আমি কবি তুমি কবিতা
তুমি প্রথম প্রেম, প্রথম প্রেম ওগো সুস্মিতা
ত্বকের সৌন্দর্যে কসকো…
নব্বইয়ের দশকে তারিন-পল্লবের টিভি বিজ্ঞাপনে এই জনপ্রিয় জিঙ্গেলের কথা অনেকের হয়তো মনে আছে। এই বিজ্ঞাপনটি যে পণ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিত তার নাম ‘কসকো গ্লিসারিন সোপ’।
দেশে উৎপাদিত এই সাবানের দাপুটে বাজার ছিল দীর্ঘদিনের। ‘ক্ষয় কম; ব্যবহার করা যায় বেশি দিন’ এমন সুবিধায় অনেকেই আপন করে নেন কসকো সাবান। ব্যক্তিগত ব্যবহারের পাশাপাশি খাবারের হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল জনপ্রিয়তা পায় পণ্যটি। সেই সঙ্গে গ্লিসারিনের কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে ত্বকের সমস্যায় এই সাবানের নিয়মিত ব্যবহার শুরু হয়।
নব্বইয়ের দশকের সেই বিপুল জনপ্রিয়তায় অনেক দিন ধরেই অবশ্য ভাটার টান চলছে। দেশি-বিদেশি সাবানের দাপটে কসকো এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ। বাসাবাড়িতে কমে গেছে ব্যবহার। তবে ক্ষয় কম হওয়ায় হোটেল-রেস্তোরাঁয় এখনও কসকোর বেশ চাহিদা রয়েছে।
পণ্যের ধরন ও মোড়কে আসেনি পরিবর্তন
কসকো সাবান নব্বইয়ের দশকে ব্যাপক পরিচিতি পেলেও মূলত সত্তর দশকের পর থেকে ধীরে ধীরে বাজার দখল শুরু হয়। পাঁচ দশক পরেও পণ্যের গুণগত মান ও মোড়কে পরিবর্তন আসেনি। সাবানের রংও আছে আগের মতো। ক্রেতার আস্থা ধরে রাখতে গন্ধেও বদল আনেনি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান।
উৎপাদক প্রতিষ্ঠান কমান্ডার সোপ কোম্পানি লিমিটেডের বিপণনপ্রধান এম এ মতিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যবসা তেমন বড় হয়নি, তবে উৎপাদন থেমে নেই। গ্লিসারিন সাবানের পাশাপাশি আমরা হ্যান্ডওয়াশ, ডিশওয়াশ, কসকো বার সাবানও বাজারজাত করছি। মানুষের আস্থাই কসকোর পুঁজি।’
কমান্ডার সোপ কোম্পানির সেলস বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোম্পানির তেজগাঁও কারখানায় ৫০ থেকে ৬০ জন কর্মরত আছেন। মালিক ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।’
তিনি জানান, পণ্যে গ্রাহক আস্থা ধরে রাখতে কোনো ধরনের পরিবর্তনের ঝুঁকি নেয়া হয়নি। সাবানে ভিন্নতা আনলে ভোক্তার কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে তা নিয়ে শঙ্কায় ছিল কর্তৃপক্ষ। পুঁজির ঝুঁকি এড়াতে তাই আগের মতোই রয়ে গেছে কসকো সাবান।
কসকো সাবানের বিজ্ঞাপনে তারিন ও পল্লববদলেছে ভোক্তার ধরন
নব্বইয়ের দশকে বাজারে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছে কসকো সাবান। পরে বিদেশি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন কোম্পানির সাবান বাজার নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে যায়। ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ে কসকো।
বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিটিএমএ) ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদন বলছে, দেশে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় বিউটি সোপ লাক্স। এর মার্কেট শেয়ার ৪৫ শতাংশ।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাসাবাড়িতে কমেছে কসকোর ব্যবহার। তবে হোটেল-রেস্তোরাঁয় হাত ধোয়ার জন্য এই সাবানের ব্যবহার এখনও বেশ চোখে পড়ার মতো।
রাজধানীর বাংলামোটর মোড়ের আলম রেস্তোরাঁয় ব্যবহার হয় কসকো সাবান। এর মালিক হোসেন আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কসকো পুরোনো সাবান। ক্ষয় কম হয়, টেকে বেশি দিন। অন্য সাবান দ্রুত ফুরিয়ে যায়, কিন্তু কসকো একটু বেশি দিন টেকে।’
চিকিৎসকের পরামর্শেও অনেকে কসকো সাবান ব্যবহার করছেন। শুষ্ক ও সংবেদনশীল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে গ্লিসারিনযুক্ত এই সাবান ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়।
মিরপুর শেওড়াপাড়ার গৃহবধূ রেহানা পারভীন গায়ে দেয়ার সাবান হিসেবে সারা বছর কসকো ব্যবহার করেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এলার্জির কারণে চিকিৎসক আমাকে এই সাবান ব্যবহার করতে বলেছেন।’
তবে কসকো সাবান কিনতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয় বলে জানান রেহানা। তিনি বলেন, ‘এলাকার অলিগলির কোনো দোকানেই পাওয়া যায় না। বড় একটা সুপার সপ থেকে এই সাবান আমাকে কিনতে হয়। সেখানেও সব সময় পাওয়া যায় না। তাই আমি একসঙ্গে ৫-৬টি কিনে রাখি।’
নিভে গেছে প্রচারের আলো
একসময়ে দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকায় থাকত কসকো সাবানের বর্ণিল বিজ্ঞাপন। বিটিভিতেও প্রচার হতো পণ্যের গুণগান। তবে এখন এই পণ্যের কোনো ধরনের বিজ্ঞাপনী প্রচার নেই।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও নেই কসকো সাবানের প্রচার।
কোম্পানি বা পণ্যের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও কথা বলতে উৎসাহ দেখা যায়নি। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে নেই কোনো ফোন নম্বর। দুটি ই-মেইল ঠিকানা থাকলেও সেখানে মেইল করে সাড়া মেলেনি।
তেজগাঁওয়ে কসকোর কারখানায় গিয়ে কথা বলতে চাইলেও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে কর্তৃপক্ষের অনীহা দেখা গেছে। এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কেউ কোম্পানি সম্পর্কে কথা বলতে ইচ্ছুক নয়।’
কসকো সাবানের বিজ্ঞাপনে তারিনতিনি জানান, কমান্ডার সোপ কোম্পানি লিমিটেডের একটি ব্র্যান্ড ‘কসকো’। দেশভাগের পরের বছর ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই কোম্পানি।
ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় রয়েছে কোম্পানির কারখানা। এটি কসকোর দ্বিতীয় কারখানা। কমান্ডার সোপ কোম্পানি লিমিটেডের প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন শিল্পপতি ফজলুর রহমান খান। ১৯৮৫ সালে এমডির দায়িত্ব নেন তার ছেলে মোহাম্মদ জাকারিয়া খান। তিনিই এখন কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন।