বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমস্যা হবে না’

  •    
  • ২০ নভেম্বর, ২০২২ ১৮:১৭

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির ৬০ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের বাজারে। ২০২৬ সালের পর ওইসব দেশে আমাদের রপ্তানি ব্যাহত হবে না। যুক্তরাজ্য ঘোষিত জিএসপি নীতি বাংলাদেশের জন্য সহায়ক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাস কর্মসূচি পালনও কঠিন হবে না।’

স্বল্পোন্নত দেশ-এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক সংলাপে তিনি এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার-ডব্লিউটিও মন্ত্রিসভার সম্মেলন ১২, ফলাফল ও পরবর্তী পদক্ষেপ’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি।

অনুষ্ঠানে এলডিসি-উত্তরণ পরবর্তী বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন

সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান।

বাণিজ্য সচিব বলেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ ভালো করেছে। আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির ৬০ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের বাজারে। ২০২৬ সালের পর ওইসব দেশে আমাদের রপ্তানি ব্যাহত হবে না।’

কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য সরকার যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি নীতি ঘোষণা করেছে, তা বাংলাদেশের জন্য সহায়ক। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাস কর্মসূচি পালন করা আমাদের জন্য কঠিন হবে না।

‘কাজেই, আমি মনে করি এলডিসি-উত্তরণের পর বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বাংলাদেশের কোনো সমসা হবে না।’

করোনা মহামারিসহ নানা কারণে গত পাঁচ বছর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলন হয়নি। কোভিড পরিস্থিতির উন্নতির পর চলতি বছরের জুলাইয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হয় ডব্লিউটিওর বাণিজ্য সম্মেলন ১২। এই সম্মেলনের ফল ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে পদক্ষেপ নিতে এই আলোচনার আয়োজন করে সিপিডি।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ, সরকারি কর্মকর্তা, শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা, গবেষকসহ সাবেক আমলারা বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, ডব্লিউটিওতে আমাদের অধিকারের স্বীকৃতি থাকলেও এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি নেই। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সংস্থার সব সম্মেলনই ব্যর্থ হয়েছে। সবশেষ সম্মেলনেও তেমন কোনো ফল নেই। বার বার এলডিসির দাবিগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। ডব্লিউটিও থেকে আমরা কিছুই পাব না। কাজেই, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আমাদেরকে এগুতে হবে। পাশাপাশি যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে সেগুলো মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রপ্তানির সক্ষমতা বাড়াতে বহু বছর ধরেই আমরা পণ্য বহুমুখীকরণের কথা বলে আসছি। কিন্তু এক্ষেত্রে ভালো কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে আমাদের রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতেই হবে। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প স্থাপন ও ট্যারিফ কাঠামো যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। পাশাপাশি নন-ট্যারিফ ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ এর সঙ্গে রপ্তানির সক্ষমতার বিষয়টি জড়িত।

সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন।

তিনি বলেন, ‘রপ্তানির সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বহু বছর ধরেই আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ। অথচ অন্যান্য দেশে এটি জিডিপির ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে দরকার জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা। এ জন্য জাতীয় বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।’

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলে ১২টি খাত নিয়ে কাজ চলছে। আশা করছি এখান থেকে ভালো ফল পাব।’

তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সংকট আরও গভীর হয়েছে। তা মোকাবিলায় এফবিসিসিআই একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে এবং এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এতে ভর্তুকি, ট্যারিফ কাঠামো ও পণ্য বহুমুখীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে।’

জিএসপি প্লাস-এর বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা আরও জোরদার করার দাবি জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বালি, নাইরোবি, জেনেভাসহ বেশিরভাগ সম্মেলনের কোনো ভাল ফল আমরা দেখিনি। ডব্লিউটিও সম্মেলনে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর ইস্যু সবসময়ই উপেক্ষিত হয়েছে। সে জন্য তাদের দিকে না তাকিয়ে উত্তরণ -পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’

জেনেভায় বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. তৌফিক আলী বলেন, ‘ডব্লিউটিও-এর কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা থাকলেও সেসবের কিছুই পূরণ হয় না।’

এই সংস্থার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে মনে করেন তিনি।

এলডিসি-উত্তরণে ডব্লিউটিও কোনো উপকারে আসবে না বলে মনে করেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ।

এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ।

অনেক দেশ ডব্লিউটিওর রুলস অনুসরণ করে না বলে জানান ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এলডিসি থেকে এ পর্যন্ত সাতটি দেশের উত্তরণ ঘটেছে। তবে বাংলাদেশের উত্তরণ একটি বড় ঘটনা। কারণ, ডব্লিউটিওর দেয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কার্যকর করেছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালের পর এসব সুবিধা থাকবে কিনা সেটিই আলোচনার বিষয়। যদি থাকে তা হলে কিভাবে থাকবে তা জানতে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে।

‘আমাদের চিন্তার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে হবে। এখন থেকে উন্নয়নশীল দেশ বিবেচনা করে আমাদেরকে এগুতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও থাকা দরকার। শুধু আলোচনা করে বাজার সুবিধা পাওয়া সহজ হবে না। আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর