বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সংস্কার বাস্তবায়ন হলে রিজার্ভ স্বস্তিদায়ক হবে: আইএমএফ

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২২ ২০:১৩

আইএমএফ-এর এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনান্দ বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। ফলে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট বা চলতি হিসাবে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঝুঁকি রয়েছে। ঋণের টাকা পাওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়বে। তবে এজন্য সরকারকে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।’

বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই এই মুহূর্তে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করাই সরকারের জন্য জরুরি বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্বস্তিদায়ক অবস্থানে আসবে।

বাংলাদেশে ১৫ দিনের সফর শেষে বুধবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিফ্রিংয়ে এ কথা জানান আইএমএফ প্রতিনিধিদলের নেতা সংস্থাটির এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনান্দ।

সফরের শেষ দিনে বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অর্থমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পর সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন রাহুল আনান্দ।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। ফলে ব্যালান্স অফ পেমেন্ট বা চলতি হিসাবে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঝুঁকি রয়েছে। ঋণের টাকা পাওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়বে। তবে এ জন্য সরকারকে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইএমএফ মিশনের দলনেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আমরা মোটেই উদ্বিগ্ন নই। আর্থিক খাতের সংস্কার কর্মসূচিকে আইএমএফ সব সময়ই গুরুত্ব দেয়, এবারও দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের সঙ্গে সংস্কারের কোনো সম্পর্ক নেই।’

বাংলাদেশ কখনও বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি উল্লেখ করে রাহুল আনান্দ বলেন, ‘আইএমএফ বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন সহযোগী। দীর্ঘ বছর ধরে এ দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতেও এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।’

বুধবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইএমএফ-এর এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনান্দ। ছবি: এএফপি

বৈশ্বিক সংকটের বাস্তবতায় বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হলে আইএমএফ-এর কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চায় ঢাকা। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

চলতি বছরের জুলাইয়ের ২৪ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফ-এর প্রধান কার্যালয় এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তারই অংশ হিসেবে ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে ২৬ অক্টোবর আইএমএফ-এর ১০ সদস্যের একটি স্টাফ মিশন বাংলাদেশ সফরে আসে।

এই সফরকালে প্রতিনিধি দলটি অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে।

এসব বৈঠকে আর্থিক খাতে চলমান সংস্কার কর্মসূচি ও সরকারের নীতি বিষয়ে আলোচনা হয়। ঋণ পেতে বেশকিছু শর্ত নিয়ে আলোচনা করে আইএমএফ।

বুধবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সফর শেষ করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।

আইএমএফ যে বাংলাদেশকে ঋণ দেবে তার ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল। বুধবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সুখবরটি দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাংলাদেশকে সাত কিস্তিতে মোট ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আইএমএফ। ঋণের সুদের হার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ। গ্রেস পিরিয়ডসহ আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে সরকারকে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

এক্সটেনডেট ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি, এক্সটেনডেট ফান্ড ফ্যাসিলিটি ও রেজিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি- এই তিন কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আইএমএফ।

দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তির পর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই আইএমএফ আমাদেরকে ঋণ দিচ্ছে। তারা যেসব শর্ত দিয়েছে মূলত সেগুলো আমাদেরই নেয়া সংস্কার কর্মসূচি, যা বাজেটে উল্লেখ করা আছে।

সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ দলনেতা রাহুল আনন্দ আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। এই রিজার্ভকে তিনি ভালো বা খারাপ কোনো কিছু হিসেবেই আখ্যায়িত করেননি।

রাহুল আনন্দ বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে না কমবে তা নির্ভর করবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। কেননা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি কোনদিকে যাবে তা কেউ বলতে পারছে না।

‘তবে আমরা মনে করি, যেসব সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে এবং রিজার্ভ স্বস্তিদায়ক অবস্থানে আসবে।’

আইএমএফ বলেছে, সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে রাজস্ব আহরণে জোর দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এই খাতে সংস্কার জরুরি বলে মনে করে বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।

দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেট উন্নয়নেও জোর দিতে বলেছে আইএমএফ।

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এই খাতে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেছে আইএমএফ। ভর্তুকি ব্যবস্থাপনায় সংস্কার চায় সংস্থাটি। তারা বলেছে, ভর্তুকির সুফল গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

আইএমএফ বলেছে, মূল্যস্ফীতি সারাবিশ্বেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিশ্ব বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও।

এক প্রশ্নের জবাবে আইএমএফ দলনেতা বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

এ বিভাগের আরো খবর