সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ৫ পয়েন্ট যোগ হওয়ার পর টানা তিন কর্মদিবস পতনে আস্থা সংকট দেখা দেয় পুঁজিবাজারে। শেষ কর্মদিবসেও সেখান থেকে বের হতে পারল না শেয়ারবাজার।
সূচকে সামান্য পয়েন্ট যোগ হলেও লেনদেন ৬ কর্মদিবস পরে হাজার কোটির নিচে নামল, যেটি ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইতে বৃহস্পতিবার হাতবদল হয়েছে ৭৯৭ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে ২২০ কোটি ৯১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা কম। বুধবার লেনদেন ছিল ১ হাজার ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
এর আগে হাজার কোটির নিচে লেনদেন হয়েছিল ১ নভেম্বর। ওই দিন হাতবদল হয়েছিল ৯০২ কোটি ৮৩ লাখ ১১ হাজার।
আজকের চেয়ে কম লেনদেন হয়েছিল তারও এক দিন আগে, অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর। সেদিন হাতবদল হয় ৭৬৯ কোটি ২৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
ব্রোকারেজ হাউসে চেক জমা দিয়ে নগদায়নের আগে শেয়ার কেনা যাবে না বলে ১১ অক্টোবর বিএসইসির নির্দেশনার পর পুঁজিবাজারে ফের দরপতন শুরু হয়। ৩০ অক্টোবর সিদ্ধান্ত পাল্টানোর পর ফ্লোর প্রাইস থেকে শেয়ারগুলো বের হতে শুরু করে।
গত সপ্তাহের বুধ, বৃহস্পতির পর চলতি সপ্তাহের বোববারও এই প্রবণতা দেখা যায়। এরপর বিএসইসি ও আইএমএফের বৈঠক নিয়ে উৎকণ্ঠায় শুরু হওয়া পতনে আবারও ফ্লোর প্রাইসে লেনদেনের সংখ্যাটা বাড়তে থাকে।
বৃহস্পতিবার দরবৃদ্ধির তুলনায় দরপতনের সংখ্যা বেশি থাকলেও সূচকে পয়েন্ট যোগ হওয়ার কারণ, সেগুলো সূচকে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি। সেই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক শেয়ারের লেনদেন হয়েছে আগের দরে, যেগুলোর দুই-একটি ছাড়া সবই ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন করছে।
অপরিবর্তিত দরে লেনদেন হয় ২২৭টির। আগের দিনে এই সংখ্যাটা ছিল ২১৮টি।
আগের দিনের মতোই দরবৃদ্ধির তুলনায় দরপতন হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৬টির, কমেছে ৮০টির।
দিনের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। ৮ মিনিটেই সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর কিছুটা কমলেও ১ ঘণ্টা ৬ মিনিটেও ওই পরিমাণ বেড়ে লেনদেন হয়েছে।
এরপর ক্রমাগত দরপতনে দুপুর ১২টা ২১ মিনিটে সূচক আগের দিনের চেয়ে ৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে। সেখান থেকে ৩ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন শেষ হয়। ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৩৫৩ পয়েন্টে।
ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মার্কেট পজের দিকে যেতে পারে। বাজার সোমবার, মঙ্গলবারের ওপর নির্ভর করবে বলেছিলাম। যেসব শেয়ার ম্যাচিউরড হয়েছিল সেগুলোর চাপ নিতে পারে কি-না, কিন্তু সেগুলোর চাপ নিতে পারেনি। সেভাবে শেয়ারের বায়ার নেই। এটা দুই রকম হতে পারে, বাজারে বায়ার নেই অথবা বায়ার আছে কিন্তু এই মুহূর্তে কেনার আগ্রহ নেই।’
সূচকে প্রভাব যাদেরসবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ২৮ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে সি-পার্ল। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
ওরিয়ন ইনফিউশনের দর ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট।
বিকন ফার্মা সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক শূন্য দুই পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, ইস্টার্ন হাউজিং, ওরিয়ন ফার্মা, নাভানা ফার্মা, পূবালী ব্যাংক ও মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯০ পয়েন্ট।
বিপরীতে কোনো কোম্পানিই ১ পয়েন্ট সূচক কমাতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি শূন্য দশমিক ৬৭ পয়েন্ট সূচক কমেছে ইউনিক হোটেলের দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫৭ পয়েন্ট কমেছে সোনালী পেপারের কারণে। শেয়ার প্রতি দাম কমেছে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ।
কোহিনূর কেমিক্যালের দর ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৫০ পয়েন্ট।
এ ছাড়া বাটা সুজ, জেনেক্স ইনফোসিস, বেক্সিমকো ফার্মা, আইটি কনসালট্যান্টস, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, আমরা টেকনোলজিস ও লুবরেফ বাংলাদেশের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৪ দশমিক ২৮ পয়েন্ট।
শীর্ষ ৫ খাত যেমনআগের দিনের মতোই শীর্ষে রয়েছে প্রযুক্তি খাত। লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা গতকাল ছিল ২১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তিনটি করে কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে সাতটির দরপতন হয়েছে। একটি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে আগের দরে।
১৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা লেনদেন করে আগের দিনের মতোই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। আগের দিনে লেনদেন ছিল ১৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
পাঁচটি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৮টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে, চারটির দরপতনে।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে সেবা ও আবাসন খাত। লেনদেন হয়েছে ৬৯ কোটি টাকা। খাতের দুইটি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে দর বেড়ে, আর একটি করে কোম্পানির দরপতন ও আগের দরে লেনদেন হয়েছে।
পরের স্থানে থাকা কাগজ ও মুদ্রণ খাতে হাতবদল হয়েছে ৬৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা গতকাল ছিল ৮৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। দুইটি করে কোম্পানির দরবৃদ্ধি, একটির অপরিবর্তিত দরে ও তিনটির দরপতন হয়েছে।
পঞ্চম স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
চারটি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৫টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে। ১০টির লেনদেন হয় দর কমে।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ দর বেড়ে সি-পার্লের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭৪ টাকা ৩০ পয়সায়। আগের দিনে লেনদেন হয় ১৫৮ টাকা ৫০ পয়সায়।
৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৫ টাকা ৬০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ২৩ টাকা ৩০ পয়সা।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট। ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ৩৮ টাকা ২০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ৩৫ টাকা।
এ ছাড়া দরবৃদ্ধির ১০-এ ছিল সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইস্টার্ন হাউজিং, আমরা নেটওয়ার্কস, নাভানা ফার্মা, মীর আকতার ও লাভেলো আইসক্রিম।
দরপতনের শীর্ষ ১০সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে আমরা টেকনোলজিসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৭ টাকা ১০ পয়সা, যা আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ৫১ টাকায়।
শমরিতা হাসপাতালের দর ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ কমে ৭৪ টাকা ১০ পয়সায় প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। পূর্বের দর ছিল ৭৯ টাকা ৩০ পয়সা।
৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ দর কমে কপারটেকের শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে ৪০ টাকায়। আগের দিনের দর ছিল ৪২ টাকা ৪০ পয়সায়।
এ ছাড়াও পতনের তালিকায় শীর্ষ ১০-এর মধ্যে ছিল আইটি কনসালট্যান্টস, বিডি থাই ফুড, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, লুবরেফ বাংলাদেশ ও সোনালী আঁশ।