ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ সময় ঘনিয়ে এলেও প্রত্যাশিত রিটার্ন জমা পড়েনি এখনও। অবশ্য বরাবরই সময়সীমার শেষ দিকে রিটার্ন জমার হিড়িক পড়ে।
ঘোষণা অনুযায়ী, ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর রিটার্ন জমার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। ওই দিন জাতীয় আয়কর দিবস পালন করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত ৯ লাখের বেশি করদাতা তাদের রিটার্ন দিয়েছেন। অথচ ট্যাক্স পেয়ার আইডেনটিফিকেশন বা টিআইএনধারীর সংখ্যা ৭৮ লাখের বেশি। অর্থাৎ ৮৮ ভাগ টিআইএনধারীই এখনও রিটার্ন জমা দেননি। অনলাইনে রিটার্ন জমার সুযোগ গ্রহণেও সাড়া কম।
এবার আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়ানো হবে কি না সে তথ্য সোমবার পর্যন্তও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রতিবারের মতো এবারও সময় বাড়ানোর দাবি উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে।
বাজেটে আইন পাস করে প্রতি বছর ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন জমার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। মূলত বারবার সময় বাড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের পরামর্শে আয়কর রিটার্ন জমার দিন নির্দিষ্ট করা হয়।
কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। কারণ গত বারও রিটার্ন জমার সময় বাড়ানো হয়েছে। করোনাসহ অন্যান্য কারণে ব্যবসায়ীসহ করদাতাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সময় এক মাস বৃদ্ধি করেছিল এনবিআর।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরও দেশের অর্থনীতি চাপে আছে। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নানা কারণে ব্যবসায়ীদের উৎপাদন খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবারও সময় বাড়ানোর আবেদন করবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
তবে সময় বাড়ানোর জন্য শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে করদাতাদের। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বেশির ভাগ রিটার্ন জমা পড়ে শেষ সময়ে।
করদাতাদের সুবিধার্থে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেয়ার পদ্ধতি চালু করেছে এনবিআর। কিন্তু তাতেও তেমন সাড়া মিলছে না। অনলাইনে এ পর্যন্ত মাত্র ৭৫ হাজার করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। সব মিলে সোয়া ৯ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছে সোমবার পর্যন্ত।
এ বছর কর মেলা হচ্ছে না। তবে ১ নভেম্বর থেকে দেশের প্রতিটি কর অঞ্চল ও সার্কেল কার্যালয়ে কর মেলার আদলে পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। রিটার্ন ফরম পূরণ থেকে শুরু করে জমা দেয়া সবই করা যাচ্ছে সেখানে। করদাতাদের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা দিতে বুথও খোলা হয়েছে।
প্রতি বছর গড়ে ২৫ লাখের মতো করদাতা রিটার্ন জমা দেন। টিআইএনের তুলনায় রিটার্ন জমার সংখ্যা খুবই কম।
এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, এবারের বাজেটে ৩৯টি সেবা নিতে টিআইএনের সঙ্গে প্রাপ্তি স্বীকারপত্রসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট রিটার্নের সঙ্গে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে এবার আয়কর রিটার্নের সংখ্যা অনেক বাড়বে।
সূত্র বলেছে, এনবিআর প্রত্যাশা করছে, এবার আয়কর রিটার্নের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে তা আছে ২৫ লাখ।
সময় বাড়ানোর আবেদন এনবিআরে
এদিকে রিটার্ন জমার সময় বাড়ানোর আবেদন আসছে এনবিআরে। রোববার ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশন রিটার্ন জমার সময় আরও দুই মাস বাড়ানোর আবেদন করেছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুহিমের কাছে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া খান এই আবেদন করেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ করবর্ষের পরিপত্র বিলম্বে প্রাপ্তি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশের অর্থনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সব পেশার করদাতার পক্ষে নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই রিটার্ন দাখিলের সময় আরও দুই মাস বাড়ানো হোক।