বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্বব্যাংক।
ওয়াশিংটনভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি বলেছে, চলতি ২০২২ সাল শেষে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশি প্রবাসীদের তাদের দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সে অঙ্ক দাঁড়াবে ২১ বিলিয়ন (২ হাজার ১০০ কোটি) ডলার। যা হবে ২০২১ সালের চেয়ে ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ কম। এই নেতিবাচক প্রবণতা আগামী ২০২৩ সালেও অব্যাহত থাকবে। গত বছর দেশের প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ২ শতাংশ।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর প্রবাসী আয় নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ‘অভিবাসন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (নোমাড) এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর (২০২১ সাল) বাংলাদেশে ২২ দশমিক ২০ বিলিয়ন (২ হাজার ২২০ কোটি) আমেরিকান ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। সেই সুবাদে ওই বছরে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। চলতি বছর শেষে তা ১২০ কোটি বা ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার কমে ২১ বিলিয়ন ডলারে রেনে আসবে। আর এতে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে বিশ্বে নবম স্থানে নেমে আসবে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ১৭৫ কোটি (২১.৭৫ বিলিয়ন) ডলার।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, গত মার্চ মাসে ২৪ শতাংশ উল্লম্ফন ছাড়া গত দশ মাসে দেশে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। এপ্রিলে ২০১ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ কম। গত বছরের এপ্রিলে ২০৭ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। সবশেষ অক্টোবর মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। অক্টোবরে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৪ কোটি ডলার। গত বছরের অক্টোবরে এসেছিল ২১০ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং লেনদেন ভারসাম্যে বড় ঘাটতি ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। রেমিটেন্সের হ্রাস রোধে সরকার অভিবাসীদের প্রণোদনা দিচ্ছে। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুতের বড় উৎস রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। তবে গত অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি আয় ৩৫ শতাংশ বাড়লেও প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মূখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রবাসী আয় কমার একমাত্র কারণ হচ্ছে অবৈধ হুন্ডি। প্রবাসীদের অবৈধ চ্যানেল অর্থ পাঠানো বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক মাস ধরে প্রবাসী আয় কমছে। আর এ কারণেই বিশ্বে রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশ হিসেবে সপ্তম থেকে নবম স্থানে নেমে আসবে বাংলাদেশ।’
প্রবাসী আয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ নবম
২০২২ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে শীর্ষস্থানে থাকবে ভারত। চলতি বছর দেশটি প্রবাসী আয় পাবে ১০ হাজার কোটি ডলার। গত বছর দেশটি প্রবাসী আয় পেয়েছিল ৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি। একই সময়ে চীনকে ছাড়িয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে মেক্সিকো। দেশটি পাবে ৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। গত বছর পেয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। তৃতীয় স্থানে নেমে যাওয়া চীনের প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২০২১ সালে ছিল প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। ২০২২ সালে হবে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার। অন্য দেশগুলোর মধ্যে ফিলিপাইন ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার নিয়ে চতুর্থ ও ৩ হাজার ২৩৩ কোটি ডলার নিয়ে মিসর পঞ্চম স্থানে থাকবে। ফ্রান্স ষষ্ঠ (৩ হাজার ১০০ কোটি), পাকিস্তান সমপ্ত (২ হাজার ৯০০ কোটি), জামানি অষ্টম (২ হাজার ১১২ কোটি), বাংলাদেশ নবম (২ হাজার ১০০ কোটি ডলার) স্থানে আছে।
৫ মাসে বেড়েছে ১.৬৫ শতাংশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৮৭৯ কোটি ৩১ লাখ (৮.৭৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।
সবশেষ নভেম্বর মাসে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। দুই মাস পর প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। আগের দুই মাস সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে যথাক্রমে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ এবং ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।