বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘নতুন আইনে টাকা সাদা করার সুযোগ নয়’

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২২ ১৯:০৬

সেমিনারে বক্তারা বলেন, প্রচলিত আইনে কর্মকর্তাদের ‘ঐচ্ছিক ক্ষমতা’ অত্যধিক। সে কারণে কর ফাঁকি ও দুর্নীতির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এ বিধান বাতিল করে নতুন আয়কর আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।

‘জাতীয় বাজেটে বার বার কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে অনৈতিক। ক্রাইম বা অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে অর্জিত আয় অবৈধ হলেও আইন করে সেই আয়কেই বৈধতার সুযোগ দিয়েছে সরকার, যা অন্যায়।’

শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত সেমিনারে বিশেষজ্ঞ বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে তারা নতুন আয়কর আইনে সুযোগটি না রাখার দাবি জানিয়েছেন।

‘শতবর্ষে আয়কর আইন, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অফ বাংলাদেশ-আইবিএফবি।

নতুন আয়কর আইনটি যাতে ব্যবসা-বান্ধব ও গতিশীল হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়ে সেমিনারে বক্তারা বলেন, প্রচলিত আইনে কর্মকর্তাদের ‘ঐচ্ছিক ক্ষমতা’ অত্যধিক। সে কারণে কর ফাঁকি ও দুর্নীতির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এ বিধান বাতিল করে নতুন আয়কর আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।

একইসঙ্গে আয়কর আহরণ আরও বাড়াতে এসএমই খাতকে বেশি কর প্রণোদনা, করদাতাদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পুনরায় ট্যাক্স ওমবুসমেন্ট বা কর ন্যায়পাল চালু, উৎসে করের হার কমানোর পরামর্শ দেন তারা।

সেমিনারে বক্তব্য দেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাছান আরেফিন, সাবেক সচিব সোহেল আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, এনবিআরের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য আলমগীর হোসেন, আইবিএফবির সহ-সভাপতি অর্থনীতিবিদ এম এ সিদ্দীক, এফবিসিসিআইর পরিচালক আব্দুল হক প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্নেহাশীষ বড়ুয়া এফসিএ। সঞ্চালনা করেন আইবিএফবির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান।

মূলত বিদ্যমান আয়কর আইনটি ১৯২২ সালে প্রণীত, যা পরবর্তীতে কয়েক দফা সংশোধন হয়েছে। ওই আইনের পরিবর্তে নতুন আয়কর আইন করছে সরকার।

শনিবার গুলশান ক্লাবে ‘শতবর্ষে আয়কর আইন, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা

অনুষ্ঠানে সবার অংশগ্রহণে নতুন আয়কর আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেন হাছান আরেফিন।

করদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে পারস্পরিক আস্থা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ।

এনবিআরের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কর্মকর্তাদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা। কর্মকর্তাকে বুঝতে হবে যে যিনি কর দেন তিনি কষ্ট করে আয় করেন। সুতরাং এমন আচরণ করা যাবে না যাতে করদাতা অসম্মানিত হন।’

করদাতাদের সুবিধার্থে পুনরায় কর ন্যায়পাল চালু ও কর বিভাগ সংস্কারের পরামর্শ দেন তিনি।

আলমগীর হোসেন মনে করেন, দেশে কর কম আদায়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে সচেতনতার অভাব। তিনি বলেন, ‘করদাতাদের সুবিধার জন্যই স্বনির্ধারণী পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে করদাতাদের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়েছে। বেসরকারি খাত ও করদাতাদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন আয়কর আইন করা হচ্ছে।’

এম এ সিদ্দীক বলেন, ‘ক্রিমিনাল বা অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে অর্জিত আয় অবৈধ হলেও সরকার এই আয়কে বৈধ করার সুযোগ দিয়েছে। আমরা আর কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চাই না। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করছে সরকার।’

আইবিএফবির এই সহ-সভাপতি আরও বলেন, ‘এসএমই খাত হচ্ছে দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। অথচ বিদ্যমান করনীতি এই খাতের পরিপন্থী। তিনি প্রশ্ন রাখেন, তাহলে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে কীভাবে? উদ্যোক্তারা কীভাবে উৎসাহিত হবেন?’

মূল প্রবন্ধে স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, দেশে টিআইএন বাড়লেও গড় কর আদায় কমছে। এতে করে গরিবের ওপর করের চাপ বাড়ছে। অর্থনীতির জন্য এটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়।

‘এখন মোট রাজস্ব আয়ে আয়করের অবদান ৩২ শতাংশ। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে এটা ৬৫ শতাংশে উন্নীত করা। ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে। এরপর আমাদের অনেক সুযোগ-সুবিধাই থাকবে না। সুতরাং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে নিজস্ব সম্পদ তথা আয়কর আদায় বাড়াতেই হবে।’

করপোরেট কর হার পর পর তিন বছর কমানোর পরও দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের কার্যকর কর হার বেড়েছে। এর কারণ আমাদের দেশে উৎসে কর হার বেশি। তাই পর্যায়ক্রমে এটি কমানোর প্রস্তাব করেন তিনি।

আইবিএফবির সভাপতি হুমায়ন রশিদ বলেন, ‘নেপালের জনসংখ্যা ২ কোটি ৯০ লাখ। সে দেশে আয়কর রিটার্ন জমা দেয় ২২ লাখ মানুষ। আর আমাদের ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে রিটার্ন জমা দেয় ২৩ লাখ। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশে কর-সংস্কৃতি খুবই দুর্বল।

এ বিভাগের আরো খবর