ধান-চাল ব্যবসায়ীদের প্রতি সপ্তাহের রিটার্ন জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে খাদ্যমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বোরো মৌসুম থেকে ধান-চাল ব্যবসায়ীদের প্রতি সপ্তাহের রিটার্ন জমা দেয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে। যারা ধানের আড়তের ব্যবসা করছেন তাদের প্রতি সপ্তাহে কতটুকু ধান কিনছেন, কতটুকু ধান কোন মিলে বিক্রি করছেন তার হিসাব সরকারকে দিতে হবে। চালকল মালিকদেরও এই নিয়ম মেনে চলতে বলা হচ্ছে।
‘যারা এই হিসাব দেবেন না তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এবার ব্যবসায়ীদের প্রতি সপ্তাহের রিটার্ন জমার কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। যে সব মিলার করপোরেট গ্রুপের কোনো ব্র্যান্ডের নামে চাল বাজারজাত করার চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, লাইসেন্স নেই এমন অনেক ব্যক্তি ধান-চাল কিনে মজুত করে রাখছেন। এতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়ে থাকে। বিনা লাইসেন্সে কোনো ব্যক্তি ধান-চালের ব্যবসা করতে পারবে না। লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খাদ্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্যসংকট হতে পারে বলে আভাস দেয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
‘এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে। কৃষকদের এই পরিস্থিতিতে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। নিজেদের যেসব জমি আছে তার সবটা জুড়ে ফসল আবাদ করলে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে খাদ্য আমদানি করতে হবে না।’
কৃষকদের প্রতি সরকারি গুদামে ধান বিক্রির আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কৃষকদের চাষাবাদে উৎসাহিত করতে সার ও বিদ্যুতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষকদের দায়িত্ব রয়েছে, তাদের উৎপাদিত ধানের কিছু কিছু সরকারি গুদামে দেয়া।
‘২০১৮-১০১৯ সালে ধানের দাম বাজারে অতিরিক্ত পরিমাণে কমে যায়। তখন কৃষক হা-হুতাশ করতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে সরকার কৃষকদের ধানের নায্য দাম নিশ্চিত করতে মৌসুমের শুরুতেই ধান-চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন বলেই কৃষক ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, সরকারি গুদামে ধান বিক্রির সময় কোনো কৃষক বা মিলার যেনো কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন। মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন গুদামে ধান দিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
ধান-চাল সংগ্রহের সময় খাদ্যর অপচয় বা নষ্ট না করে ভালোভাবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
চলতি বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ও সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁর পুলিশ সুপার রাশিদুল হক, রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা জিএম ফারুক হোসেন পাটোয়ারী।
নওগাঁ জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ১১ হাজার ৪৫৪ টন ধান এবং ২২ হাজার ১৩৬ টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান ক্রয় ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত সিদ্ধ চাল ক্রয় করা হবে।
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী নওগাঁ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোণা ও দিনাজপুর জেলার সরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, চালকল মালিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।