বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এখন অন্যরাও ঋণ দেবে, সংকট কেটে যাবে

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২২ ২১:০৬

‘আইএমএফ যে সব কথা বলছে, সেগুলো কিন্তু আমরা অর্থনীতিবিদরাও বহুদিন ধরে বলে আসছি। যেমন ধরেন, আইএমএফ আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়াতে বলেছে, ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে বলেছে, খেলাপি ঋণ কমাতে বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বায়ত্বশাসন দিতে বলেছে-এগুলো কিন্তু আমরাও বার বার বলে আসছি। আমরা দেশের ভালোর জন্য, মঙ্গলের জন্যই এ সব কথা বলেছি। আইএমএফ তাই বলছে।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ায় অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দেয়া সহজ হবে বলে মনে করছেন দুই অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর ও সালেহউদ্দিন আহমেদ। সরকারকে এই ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তারা বলেছেন, এখন বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্যরাও ঋণ নিয়ে এগিয়ে আসবে; সংকট কেটে যাবে।’

আইএমএফ এর কাছ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন (৪৫০ কোটি) ডলার ঋণ নিতে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই এ ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে আইএমএফের ঋণ পেতে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় শর্ত তারা দিয়েছে, সেগুলো আমরা নিজেরাই শুরু করছিলা।’

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাক একটা সুখবর পাওয়া গেলো। আড়াই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা এখন সামাল দেয়া সহজ হবে বলে আমি মনে করি। সরকার সাহস পাবে, যেভাবে কোভিড-১৯ এর ছোবল মোকাবিলা করেছিল, ঠিক একই ভাবে যুদ্ধের ধাক্কাটাও মোকাবিলা করতে পারবে বলে আশা করছি। এখন সরকারের কাজ হবে আইএমএফ ঠিক যে কারণে ঋণটা দিচ্ছে, সেটার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।’

তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, অনেক কিছু যাচাই-বাছাই করে কিন্তু আইএমএফ ঋণটা দিতে রাজি হয়েছে। তারা দেখেছে, নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি মোটামুখি একটা ভালো ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। তারা অতীত ইতিহাস ঘেটে দেখেছে, বাংলাদেশ বিদেশি যে কোনো ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ভালো ভাবমূর্তি বজায় রেখেছে; কখনও কোনো ঋণ শোধের ক্ষেত্রে খেলাপি হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আইএমএফ যখন দেখেছে, বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ আছে, তখনই কিন্তু তারা ঋণটা দিতে রাজি হয়েছে। সেদিক থেকে সরকার একটু স্বস্তি পেল।’

‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সেটা নিয়ে গত কয়েক দিন বেশ আলোচনা হচ্ছে, সেটা হলো এই ঋণের জন্য অনেক শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এখানে আমার বক্তব্য হচ্ছে, আইএমএফ যে সব শর্তের কথা বলেছে, সেগুলো কিন্তু একটাও নতুন নয়। এই প্রত্যেকটা কথা আইএমএফ অনেক দিন ধরেই বলে আসছে। আমি এগুলোকে শর্ত বলতে চাই না; পরামর্শ বলব। আইএমএফ যে সব কথা বলছে, সেগুলো কিন্তু আমরা অর্থনীতিবিদরাও বহুদিন ধরে বলে আসছি। যেমন ধরেন, আইএমএফ আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়াতে বলেছে, ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে বলেছে, খেলাপি ঋণ কমাতে বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বায়ত্বশাসন দিতে বলেছে-এগুলো কিন্তু আমরাও বার বার বলে আসছি। আমরা দেশের ভালোর জন্য, মঙ্গলের জন্যই এ সব কথা বলেছি। আইএমএফ তাই বলছে।’

অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর

আহসান মনসুর বলেন, ‘আমি অনেক দিন আমি আইএমএফে কাজ করেছি। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আইএমএফ কখনই কোনো দেশের খারাপ চায় না। ভালোর জন্যই তারা তাদের সদস্য দেশগুলো ঋণ দেয়, পরামর্শ দেয়। আইএমএফ কখনই চায় না, কোনো দেশ বিপদে পড়ুক। বরঞ্চ বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যই তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশকে পরামর্শ দেয়। তার আলোকেই আইএমএফ বাংলাদেশকে আগেও নানা পরামর্শ দিয়েছে, এখনও দিচ্ছে। ভবিষ্যতেও দেবে।’

‘এখন বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্যরাও বাংলাদেশের পাশে আসবে’ এমন আশার কথা শুনিয়ে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, ‘যে কোনো দেশে আইএমএফের ঋণকে মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। আইএমএফ যখন কোনো দেশকে ঋণ দেয়, তখন অন্য উন্নয়ন সংস্থাগুলোও সেই দেশ ঋণ নিতে এগিয়ে আসে; দ্রুত ঋণ ছাড় করে।’

তিনি বলেন, ‘এই কঠিন পরিস্থিতিতে আইএমএফের ঋণটা খুব দরকার ছিল। এই ঋণ একটি আস্থার সৃষ্টি করবে। এখন বিশ্বব্যাংক যে দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে চাচ্ছে, সেটা ধ্রুত ছাড় করবে। এডিবি এগিয়ে আসবে। জাইকা আসবে। সবাই এগিয়ে আসবে। তখন তারা সবাই তাদের সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসবে। আমাা মেটামুাট স্বস্তির মধ্যে থাকব।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ

আইএমএফের আলোচিত এই ঋণ দেশের অর্থনীতির জন্য ‘মঙ্গল’ হবে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সংকট মোকাবিলায় আরও পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সালেহউদ্দিন বলেন, ‘এই ঋণ দেশের অর্থনীতির জন্য ভাল। নতুন ঋণ পাওয়ার রাস্তা খুলে যাবে। কিন্তু এই ঋণ পেয়ে আবার এমন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না, যাতে আমাদের অর্থনীতির ক্ষতি হয়ে যায়। যেহেতু বিশ্বের বিভন্ন দেশের মতো আমরা একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তাই এখন প্রতিটি সিদ্ধান্ত দেখেশুনে, দেশের স্বার্থে নিতে হবে।’

অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ

তিনি বলেন,‘এই ঋণের ভাল প্রভাব আছে। এখন এই ঋণ আমাদের দরকার। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে ছিল। তাছাড়া এই ঋণের সাথে কিছু রিফর্মস (সংস্কার) আসবে। আমরা অর্থনীতিবিদরা যে সব সংস্কারের কথা এতদিন বলে আসছিলাম। এ সব সংস্কার বাংলাদেশের জন্য দরকার ছিল। সেই রিফর্মসগুলো এখন হবে। সেটা ভাল একটি দিক। এছাড়া কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানোসহ আরও কিছু রিফর্মস আইএমএফ চাচ্ছে, সেগুলো না করলেও চলবে।’

‘এই ঋণ পেলে নতুন ঋণের রাস্তা খুলে যাবে’ মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আইএমএফের এই ঋণের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, এখন অন্যান্য যারা দাতা সংস্থা আছে যেমন- বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি বা জাইকা আছে, তাদের কাছ থেকে যখন বাংলাদেশ ঋণ চাইবে তারাও বাংলাদেশকে দ্রুত ঋণ দিয়ে দেবে। অর্থাৎ এই ঋণ বাংলাদেশকে অন্যান্য ঋণের জন্য যোগ্য করে তুলবে। তখন অন্যান্য সংস্থা সহজেই ঋণ দেবে।’

‘তবে আইএমএফের সব শর্ত বাংলাদেশের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়’ উল্লেখ করে সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন,‘আইএমএফ অনেক শর্ত দেবে। কিন্তু সব শর্ত বাংলাদেশের পক্ষে বাস্তবায়ন কার সম্ভব হবে না। দেখতে হবে আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা। সেটার ভিত্তিতে আমরা তাদের শর্ত পালন করব। সেক্ষেত্রে আইএমএফ যে সব শর্ত দেবে সেগুলো নিয়ে তখন তাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। এই ঋণটি ২৬ সালে পর্যন্ত আসবে, সময় পাওয়া যাবে।’

সালেহউদ্দিন বলেন,‘আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা আত্মপ্রসাদে ভুগি। আমাদের রিজার্ভ যখন বেড়ে গেল। আমরা বেসরকারি খাতকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দিলাম। তারা অনেক টাকা ঋণ করে ফেলেছে। আমাদের ১৭ বিলিয়ন তো স্বল্প মেয়াদি ঋণ। নীতিনির্ধারকরা, আমলারা আত্মপ্রসাদে ভোগেন, আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন। এখন যদি এই ঋণ পেয়ে তারা গা হাত পা ছেড়ে দেন; মনে করেন, আমরাতো পার হয়ে গেছি, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশ আবার বিপদে পরে যাবে।’

‘বাংলাদেশকে তার অর্থনৈতিক শক্তি ধরে রাখতে হবে। না হলে আবার সমস্যা হবে। যেহেতু বাংলাদেশের পলিসি মেকাররা, আমলারা যারা দেশ চালাচ্ছেন তারা কারো কথা শুনতে চায় না। তারা মনে করে আমরাইতো সব সল্ভ করে ফেলেছি। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর