সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবয়নেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা লেগেছে।
এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপে। সেটি সামাল দিতে ব্যয় সংকোচন করছে সরকার। তার প্রভাব পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি বাস্তবায়নে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ বা আইএমইডি মঙ্গলবার এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপির আওতায় উন্নয়ন কার্যক্রমে সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছিল, প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) তার মাত্র ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। টাকার অঙ্কে এই ব্যয়ের পরিমাণ ৩২ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে এডিপির জন্য সরকার দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এর চেয়ে কম ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। তার মানে শতকরা হিসেবে গত ৭ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম অর্থ ব্যয় হয়েছে।
টাকার অঙ্কে অবশ্য ব্যয় বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম চার মাসে ব্যয় হয়েছিল ৩০ হাজার ৯১৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তবে সে বছর বরাদ্দ ছিল কম। ওই বছরের প্রথম চার মাসে বাস্তবায়নের হার ছিল ১৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
২০২০-২১, ২০১৯-২০ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবর সময়ে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২৭ হাজার ৪৫৩ কোটি, ৩০ হাজার ৬৫২ কোটি এবং ২৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আড়াই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ওলটপালট হয়ে গেছে। তার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়েছে। ব্যয় সংকোচনের কারণে আমরা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে কম মনোযোগ দিচ্ছি। সে কারণে হয়তো আগের তুলনায় খরচ একটু কম হয়েছে। তবে অর্থবছরে শেষে দেখবেন, ঠিকই ৯০ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন হবে।’
আইএমইডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের নীতির কারণে বিদেশি পণ্য আমদানি করতে হবে- এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন কিছুটা পিছিয়ে। আবার অনেক সময় প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ঠিক থাকলেও প্রকল্পের অর্থ ছাড় না হাওয়ার কারণেও বাস্তবায়ন কম দেখানো হয়। সেই রকম কয়েকটি প্রকল্পও আছে।‘
আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্ত ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে সেতু বিভাগ। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে সবচেয়ে কম ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে বরাদ্দের ৬ শতাংশ। বিভাগটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য চলতি অর্থবছর ১৫ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকার বরাদ্দের বিপরীতে চার মাসে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বাস্তবায়ন কম হওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভাগটির বেশ কয়েকটি প্রকল্পের দরপত্র চলতি মাসে চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে অর্থ ছাড় শুরু হবে।’
কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে একটি বড় প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব থাকায় ওই প্রকল্পের ব্যয় হওয়া অর্থও আমরা এখন দেখাতে পারছি না। শিগগিরই প্রকল্পটির সংশোধনী অনুমোদন পেলে বাস্তবায়ন বেড়ে যাবে।’
আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বাস্তবায়ন করেছে ২১ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ প্রায় ২০ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে প্রায় ১৬ শতাংশ।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ও কৃষি মন্ত্রণালয় ১৩ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রায় ১১ শতাংশ; বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১০ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। বেশি বরাদ্দের ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে আর কেনোটিই ১০ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন করতে পারেনি।