আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ ঋণ পাবে তা মোটামুটি আগে থেকেই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে সুখবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
মোট ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আইএমএফ। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী তা ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
প্রশ্ন উঠেছে, এই ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে তা বাংলাদেশের জন্য কতটা ইতিবাচক হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদদের অভিমত, আইএমএফ সহজ শর্তেই ঋণ দিচ্ছে। আর বাংলাদেশের স্বার্থেই এসব শর্ত বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।
আইএমএফ-এর এই ঋণের সুদ হার কত, কীভাবে বাংলাদেশ পরিশোধ করবে- সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, যিনি এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ছিলেন।
জানা যায়, গভর্নরই মূলত ঋণ নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
মোট সাত কিস্তিতে ঋণ দেবে আইএমএফ। প্রথম কিস্তির টাকা ছাড় হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। এর পরিমাণ ৪৪৮ মিলিয়ন বা ৪৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ঋণের পরবর্তী কিস্তিগুলো ৬ মাস পর পর পাবে বাংলাদেশ সরকার।
আইএমএফের ঋণের সুদ হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর জানিয়েছেন, প্রথম যে কিস্তি ছাড় করা হবে তার কোনো সুদ দিতে হবে না। এর পরের কিস্তিগুলো সুদ-আসলে পরিশোধ করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আইএমএফেরও ঋণ পরিশোধে গ্রেস পিরিয়ড রয়েছে। গ্রেস পিরিয়ডের সময় শুধু আসল পরিশোধ করতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, আইএমএফ যে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে তা বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে দীর্ঘ মেয়াদে। অর্থাৎ ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করা যাবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঋণ পেতে আইএমএফের পক্ষ থেকে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা বাংলাদেশের পক্ষে কঠিন না সহজ হবে।
দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন অনুযায়ী আইএমএফের ঋণকে সহজ শর্তের বলা যায়। এই ঋণ পেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি আসবে এবং রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে।
বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকেও ঋণ নেয় বাংলাদেশ। তারা সাধারণত প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ঋণ দিয়ে থাকে।
এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের ঋণের সুদ হার ১ শতাংশের নিচে। তা পরিশোধের সময় থাকে গড়ে ১৫ থেকে ২০ বছর। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে এখন পর্যন্ত বালাদেশকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে আইএমএফের ঋণের ধরন এমনই। বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট ও বাজেট সহায়তায় ঋণ দিয়ে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে বাংলাদেশ সবশেষ ঋণ নিয়েছিল ২০১১ সালে, বর্ধিত ঋণ কর্মসূচি বা ইউসিএফের আওতায়। তখন ১০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল সরকার। ১১ বছর পর তারা আবার ঋণ দিল বাংলাদেশকে।
যোগাযোগ করা হলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মনে করি আইএমএফ সহজ শর্তে বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে। তাদের ঋণের ধরন এ রকমই। প্রতিষ্ঠানটি যেসব সংস্কারের কথা বলেছে তা যথাযথ। তারা কর-জিডি অনুপাত বাড়াতে বলেছে। খলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বলেছে। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এসব সংস্কার করা উচিত।’
আইএমএফের ঋণ পেলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. জায়েদ বখত একই মত প্রকাশ করে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আইএমএফের ঋণ আমাদের দরকার। এটা পেলে অর্থনীতিতে যে চাপ রয়েছে তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে।’