বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অর্থনৈতিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে: শিবলী

  •    
  • ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৬:১৩

‘নেগেটিভ ইম্প্যাক্টের কারণে মানুষ সেফটি মেজারস নেয়, যার কারণে বিনিয়োগ কমে গেছে।…হয়তো এখন আমরা সমালোচিত হচ্ছি, কিন্তু আমরা যে কাজ করেছি তার সুফল ভবিষ্যতে পাবেন।’

অর্থনৈতিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে বলে মনে করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তিনি এ-ও মনে করেন যে, বিনিয়োগকারীরা সতর্ক হয়ে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে লেনদেন কমে গেছে।

শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কারণে লেনদেন কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে যে আলোচনা, সে বিষয়ে তিনি বলেছেন, বাধ্য হয়েই এটি দিতে হয়েছে। এটি তুলে নিলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি বাড়বে।

সোমবার রাজধানীতে অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারের বিষয় ছিল ‘প্রসপেক্টাস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অফ বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট।’

২০২০ সালের মে মাসে শিবলী রুবাইয়াতের নেতৃত্বে বিএসইস পুনর্গঠিত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর পুঁজিবাজার ছিল চাঙা। তবে গত বছরের শেষ দিকে সংশোধন শুরু হওয়ার পর দেশীয় ও বৈশ্বিক নানা সংকটের প্রভাবে টানা দরপতন হতে থাকে।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে যেসব শঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে, তার প্রভাবও পুঁজিবাজারে স্পষ্ট। টানা দরপতনের মধ্যে গত ৩১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফা ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারের দাম কমা ঠেকিয়েছে বিএসইসি, তবে ৩৯০টি কোম্পানির মধ্যে তিন শতাধিক কোম্পানি এখন ফ্লোরে পড়ে আছে। লাখ লাখ শেয়ারের কোনো ক্রেতা নেই। এই অবস্থায় লেনদেন নেমেছে তলানিতে। চাঙা বাজারে আধা ঘণ্টায় যত টাকা লেনদেন হতো, এখন সাড়ে চার ঘণ্টাতেও হয় না ততটা। শেয়ার বিক্রি করতে না পেরে হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী।

অর্থনীতি নিয় যে উদ্বেগের কথা বলাবলি হচ্ছে তা নিয়ে কথা বলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘নেগেটিভ ইম্প্যাক্টের কারণে মানুষ সেফটি মেজারস নেয়, যার কারণে বিনিয়োগ কমে গেছে।’

প্রসপেক্টাস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অফ বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ে আলোচনায় বক্তারা

তবে সূচকের দিক দিয়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ভালো রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন চাপের কারণে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ভলাটিলিটির মধ্যে দিয়ে গেছে ঠিক, কিন্তু ভলাটিলিটি ইনডেক্স দেখলে বুঝতে পারবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় আমরা অনেক ভালো ছিলাম।’

ফ্লোর প্রাইস ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরে স্বার্থ রক্ষায়শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়ার বিষয়ে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, পুঁজিবাজারের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর স্টক এক্সচেঞ্জে ৯০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বাকি ১০ শতাংশ রিটেইল। কিন্তু আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো। আমাদের বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ইনভেস্টর থাকলে ফ্লোর প্রাইজ নিয়ে আমরা চিন্তাও করব না।

‘আমি আইওএসকোর (বিশ্বের বিভিন্ন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মোর্চা) একজন কর্মকর্তা, বিপাকে পড়ে আমাকে ফ্লোর প্রাইজের কথা ভাবতে হয়েছে। শুধুমাত্র রিটেইল ইনভেস্টরদের কথা ভেবে কমিশনকে ফ্লোর প্রাইজের কথা চিন্তা করতে হয়েছে। অনেক মানুষের মার্জিন থাকে। ফোর্স সেল হয়ে মানুষের সর্বনাশ হয়ে যেত।’

দায়িত্ব নেয়ার পর পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বর্তমান কমিশন কী কী করেছে, তারও বর্ণনা দেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। ইটিএফ, বন্ড, কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মতো প্রোডাক্ট পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হয়তো এখন আমরা সমালোচিত হচ্ছি, কিন্তু আমরা যে কাজ করেছি তার সুফল ভবিষ্যতে পাবেন।’

বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘বিনিয়োগারী এবং বাজার উভয়ের জন্য এটা জরুরি। সেজন্য স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে বিনিয়োগ শিক্ষা কীভাবে যুক্ত করা যায় সে ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’

পুঁজিবাজারের ধীরগতি নিয়ে অন্যদের হতাশা

সেমিনারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ- ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার প্রধান ৬টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পৃথিবীর আর কোনো দেশের সরকার প্রধান পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এত বেশি গুরুত্ব দেন কিনা আমার জানা নেই। বিএসইসিও ভালো কাজ করছে। শুধুমাত্র ইক্যুইটি মার্কেটে আটকে নেই। আমাদের বাজারে বন্ড, ডেট ইত্যাদি আসছে। তবে পলিসি সাপোর্ট এখনও অপর্যাপ্ত রয়েছে। এ বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভালো কোম্পানিগুলো ৯ শতাংশ বা এর কমে লোন পেয়ে যায় ব্যাংক থেকে। পুঁজিবাজারে আসলে তাকে বিভিন্ন ধরনের কমপ্লায়েন্স মানার পাশাপাশি ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ও অন্যান্য খরচ মিলে ১২ শতাংশ হয়ে যায়, তাহলে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ না নিয়ে ১২ শতাংশ নিয়ে পুঁজিবাজারে আসবেন?’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ- ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান

তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করহারের পার্থক্যকে সামান্য উল্লেখ করে এটি বাড়ানোরও তাগিদ দেন তিনি। বলেন, ‘এটা বাড়ালে আরও অনেকেই বাজারে আসতে চাইবে।’

চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ বা সিএসই চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘ভবিষ্যতে যে বিনিয়োগের প্রয়োজন, তার সিংহভাগই আসতে হবে পুঁজিবাজার থেকে। স্বাধীনতার পরে প্রাইভেট সেক্টরে যে বিনিয়োগ হয়েছে, তার সবই ব্যাংক থেকে হয়েছে। অথচ এটা হওয়া উচিত ছিল পুঁজিবাজার থেকে।’

তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলোকে ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ হারে সুদে ঋণ নিয়েও পরিশোধ করতে হয়েছে। অনেকেই হয়তো পারেনি। যার কারণে এনপিএলের (খেলাপি ঋণ) পরিমাণ বেড়েছে এত হারে।

‘লং টার্মে আগে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশে ঋণ পাওয়া যেত, এখন সেটা দশের নিচে চলে এসেছে। অন্যান্য ফ্যাসিলিটিজের ওপর প্রেসার আছে। আমাদের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুঁজিবাজারের মাধ্যমেই করতে হবে।’

চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ বা সিএসই চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোর মোর্চা বিএপিএলসির সাবেক সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ করবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো। তারা বিনিয়োগ করবে কীভাবে? তাদের কাছে তো টাকা নাই। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংক সময় বেঁধে দেয়। যে মুনাফা হয় তা প্রফিশন বিল্ড আপ করতেই চলে যায়। তাহলে পুঁজিবাজারে ইনভেস্ট করবে কীভবে?’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় সব মার্কেটই তিন বছর ধরে ওঠানামা করছে, আমাদের মার্কেটেও তাই হচ্ছে। ধারাবাহিক উত্থান বা পতন প্রত্যাশা করা যায় না।’

বিএপিএলসির সাবেক সভাপতি আজম জে চৌধুরী

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিএমবিএর সহসভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন ক্রাইসিস মুহূর্তে দেখি, বা মিডিয়াতে আসে, বিভিন্ন ধরনের স্কিম তৈরি করা হয় যে, কারা কত শেয়ার কিনবে বা বিনিয়োগ করবে। এই ডিমান্ড ড্রিভেন পলিসি খুবই শর্ট লিড। এটা অন্যান্য জায়গায় কাজ করে না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মেরিট বেসড বা ভ্যালু বেসড ইনভেস্টমেন্ট হয় না। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের মানসিকতা থাকে না। স্পেকিউলেটিভ ইনভেস্টমেন্ট হয়। কারণ যখন কেউ দেখে রাতারাতি কোনো শেয়ারের ভ্যালু বেড়ে যাচ্ছে। তখন এই স্পেকিউলেশন প্রবৃদ্ধি জেগে ওঠে। সবাই প্রাইস গেই করতে চায়, লং টার্মে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় না।’

ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সাংবাদিক মোফাজ্জল হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

এ বিভাগের আরো খবর