চলমান অর্থনৈতিক সংকটে ব্যাংক খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি একইসঙ্গে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে, আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ দেশে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে সরবরাহ ও চাহিদায় ভারসাম্য ফিরে আসবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থায় বর্তমানে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে।’
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ডাকা এই আয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মুখপাত্র বলেন, ‘বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক খবর প্রচার হচ্ছে। সেখানে বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকের আমানত তুলে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থ নেই বা তারল্য সংকট আছে।
‘কিন্তু এটি সত্য নয়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। তারল্যের কোনো সংকট নেই। ব্যাংক ব্যবস্থায় বর্তমানে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে।’
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার বাণিজ্যিক ব্যাংকের সব ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে বিশেষ সতর্ক বার্তা দিয়েছে। কোনো ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় কোনো ব্যত্যয় থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরসনে পদক্ষেপ নেবে।
‘তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট নীতি সর্বদা চালু রয়েছে। ব্যাংকের পরিদর্শন ও সুপারভিশন বিভাগ ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি। আশা করা যায় আগামীতেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না।’
‘এলসি খোলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা নেই’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে কমার্শিয়াল এলসি ওপেনিং বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সঠিক নয়। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, নভেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত এক হাজার ২৬৩ মিলিয়ন ডলারের এলসি ওপেন হয়েছে। গত মাসের এ সময়ে যা ছিল এক হাজার ২৩২ মিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের অক্টোবরে এলসি ওপেন হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৩ মিলিয়ন ডলারের।’
তিনি জানান, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল। এরই প্রভাবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে সরবরাহ ও চাহিদায় ব্যত্যয় ঘটতে থাকে।
কমার্শিয়াল এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। স্ব স্ব ব্যাংক তাদের রেমিট্যান্স আয় ও ব্যয়সাপেক্ষে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল বিবেচনায় ঋণপত্র খুলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিপূর্ণ গাইডলাইন অনুযায়ী সেসব তদারকি করে যাচ্ছে।
এলসি স্থগিতের খবর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি যখন নাজুক অবস্থানে থাকে তখন এই ধরনের গুজব রটে।’
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্তে জানা গেছে, কোনো কোনো আমদানি পণ্যে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিং হয়েছে। একইসঙ্গে গাড়ি আমদানিতে দাম কম দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেয়া হচ্ছে।’
‘২০ থেকে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিং কোন সময়ে হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক অবস্থা যখন একদম স্বাভাবিক ছিল তখন ডলারের চাহিদা ও সরবরাহ পর্যাপ্ত ছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সিরিয়াসলি তদারকি করা হয়নি। করোনা-পরবর্তী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্বের এক্সটারনাল সাইড অস্থিতিশীল হওয়ার কারণে তখন থেকে তদারকি জোর দেয়ার পর ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং-এর ব্যাপারগুলো ধরা পড়ে।’
‘বিশেষ তদারকিতে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রার কোনো লোন ডিফল্ট হয়নি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তা হতেও দেবে না।’