বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউনাইটেড এয়ারের বকেয়া সারচার্জ মওকুফ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশের একমাত্র এয়ারলাইনসটির ফ্লাইটে ফেরার ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
অবশ্য বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, এখনও এ ধরনের নির্দেশ তাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমিই প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম। তিনি তৎক্ষণাৎ ব্যক্তিগত সচিবকে ডেকে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিতে বলেন।
‘কোম্পানির বেশিরভাগ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। তাদের স্বার্থরক্ষায় আমরা কোম্পানিটিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছি, কিন্তু বিশাল অঙ্কের সারচার্জের কারণে পারছিলাম না।’
তিনি বলেন, ‘দুই-তিনজন বিদেশি ক্লায়েন্ট এসেছেন এটাকে কিনতে। এই সারচার্জ না থাকলে তারা এটা নেবেন। তারা কোম্পানিটিকে কিনে একটি কার্গো অপারেটর কোম্পানি বানাতে চায়। এগুলো বিমান নয়, কোম্পানির পুরনো বিমান বিক্রি করে নতুন কার্গো বিমান আনবে।’
এর আগেও একবার ইউনাইটেডের আবেদনে প্রতিষ্ঠানটির সারচার্জ মওকুফ করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছিল বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। তবে সে সময় আবেদনটি নাকচ হয়ে যায়।
গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারের বোর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন পর্ষদ এয়ারলাইনসটিকে পুনরায় চালু করার জন্য প্রায় এক বছর আগে বকেয়া সারচার্জ মওকুফের আবেদন জানায়।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) হিসাবে, এ পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারের কাছে তাদের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪ শ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৫৮ কোটি টাকা হলো মূল বকেয়া, বাকিটা সারচার্জ বা পুঞ্জিভূত বকেয়া।
শুরু থেকেই ইউনাটেডের নতুন পর্ষদ বলে আসছিল, মূল বকেয়া পরিশোধে আপত্তি নেই। তবে সারচার্জ মওকুফের আবেদন জানিয়ে আসে এয়ারলাইনসটি।
পরবর্তী প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক শিবলী বলেন, ‘এটা সিভিল এভিয়েশনের চার্জ। সিভিল অ্যাভিয়েশন বিমানকে যেভাবে সারচার্জ ছেড়ে দিতে বলতো সেভাবে এদের বলবে। তবে মূল বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।
‘তারা যদি সহযোগিতা করে তাহলে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা লাভের সম্ভাবনা তৈরি হবে।’
দেশি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে প্রথম পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। ২০০৭ সালে ব্যবসা শুরু করা এয়ারলাইনসটি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় ২০১৬ সালে। এতে কোম্পানির শেয়ার দর নামতে নামতে দুই টাকার নিচে নেমে আসে।
বিএসইসি মূল মার্কেট থেকে কোম্পানিটিকে স্থানান্তর করে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেটে। সেখানে শেয়ার লেনদেন জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলে লেনদেনও হচ্ছে না। এতে ৭২ কোটি শেয়ারের মালিকদের টাকা কার্যত শূন্য হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এখনও মন্ত্রণালয়ে আসেনি বলে জানিয়েছেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনও এ ধরনের নির্দেশ আমাদের কাছে আসেনি। আমরা তো এটা আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। তখন তো তারা এটা রিজেক্ট করে দেয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশটা এখনও আমার জানা নেই।’
২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় ইউনাইটেড এয়ারের বহরে ছিল মোট ১০টি উড়োজাহাজ। এগুলোর মধ্যে ৮টি বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বাকিগুলোর একটি রয়েছে ভারতে, আরেকটি পাকিস্তানে।
পর্ষদ পুনর্গঠনের পর এই উড়োজাহাজগুলো দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে কি না, তা দেখতে একটি টেকনিক্যাল এসেসমেন্ট পরিচালনা করা হয়। এসেসমেন্ট শেষে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই উড়োজাহাজগুলো মেরামত করে চালানো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না।
ইউনাইটেড নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পুনর্গঠিত বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওনি এটা বলেছেন, আমরা শুনেছি। এখনও জিনিসটি ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে আমাদের হাতে আসেনি। আমরা যখন বিএসইসির মাধ্যমে জানতে পারব তখন আমাদের পরিকল্পনা আছে। আমাদের একটি বিজনেস প্ল্যান তৈরি করা আছে।
‘যেহতু আমাদের টেকনিক্যাল এসেসমেন্ট টিম রিকমেন্ড করেছে, এখন যে উড়োজাহাজগুলো আমাদের আছে এগুলো রিপেয়ার করতে যে খরচ হবে তার চেয়ে এগুলো বিক্রি করে দেয়া শ্রেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি মওকুফটা পাই এবং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পাই, তখন বোর্ড এটা সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা একটি এজিএম করার অনুমতি হাইকোর্ট থেকে পেয়েছি। সেখানেই আমরা এটা সিদ্ধান্ত নেব। যদি বিক্রি করতে পারি আশা করি এখনও একটি ভালো এমাউন্ট আমরা পেতে পারি।
‘ইউক্রেন যুদ্ধের আগে আমাদের টিম যে এসেস করেছিল তাতে ১০ মিলিয়ন ডলারের একটি কথা বলেছিল। এখন বাজার মূল্য এরকম হতে পারে। তবে যুদ্ধের কারণে এটা এখন ফল করেছে। তবুও আশা করি যে ফান্ড পাব সেটা দিয়ে আমাদের পরিকল্পনা, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন এটি একটি কার্গো এয়ারলাইনস হবে, সেদিকেই আমরা যাব। প্রথমে দেশের ভেতরে এবং পরে আন্তর্জাতিক কার্গোতে আমরা যাব।’