আবাসন খাতে এক বছরে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তার মধ্যে ৭৫ শতাংশ দিয়েছে পাঁচ ব্যাংক। অগ্রণী, জনতা, সোনালী, ইসলামী ও আইএফআইসি- এই পাঁচ ব্যাংক আবাসন খাতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এই পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে আইএফআইসি।
জানা যায়, আবাসন খাতে চার ক্যাটাগরির ঋণ বিতরণ করা হয়। বাণিজ্যিক বা ডেভেলপার, ব্যক্তি পর্যায়ে গৃহনির্মাণ ঋণ, ব্যক্তি পর্যায়ে ফ্ল্যাট ক্রয় ঋণ এবং পল্লি গৃহায়ন ঋণ। তবে কয়েক বছর ধরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ ও ফ্ল্যাট ক্রয় ঋণ চালু করা হয়েছে। ফলে সরকারি কর্মচারীরাও গৃহায়ন ঋণ নেয়া বাড়িয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হালনাগাদ তথ্যে এটি উঠে এসেছে। এক বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ব্যাংক খাতে মোট ৭ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। এক বছরের মধ্যে ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আইএফআইসি ১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। অগ্রণী ব্যাংক ১ হাজার ১০২ কোটি, ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ১৯ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংক ৪৬৩ কোটি টাকা এবং জনতা ব্যাংক ১৩৯ কোটি টাকা আবাসন খাতে ঋণ দিয়েছে।
এই চলতি ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আবাসন খাতে এই পাঁচ ব্যাংকের ঋণের স্থিতি ছিল ৩৯ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ছিল ৩৫ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। আর মোট আবাসন খাতে ঋণের স্থিতি ছিল ৮৫ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। ২০২১ সালে স্থিতি ছিল ৭৭ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, গত এক বছরে দেশে আবাসন খাতে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। আর আবাসন খাতের মোট ঋণের অর্ধেক সরবরাহ করছে সরকারি তিন ও বেসরকারি দুই ব্যাংক।
ব্যক্তি পর্যায়ে চাহিদার ৭০ শতাংশ ঋণ দেয় ব্যাংক এবং বাকি ৩০ শতাংশ দেয় ব্যক্তি। ধরা যাক, ১ কোটি ফ্ল্যাটের দাম হলে ৭০ লাখ টাকা দেবে ব্যাংক এবং ৩০ লাখ টাকা ব্যক্তির বহন করতে হবে। ২০ বছর পর্যন্ত এ ঋণের মেয়াদ দেয় ব্যাংকগুলো। তবে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত আবাসন খাতের জন্য ঋণ দেয়া হয়।
করোনার প্রকোপে দেশে আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া গত দুই বছর থেকে রডের কাঁচামাল মেল্টিং স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে যাওয়া, সিমেন্ট, বালু থেকে শুরু করে আবাসন খাতের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণ-প্রক্রিয়ায় ধীর গতি আসে। ব্যাংক থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা ঋণ নেয়া যায়। একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলো গৃহনির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট কেনার জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ দিতে আগ্রহী। কারণ ফ্ল্যাট কেনার জন্য অর্থ দিলে ব্যাংক মনে করে এই অর্থ সময়মতো ফেরত আসবে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংক এবং শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সবাই এমন খাতের কথা চিন্তা করে, যেখানে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘ মেয়াদে এর সুফল পাওয়া যাবে। তাই মধ্যবিত্তরা চেষ্টা করেন ফ্ল্যাট কেনার জন্য। ছোট হলেও একটা ফ্ল্যাট করতে চান। আর ব্যাংক এ খাতে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী। কারণ আবাসনে বিনিয়োগ করলে সময়মতো ব্যাংক অর্থ ফেরত পাবে।’