সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও ধনী-গরিব আয়-বৈষম্য ক্রমশই বাড়ছে। এর প্রধানতম কারণ বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা ন্যায়সঙ্গত নয়। বিদ্যমান কাঠামোতে সম্পদশালীর চেয়ে গরিবের ওপর করের চাপ বেশি। ধনি ও গরিবের মধ্যে এই বৈষম্য কমাতে হলে দেশের কর ব্যবস্থাকে অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। আর তা নিশ্চিত করা গেলে কর আদায়ে সমতা আসবে।
সোমবার রাজধানীর পল্টনে অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম–ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।
‘প্রমোটিং সিটিজেনস পার্টিসিপেশন ফর প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন’ শীর্ষক এই সেমিনার যৌথভাবে আয়োজন করে বেসরকারি সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশন ও দাতা সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইড।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান কর ব্যবস্থা পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীল, যা দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায্য নয়। পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতার ফলে সমাজের সচ্ছল অংশের তুলনায় দরিদ্র মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়। এতে দরিদ্রের ওপর বোঝা তৈরি করে। এটা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয়-বৈষম্য সৃষ্টি করে। এই বৈষম্য কমিয়ে আনতে হলে অংশগ্রহণমূলক প্রগতিশীল কর ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. তাজুল ইসলাম।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমার সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক নির্মল দাস ও গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের অনিরুদ্ধ রায়।
‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রগতিশীল কর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর ন্যায্যতা’ বিষয়ক গবেষণার সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অফ আইটি’র প্রভাষক সানজিদা ইসলাম।
স্টার্ট-আপ ইভেন্টের সভাপতি মহসিন আলী বলেন, ‘সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও গরিব ও ধনীর মধ্যে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। এ বৈষম্য কমাতে না পারলে এসডিজির লক্ষ্য পূরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’
যারা কর ফাঁকি দেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
উপ-সচিব মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দরিদ্র মানুষকে পরোক্ষভাবে ভ্যাট দিতে হলেও পরিমাণ বেশি নয়। চাল, আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সবজির ওপর ভ্যাট নেই। পুরো কর ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনের আওতায় চলে এলে কর আদায়ে স্বচ্ছতা আসবে। তখন গরিবের ওপর করের চাপ কমবে এবং বৈষম্যও কমে আসবে।’
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে পরোক্ষ করের পরিমাণ মোট রাজস্বের প্রায় ৩৬ শতাংশ। ভ্যাট ধনী ও গরিবের মধ্যে সমানভাবে প্রয়োগ হয় বলে তা একটি অন্যায্য প্রক্রিয়া। আর এ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে।
‘আয়কর প্রদান প্রক্রিয়া এত জটিল যে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ সম্পর্কে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। কর আদায় প্রক্রিয়া সহজ করে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে পারলে আয়-বৈষম্য কমে আসবে।’
নির্মল দাস জানান, নাগরিক সমাজের সংগঠন, প্রতিনিধি ও যুবদের সম্পৃক্ত করে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং নীতিনির্ধারকদের অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।