জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে থাকা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাবেন।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্যরাও তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। অর্থাৎ ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা যোগ হয়ে পরিবারের যে সদস্যের নামে টাকা পাঠাবেন তিনি ১০২ টাকা পাবেন।
আর ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। অর্থাৎ ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ১০২ টাকা ৫০ পয়সা তুলতে পারবেন পরিবারের সদস্যরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার এসংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে।
সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন হতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অর্জিত রেমিট্যান্সের বিপরীতে নগদ সহায়তা প্রদান’ শীর্ষক সার্কুলারে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত সেনা/নৌ/বিমান/পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে অর্জিত অর্থ বৈধ উপায়ে দেশে প্রেরণ করলে ওই অর্থের বিপরীতে প্রণোদনা/নগদ সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে নিচের কার্যপদ্ধতি অনুসরণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো-
>> জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত সেনা/নৌ/বিমান/পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রাপ্ত অর্থের বিপরীতে প্রণোদনার অর্থ ছাড়করণের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের সদস্যদের প্রত্যেকের প্রাপ্যতার তালিকাসহ তাদের ব্যাংক বরাবর আবেদন করবে।
>> সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সেনা/নৌ/বিমান/পুলিশ বাহিনীর আবেদন করা অর্থ ছাড়করণের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর তালিকাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস্ এন্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্ট (এবিডি) বরাবর আবেদন করবে।
>> সরকার হতে তহবিল পাওয়া সাপেক্ষে এবিডি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বরাবর অর্থ ছাড় করবে।
এবং
>> সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সশস্ত্র বাহিনী প্রদত্ত তালিকা মোতাবেক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্ব স্ব ব্যাংক হিসাবে প্রনোদনা/নগদ সহায়তা জমা করবে।
সার্কুলারে বলা হয়, নগদ সহায়তা/প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে ১ লা জুলাই ২০১৯ হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের উপর ২ শতাংশ নগদ সহায়তা/প্রণোদনা প্রযোজ্য হবে এবং ১ লা জানুয়ারী ২০২২ হতে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের উপর ২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ সহায়তা/প্রণোদনা প্রযোজ্য
হবে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারি করা আগের নির্দেশনাসমূহ যথারীতি বলবৎ থাকবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৈধ পথে (ব্যাংকিং চ্যানেলে) রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সরকার ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রণোদনার হার বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়।
কিন্তু শান্তিরক্ষা মিশনে থাকা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এতোদিন তাদের পাঠানো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের উপর সরকার ঘোষিত এই প্রণোদনা পাচ্ছিলেন না।
১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান সামরিক মিশনে ১৫জন মিলিটারি পর্যবেক্ষক নিয়ে জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৪০টি দেশে ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৯ জন সদস্য অংশ নেন।
বর্তমানে বিশ্বের ৮টি দেশের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৬ হাজার ৮৩২ জন সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৭০১ জন নারী শান্তিরক্ষী সাফল্যের সাথে তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে ৩৭২ জন নারী শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্মরত আছেন।
বিশ্ব শান্তিরক্ষায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মোট ১৩৯ জন জীবন বিসর্জন দিয়েছেন এবং ২৪২ জন আহত হয়েছেন।