মোট ৭১টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন শ্রেণিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রপ্তানির জন্য ট্রফি পেয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ–চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এসব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের হাতে ট্রফি তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাস সংকটে দেশের শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ইউরোপের ক্রেতারা কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। চলতি বছর ২০-৩০ শতাংশ আদেশ কম আসবে। গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না করা গেলে আগামীতে রপ্তানির আদেশ আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ গ্যাস আছে তার ৪২ শতাংশ যাচ্ছে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে। এছাড়া মেশিনারিজে ১৮ শতাংশ, ক্যাপটিভ জেনারেশনে ১৭ শতাংশ, গৃহস্থালির রান্নায় ১৩ শতাংশ আর সিএনজিতে ব্যবহার হচ্ছে ৪ শতাংশ গ্যাস। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমরা আলাপ করেছি, যদি আরও ৫ শতাংশ গ্যাস শিল্প খাতে বাড়ানো হয় তাহলে লোডশেডিং থেকে আমরা বেঁচে যেতে পারি।’
শিল্পে দ্রুত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দাম সমন্বয়ের প্রয়োজন হলে তা-ও আমরা করতে রাজি আছি। জ্বালানির ওপর প্রায় ৪৭ শতাংশ কর আছে। এটি কমাতে হবে।
‘ডলার সংকট আরও প্রকট হতে পারে। ইউরোপ, আমেরিকায় বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা কমছে। ক্রেতারা যদি মনে করে বাংলাদেশে অর্ডার দিলে তারা প্রোডাক্ট পাবে না তখন আরও বড় সমস্যা হবে। আমাদের জ্বালানি দরকার। আমরা কমিটমেন্ট করতে পারি, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস দিলে ১৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাড়বে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খুব শিগগির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা বসব। কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে প্রতিনিয়তই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হচ্ছে। সংকট সমাধানে শিগগির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করে একটা খসড়া করে ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা হবে।
ট্রফি পেল যেসব প্রতিষ্ঠান
তৈরি পোশাক শিল্প খাতে রিফাত গার্মেন্টস স্বর্ণ, একেএম নিটওয়্যার রৌপ্য ও অনন্ত অ্যাপারেলস ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। নিট পোশাকে জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ স্বর্ণ, স্কয়ার ফ্যাশনস রৌপ্য ও ফোর এইচ ফ্যাশনস পেয়েছে ব্রোঞ্জ ট্রফি।
সব ধরনের সুতায় বাদশা টেক্সটাইল স্বর্ণ, কালাম ইয়ার্ন রৌপ্য ও নাইস কটন ব্রোঞ্জ এবং কাপড়ে এনভয় টেক্সটাইল স্বর্ণ, আকিজ টেক্সটাইল মিলস রৌপ্য ও নাইস ডেনিম ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।
এছাড়া হোম ও বিশেষায়িত টেক্সটাইলে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস এবং টেরিটাওয়েলে নোমান টেরিটাওয়েল মিলস স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে।
হিমায়িত খাদ্যে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস। এছাড়া অ্যাপেক্স ফুডস রৌপ্য ও এমইউ সি ফুডস ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। কাঁচা পাটে ইন্টারন্যাশনাল জুট ট্রেডার্স স্বর্ণ ট্রফি জিতেছে। আর পাটজাত পণ্যে আকিজ জুট মিলস স্বর্ণ, করিম জুট স্পিনার্স রৌপ্য ও ওহাব জুট মিলস ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।
চামড়ায় (ক্রাস্ট ও ফিনিশড) অ্যাপেক্স ট্যানারি স্বর্ণ ও এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ রৌপ্য এবং চামড়াজাত পণ্যে পিকার্ড বাংলাদেশ স্বর্ণ, এবিসি ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ রৌপ্য ও বিবিজে লেদার গুডস ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।
জুতায় বে-ফুটওয়্যার স্বর্ণ, রয়েল ফুটওয়্যার রৌপ্য ও এফবি ফুটওয়্যার ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।
অন্যদিকে কৃষিজ পণ্যে মনসুর জেনারেল ট্রেডিং স্বর্ণ ও ইনডিগো করপোরেশন রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে।
কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে তিনটি পুরস্কারই পেয়েছে প্রাণ গ্রুপ—প্রাণ ডেইরি, প্রাণ অ্যাগ্রো ও প্রাণ ফুডস। ফুল ফলজে রাজধানী এন্টারপ্রাইজ স্বর্ণ ও এলিন ফুডস ট্রেড রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে।
হস্তশিল্পে কারুপণ্য রংপুর স্বর্ণ, বিডি ক্রিয়েশন রৌপ্য ও ক্ল্যাসিক্যাল হ্যান্ডমেড প্রোডাক্টস ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। এ ছাড়া প্লাস্টিক পণ্যে বেঙ্গল প্লাস্টিকস স্বর্ণ, ডিউরেবল প্লাস্টিক রৌপ্য ও বঙ্গ প্লাস্টিক ইন্টারন্যাশনাল ব্রোঞ্জ এবং সিরামিক পণ্যে শাইনপুকুর সিরামিকস স্বর্ণ, আর্টিসান সিরামিকস রৌপ্য ও প্যারাগন সিরামিক ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।
হালকা প্রকৌশল শিল্পে ইউনিগ্লোরি সাইকেল কম্পোনেন্ট স্বর্ণ, ইউনিগ্লোরি সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ রৌপ্য ও রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ইউনিট-২ ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। এছাড়া ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক পণ্যে এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং স্বর্ণ, কনফিডেন্স স্টিল রৌপ্য ও রহিমআফরোজ ব্যাটারি ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।
অন্যান্য শিল্পজাত পণ্যে তাসনিম কেমিক্যালস কমপ্লেক্স স্বর্ণ, মেরিন সেফটি সিস্টেম রৌপ্য ও মূমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ পেয়েছে ব্রোঞ্জ ট্রফি।
ওষুধে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল স্বর্ণ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল রৌপ্য ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ব্রোঞ্জ ট্রফি এবং কম্পিউটার সফটওয়্যারে সার্ভিস ইঞ্জিন স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে।
ইপিজেডের শতভাগ বাংলাদেশি মালিকানাধীন তৈরি পোশাক শিল্পে (নিট ও ওভেন) ইউনিভার্সেল জিনস স্বর্ণ ও প্যাসিফিক জিনস রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে। আর অন্যান্য পণ্য ও সেবায় ফারদিন অ্যাকসেসরিজ স্বর্ণ ও আরএম ইন্টারলাইনিংস রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে।
প্যাকেজিং ও অ্যাকসেসরিজ পণ্যে এম অ্যান্ড ইউ প্যাকেজিং স্বর্ণ, মনট্রিমস রৌপ্য ও ইউনিগ্লোরি পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।
প্রাথমিক পণ্যে অর্কিড ট্রেডিং করপোরেশন স্বর্ণ, ইকো ফ্রেশ ইন্টারন্যাশনাল রৌপ্য ও দ্য কনসোলিডেটেড টিঅ্যান্ড ল্যান্ড কোম্পানি ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। অন্যান্য সেবা খাতে মীর টেলিকম স্বর্ণ এবং নারী উদ্যোক্তা বা রপ্তানিকারক সংরক্ষিত শ্রেণিতে স্কয়ার টেক্সটাইল স্বর্ণ ও আল-সালাম ফেব্রিকস রৌপ্য ট্রফি জয় করেছে।