেড়েছে

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। সর্বশেষ নভেম্বরে তা আরও বেড়ে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশে উঠেছে। মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হওয়ায় ও মজুরি সূচক বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, ‘আমাদের সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি টানা তিন মাস ধরে কমছে। অন্যদিকে মজুরি সূচক বেশ কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী। সামনের দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে আমরা আশা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর