স্বল্পোন্নত দেশ–এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার পর বাংলাদেশ যাতে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে, সে জন্য বিদ্যমান বাণিজ্য সুবিধা বহাল রাখতে ইতালির সমর্থন চান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নানজিয়াতার সঙ্গে সচিবালয়ে এক সৌজন্য সাক্ষাতে এ সহযোগিতা চান মন্ত্রী।
বর্তমানে ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার বা জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ।
২০২৬ সালের পর উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের। উত্তরণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি সুবিধা পাবে না বাংলাদেশ। তখন অন্যান্য দেশের মতো প্রযোজ্য হারে শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি করতে হবে।
যদিও ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে বাজার সুবিধা দেয়া হবে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে।
ইতালির রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এর মধ্যে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ। তবে এ জন্য আরও কিছু সময় লাগবে। গ্র্যাজুয়েশনের পর জিএসপি সুবিধা অব্যাহত থাকা দরকার। এ বিষয়ে ইতালির সমর্থন প্রত্যাশা করি।
জবাবে ইতালির রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশ সরকারের বার্তা তিনি ইতালির সরকারপ্রধানের কাছে পৌঁছে দেবেন। ইতালি সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দেন রাষ্ট্রদূত।
বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইতালির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তৈরি পোশাকের বাজারের মধ্যে ইতালি অন্যতম। ইতালিতে অনেক বাংলাদেশি সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। ইতালির তৈরি যন্ত্রপাতি এবং মেডিক্যাল মেশিনারিজ বাংলাদেশে প্রচুর ব্যবহার হয়। উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির অনেক সুযোগ আছে। এ সুযোগ কাজ লাগাতে হবে।
বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করতে সরকার বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এখানে কম খরচে দক্ষ জনশক্তি ব্যবহারের সুযোগ আছে। এখানে কম খরচে বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন সম্ভব। ইতালির উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। বেশ কিছু ইপিজেড উদ্বোধন করা হয়েছে, অনেকগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে।
ইতালির ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান মন্ত্রী।
রাষ্ট্রদূত এনরিকো নানজিয়াতা বলেন, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদনে বেশ সফল হয়েছে। বিশ্ববাজারে মেড ইন বাংলাদেশ ভালো ব্র্যান্ড। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ইতালিতে বেশ জনপ্রিয়। ইতালির অনেক পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করে।
উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইতালি সরকার পর্যটনকে খুবই গুরুত্ব দেয়, এ ক্ষেত্রে পর্যটক বিনিময়ও হতে পারে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন পণ্য ইতালিতে রপ্তানি করে প্রায় ১৭১ কোটি মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৫৫ কোটি ডলারের পণ্য।