বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফ্লোরের বাঁধন আলগা করল বিএসইসি

  •    
  • ১৫ নভেম্বর, ২০২২ ১৮:৫১

এখন যে প্যানিক সিচুয়েশন, তাতে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া বুমেরাং হবে। তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার চেয়ে এই সিদ্ধান্ত ভালো হয়েছে। কেউ যদি লোকসান দিয়ে ক্রেতা ঠিক করতে পারে, তাহলে তিনি বের হয়ে যান: লালী

বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইসে আড়াই শরও বেশি কোম্পানির ক্রেতা না থাকার পর কম দামে শেয়ার বিক্রির সুযোগ রাখল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

তবে মূল বাজারে নয়, ব্লক মার্কেটে বিক্রি করা যাবে এই শেয়ার। আর ফ্লোরের চেয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমে লেনদেন করা যাবে। তবে ব্লকে কমে লেনদেন হলেও ফ্লোর প্রাইস কমে যাবে না। আবার ব্লকে যে দর হবে, সেটি মূল বাজারের দর হবে না।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। মঙ্গলবার ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে পাঠানো চিঠিতে এই বিষয়টি জানানো হয়।

তবে কম দামে বেচা গেলেও সার্কিট ব্রেকারের নিচে নামা যাবে না। যদি কোনো কোম্পানির সার্কিট ব্রেকার ৬.৫ শতাংশ হয়, তাহলে একদিন সাড়ে ৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দিন সাড়ে ৩ শতাংশ কমতে পারবে।

গত ৩১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস কার্যকরের পর এক মাসের বেশি সময় পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বগামী থাকলেও এবার এই উত্থান করোনাকালের মতো হয়নি। সে সময় প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লেও এবার এক শর কিছু বেশি কোম্পানির দর বেড়েছে। শুরু থেকেই দুই শ কোম্পানির দর ফ্লোরে লেনদেন হচ্ছিল। সেটি বাড়তে বাড়তে এখন তিন শ ছুঁয়েছে।

এসব কোম্পানির লেনদেন হচ্ছে না বললেই চলে। মঙ্গলবার ৭০টি কোম্পানির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি।

২০টি কোম্পানির একটি করে, ৫টি কোম্পানির ২টি করে, ৭টি কোম্পানির ৫টি করে, একটি কোম্পানির ৬টি, দুটি কোম্পানির ৭টি এবং একটি করে কোম্পানির ৮ ও ৯টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

আরও ২৬টি কোম্পানির ১০০টির কম, ১৫টি কোম্পানির ১০০ থেকে ২০০টি, ১৩টি কোম্পানির ২০০ থেকে ৩০০টি, আরও ১০টি কোম্পানির ৫০০টির কম শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হওয়া ২৩৪টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ১৬ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এটি কেবল একদিনের চিত্র নয়, প্রায় প্রতিদিনই একই ঘটনা ঘটছে।

লেনদেনে আগ্রহ নেই এমন কোম্পানির মধ্যে শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানিও আছে, যেগুলো বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। কিন্তু সর্বনিম্ন দরে বসিয়ে শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা, যেটি লেনদেন তলানিতে নামিয়েছে।

দাম কত কমতে পারবে

বিএসইসির এই নির্দেশনার কারণে ২০ টাকা দরের শেয়ার দুই টাকা কমে ১৮ টাকায় লেনদেন করা যাবে। এরপর ব্লক মার্কেটেও আর দাম কমতে পারবে না। তবে বাড়তে পারবে।

একইভাবে শেয়ারের দর যদি ২১ টাকা হয়, তাহলে দাম কমতে পারবে ২ টাকা ১০ পয়সা, যদি দর ২৬ টাকা হয়, তাহলে দর কমতে পারবে ২ টাকা ৬০ পয়সা, যদি ৫১৮ টাকা হয়, তাহলে দাম কমতে পারবে ৫১ টাকা ৮০ পয়সা।

আবার যেহেতু দর কমার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হবে, সেহেতু এক দিনেই ১০ শতাংশ দর নাও কমতে পারে।

বিদ্যমান সার্কিট ব্রেকার অনুযায়ী শেয়ারদর ২০০ টাকা পর্যন্ত হলে এক দিনে ওঠানামার সীমা বা সার্কিট ব্রেকার ১০ শতাংশ। ২০১ টাকা থেকে ৫০০ টাকার শেয়ারে ৮.৭৫ শতাংশ, ৫০১ টাকা থেকে ১০০০ টাকার শেয়ারে ৭.৭০ শতাংশ, ১০০১ টাকা থেকে ২০০০ টাকার শেয়ারে ৬.২৫ শতাংশ, ২০০১ টাকা থেকে ৫০০০ টাকার শেয়ারে ৫ শতাংশ এবং ৫০০০ টাকার উপরের শেয়ারে ৩.৭৫ শতাংশ উত্থান-পতনের সীমা রয়েছে।

অর্থাৎ যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ২০০ টাকার বেশি, সেগুলোর দর ১০ শতাংশ কমতে হলে কমপক্ষে দুই কর্মদিবস লাগবে।

‘ভালো সিদ্ধান্ত’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বিএসইসির এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন। তিনি মনে করেন না এটি মূল বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার মতো কোনো ঘটনা।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ব্লকে তো কেউ কম দামে শেয়ার কেনার অর্ডার দিয়ে রাখতে পারবে না। সেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতা নির্দিষ্ট থাকবে। কেউ যদি মনে করেন যে তিনি কমে বিক্রি করবেন এবং একই সঙ্গে একজন যদি ঠিক করেন, তিনি কিনবেন, কেবল সেই দুই জনের মধ্যে এই লেনদেন হবে।

তিনি বলেন, ‘এখন যে প্যানিক সিচুয়েশন, তাতে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয় বুমেরাং হবে। তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার চেয়ে এই সিদ্ধান্ত ভালো হয়েছে। কেউ যদি লোকসান দিয়ে ক্রেতা ঠিক করতে পারে, তাহলে তিনি বের হয়ে যান।’

লালী বলেন, এটা কোনো নতুন সিদ্ধান্তও নয়। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের পর যখন ফ্লোর প্রাইসে ক্রেতা ছিল না, সে সময়ও ব্লকে এভাবে ১০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রির সুযোগ দেয়া হয়েছিল। আমার মনে আছে, সে সময় স্কয়ার ফার্মার মতো শেয়ার ১৫৬ টাকায় লেনদেন হয়েছিল ব্লকে। তবে মূল বাজারে দর ঠিকই ছিল।

ব্লক মার্কেট কী

ব্লক মার্কেট হচ্ছে এমন একটা মার্কেট যেখানে বেশি পরিমাণের শেয়ার কেনাবেচা হয় যার শেয়ারের দাম এবং ভলিউম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগে থেকেই ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে ঠিক করা থাকে। মূল বাজারের মতো শেয়ারের দর হেঁকে সেখানে অচেনা কারও কাছ থেকে কেনার সুযোগ নেই।

ডিএসই এর যেই ট্রেডিং প্লাটফর্ম বা সফটওয়্যার আছে তার মাধ্যমেই এই ব্লক মার্কেটে লেনদেন করা হয়। সাধারণ মার্কেটের লেনদেনের মতই ব্লক মার্কেটে লেনদেন সম্পন্ন হয়।

এবারই নতুন নয়

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু অধিকাংশ কোম্পানিতে ক্রেতা না থাকায় লেনদেন তলানিতে চলে যায়। সেই পরিস্থিতিতে ওই বছরের ১০ জুন ব্লক মার্কেটে ফ্লোরের নিচে লেনদেন করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল।

পরে অবশ্য শেয়ারের ক্রয় চাপ বাড়ে এবং ফ্লোর ছাড়িয়ে যায় সিংহভাগ কোম্পানি। করোনার প্রকোপ কমার সঙ্গে সঙ্গে ধাপে ধাপে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয়। শুরুতে দেখা যায়, এতে শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকলেও পরে ফ্লোরের দরকেও ছাড়িয়ে যায়।

এ বিভাগের আরো খবর