বন্ধ হয়ে যাওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের প্রায় ১ হাজার গ্রাহক ২০২৩ সালে ফেরত পাবেন তাদের বিনিয়োগ করা টাকা। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি আমানতকারীদের প্রাধান্য দেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।
পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হাসান শাহেদ ফেরদৌস এমন আশ্বাস দিয়েছেন।
শনিবার সকালে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের প্রায় ৬ হাজার ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র আমানতকারীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন এ কথা জানান তিনি।
চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন তহবিলে আছে ৯০ কোটি টাকা। আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাড়বে আরও ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকা। আগামী বছর ১ হাজার, ২ হাজার, ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা ব্যক্তিদের আমানত ফেরত দেয়া হবে। এরই মধ্যে সাড়ে পাঁচ শ’ জনের তালিকা করা হয়েছে, এসব ব্যক্তিদের অর্থ ফেরত দিতে অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট।’
শতাধিক আমানতকারীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানে পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান এবং আগামী দিনের কর্মকান্ড নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন হাসান শাহেদ ফেরদৌস।
তিনি বলেন, ‘শুধু অর্থ ফেরত নয়, অনেকেই অর্থ জমাও রাখতে চান। ৮০-৯০ কোটি টাকা এই প্রতিষ্ঠানে যার আছে, তিনি পুরো টাকা না নিয়ে ১০ কোটি টাকা শেয়ার রাখতে পারেন।
‘প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে। সিটি সেন্টারের অফিস এরই মধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। বোর্ড অব ডিরেক্টর সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এতে কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হয়েছে।’
যারা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে ‘এক্সিট প্ল্যান’ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে ছাড় দিতে হচ্ছে। তারপরও টাকা তোলা গেলে নতুন ব্যবসা করা যাবে। এক্ষেত্রে হাউজিং ঋণ দেয়া হতে পারে। অল্প অল্প করে অর্থ ফেরত আসতে থাকবে। জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হবে এই কার্যক্রম।
‘দুর্নীতি দমন কমিশন চাপ দিচ্ছে, তাতে অনেকে ভয়ে টাকা ফেরত দিচ্ছেন। তবে, এই ফেরত দেয়ার প্রবণতা খুবই ধীরগতির। এই প্রতিষ্ঠানের সব সিস্টেম নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আমরা ব্যাংক অ্যান্টিমাস নামের একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করছি। যেখানে হিসেব রাখা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদিত।’
পর্ষদের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম আছে, ৫ লাখ টাকার ওপরে ঋণ দিতে হলে জামানত বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোটি কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে বিনা জামানতে। লুট করা কোম্পানিকে রাতারাতি জাগানো যায় না। গ্রাহকদের ধৈর্য্য ধরতে হবে।
‘৩০ কোটি টাকা ব্যাংকে এককালিন স্থায়ী আমানত বা এফডিআর রাখা হয়েছে। বলেন, যাতে যে কোনো সংকট মোকাবিলা সম্ভব হয়।’
পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের একজন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নাসের বখতিয়ার। তিনি বলেন, ‘শীর্ষ ৫ জন খেলাপির কাছ থেকে অর্থ তোলা গেলে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি পর্যায়ের গ্রাহকদের আমানত পরিশোধ করা যাবে। শীর্ষ ২ জন খেলাপির কাছ থেকে ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব।’
আমানতকারী কাউন্সিলের প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অপরাধীরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।’
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার পর ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে ছিল। ২০১৯ সালে ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ে পিপলসের অবসায়নের আবেদন করে। গত ২৬ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় সে আবেদন অনুমোদন করলে ১০ জুলাই পিপলসের অবসানের বিষয়টি অনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হয়।
একই বছরের ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা তোলার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে প্রতিষ্ঠানটির অবসায়ক নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানটিতে ছয় হাজার ব্যক্তি আমানতকারী এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা আটকে পড়ে। এই টাকার পুরোটাই ঋণ হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে আছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে বেশিরভাগ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
আমনত তছরুপের পেছনে ছিলেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। তিনি বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে ভারতের কারাগারে আছেন।