শহর থেকে গ্রাম বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিক টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টানা দুই মাস মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনে ভাটার টানের পর সেপ্টেম্বরে লেনদেন ও গ্রাহক দুই ক্ষেত্রেই উল্লম্ফন হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৮৭ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। আগের মাস আগস্টে তা ছিল ৮৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২৩৯ কোটি টাকা। এই বৃদ্ধির হার দশমিক ২৭ শতাংশ।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে জুলাই মাসে ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়। জুনে লেনদেন ছিল ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। আর চলতি বছর এপ্রিলে একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। লেনদেন হয় ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ টাকা। এরপর মে মাসে লেনদেন কমে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এই হিসাবে এতদিন অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে নগদ-এর মাধ্যমে করা লেনদেনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এমএফএসের কর্মকর্তারা বলেন, জুন মাসে ঈদের সুবাদে বেশি লেনদেনে হয়েছে। সাধারণত ঈদ-পরবর্তী সময়ে লেনদেন কমে যায়। ঈদের আগের মাস জুনে মানুষ কেনাকাটা বেশি করেছে। বেতন-বোনাস মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দেয়ায় লেনদেনও বেড়ে যায়।
ঈদের পর জুলাই-আগস্ট মাসে লেনদেন কম হয়। এখন আবার লেনদেন বেড়েছে। এটা স্বাভাবিক লেনদেন চিত্র।
মোবাইল ব্যাংকিং দেশের ব্যাংকিং সেবায় নতুন সম্ভাবনার পাশাপাশি অর্থনীতিতে বড় ধরনের গতি সঞ্চার করেছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই সেবায় যোগ হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান।
এক মাসে নিবন্ধিত গ্রাহক বেড়েছে ২০ লাখের বেশি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরে সারাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৫২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১০ কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজার ৫৪ ও নারী সাত কোটি ৭৫ লাখ ৩২ হাজার ৭৮২ জন।
আগস্টে নিবন্ধিত গ্রাহক ছিল ১৮ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ৬১০। এর মধ্যে পুরুষ ১০ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ৮৮১ ও নারী গ্রাহক সাত কোটি ৬৫ লাখ ৯৬ হাজার ৩৮২। সে হিসাবে এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে ২০ লাখ ৩৩ হাজার ৩২২ জন।
একই সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১২৮টি। আগস্টে তা ছিল ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩৯৮।
অন্যান্য সেবা
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে।
রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।
সেপ্টেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানো হয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। আর উত্তোলন করা হয়েছে ২৩ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।
এই মাসে এমএফএস সেবায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২৫ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় দুই হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার দুই হাজার ১৭৮ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটার তিন হাজার ১২৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
লেনদেন উৎসাহিত করতে সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ টাকা জমা করতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।