দেশের শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে আমন মৌসুমের শুরুতেই হঠাৎ বেড়ে গেছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকার ভেদে ৫০ কেজি চালের বস্তায় বেড়েছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা।
বাজারে নতুন আমন ধান উঠেছে। এই সময়ে চালের দাম বাড়ায় সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। এ অবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে মিল মালিকদের তদারকির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা।
দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে বড় চালের বাজার বাহাদুর বাজার। সেখানে ৫০ কেজি বস্তার আটাশ চাল ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, মিনিকেট ৩ হাজার ৪৮০ থেকে ৩ হাজার ৫৫০ টাকা, কাঠারি সেদ্ধ ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ৮০০, পায়জাম ২ হাজার ৬০০ টাকা, চিনিগুঁড়া ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা, কাঠারি আতপ ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ৮০০ টাকা, সম্পা কাঠারি আতপ ৩ হাজার ২৫০ থেকে ৩ হাজার ৩৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহ আগে গত শনিবার ৫০ কেজি বস্তার আটাশ চাল ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, মিনিকেট ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা, কাঠারি সেদ্ধ ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা, পায়জাম ২ হাজার ৩০০ টাকা, চিনিগুঁড়া ৫ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ৬ হাজার ২০০ টাকা, কাঠারি আতপ ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ২০০, সম্পা কাঠারি আতপ ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ৩৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।
বাজারে নতুন আমন ধান উঠতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় চালের দাম বাড়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা।
বাজারে চাল কিনতে আসা মকবুল হোসেন বলেন, ‘দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে চাল কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন আগে চালের দাম কমে, এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। আমরা গরিবরা বাঁচা মুশকিল হয়ে পড়েছে।’
আরেক ক্রেতা অনিল চন্দ্র বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে এক বস্তা চাল ২ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। আজ (রোববার) ২ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। কী কারণে চালের দাম বাড়তেছে বুঝতে পারছি না। দোকানদাররা চালের দাম বাড়ার বিষয়ে বলছেন, বাজারে চাল পাওয়া যাচ্ছে না।’
ট্রাক্টরচালক জয় হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে এক বস্তা চাল একসঙ্গে কেনা যাচ্ছিল। এখন যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে এক বা দুই কেজি করে কিনতে হচ্ছে। চালের দাম যেভাবে বাড়ছে সেই অনুযায়ী আমাদের আয় বাড়ছে না।’
দিনাজপুরের বাজারে বেড়েছে চালের দাম। ছবি: নিউজবাংলা
বাহাদুর বাজারের সুমন ট্রেডার্সের মালিক নাসির উদ্দীন বলেন, ‘এখন ইরির মৌসুম শেষ। সাধারণত এই সময়ে চালের দাম একটু বাড়ে। তবে বাজারে নতুন চাল ঠিকমতো সরবরাহ হলেই দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। কয়েকদিনে প্রতি কেজি চাল ২ টাকা বেড়েছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই চালের দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
‘চালের দাম বাড়ার কারণে বাজারে ক্রেতা অনেক কমে গেছে। মিলাররা তো মিলের জন্য ৬ মাসের ধান কিনে রাখেন। এখন তারা ধানের সংকট দেখিয়ে চালের দাম বৃদ্ধি করেছেন।’
মিল মালিকদের সরকারি তদারকির আওতায় আনার দাবি জানান এই ব্যবসায়ী।
বাহাদুর বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজগার আলী বলেন, ‘মিল থেকে আমাদের বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। মিল থেকেই ঠিকমতো চাল সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এখানে চাল ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই।’
বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কিং রাইস মিল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, ‘এই সময়ে ধানের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই, তবু বাড়ছে। আর ধানের দাম বাড়লে চালের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
‘সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলো সরকার নির্ধারিত ডলার রেট মানছে না। ফলে অতিরিক্ত দামে চাল আমদানি করে আমদানিকারকরা পোষাতে পারছেন না। তাই চাল আমদানিতে খুব একটা আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের।’