সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে শুরু হওয়া দরপতনের মধ্যে মঙ্গলবার আশা জাগিয়েও পতনেই লেনদেন শেষ হয়। চতুর্থ কর্মদিবসেও ঘুরে দাঁড়াতে পারল না পুঁজিবাজার।
সূচক পতনের মধ্য দিয়ে বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বনিম্নে অবস্থান করছে।
ব্রোকারেজ হাউসে চেক জমা দিয়ে নগদায়নের আগে শেয়ার কেনা যাবে না বলে ১১ অক্টোবর বিএসইসির নির্দেশনা জারির পর পুঁজিবাজারে পতন হয়। ৩০ অক্টোবর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পর পুঁজিবাজারে কিছুটা উত্থান দেখা যায়।
পরের কর্মদিবস ৩১ অক্টোবরে সূচক ছিল ৬ হাজার ৩০৭ পয়েন্টে। সেখান থেকে ৬ নভেম্বর সূচক বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪১৫ পয়েন্টে। অর্থাৎ এই ৪ কর্মদিবসে সূচকে যোগ হয় ১০৮ পয়েন্ট।
চেক নগদায়ন ইস্যুর শেষ না হতেই বাংলাদেশ সফরে থাকা আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠককে নিয়ে জল ঘোলা হতে থাকে।
আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারের কোনো রকম বাহ্যিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর স্বাভাবিক বাজারের পরিপন্থি। ফলে বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার জন্য আইএমএফ চাপ দিতে পারে বলে আলোচনা হতে থাকে।
যদিও বিএসইসি থেকে জানানো হয়, আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে নেই ফ্লোর প্রাইস। তারপরও সেই উৎকণ্ঠায় বৈঠকের দিন সোমবার সূচকের ২২ পয়েন্ট পতনে লেনদেন হয়।
আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকের পর কোনো নেতিবাচক খবর না আসায় মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুটা হয়েছিল আশা জাগানিয়া, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিরাশ করে সূচক ৮ পয়েন্ট হারিয়ে লেনদেন শেষ হয়।
বিশ্লেষকরা জানান, কয়েক দিনের উত্থানের পর কিছুটা প্রফিট টেকিং হচ্ছে, যার ধারাবাহিকতা বজায় থাকল বুধবারও।
৩৩ পয়েন্ট কমে সূচক পতনের মধ্য দিয়ে সংশোধন আরও দীর্ঘ হলো। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৫০ পয়েন্টে, যা গত ৩১ অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন।
ওই দিন থেকে চার কর্মদিবসে ১০৮ পয়েন্ট উত্থানের বিপরীতে গত তিন দিনে সূচক কমল প্রায় ৬৫ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে যতগুলোর দর বেড়েছে, কমেছে তার তিন গুণের বেশি। ৩৪টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দরপতন হয় ১০৪টির। আর ২১৮টির লেনদেন হয় অপরিবর্তিত দরে, যার দুই-একটি ছাড়া সবই রয়েছে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তরে।
সূচকের সঙ্গে লেনদেনে ভাটা পড়েছে। হাতবদল হয় ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে পৌনে ৫০০ কোটি টাকা কম।
গতকাল লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৯৪ কোটি ৫৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
লেনদেনের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে পতন হয়েছে কিছুটা গুজবের জন্য। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হবে বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আর কিছুটা হয়েছে প্রফিট টেকিংয়ের কারণে। কয়েক দিনের উত্থানে যারা লাভ করতে পেরেছেন, তারা মুনাফা তুলে নিচ্ছেন।’
সূচকে প্রভাব যাদের
সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট সূচক কমেছে বেক্সিমকো ফার্মার দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট কমেছে বিকন ফার্মার কারণে। শেয়ারপ্রতি দাম কমেছে ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
সি-পার্লের দর ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ২ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।
এ ছাড়া ওরিয়ন ইনফিউশন, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, নাভানা ফার্মা, সোনালী পেপার, ইস্টার্ন ক্যাবলস, ইউনিক হোটেল ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ২৫ দশমিক ২৯ পয়েন্ট।
বিপরীতে ২ দশমিক ০৩ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে ওরিয়ন ফার্মা। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
বসুন্ধরা পেপারের দর ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট।
কোহিনূর কেমিক্যাল সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ৭১ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে জেনেক্স ইনফোসিস, মনোস্পুল, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী আঁশ ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট।
শীর্ষ ৫ খাত যেমন
আগের দিনের মতোই শীর্ষ রয়েছে প্রযুক্তি খাত। লেনদেন হয়েছে ২১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা আগের দিনে ছিল ২০৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
২টি করে কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৮টির দরপতন হয়েছে।
১৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকা লেনদেন করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। আগের দিনে লেনদেন ছিল ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
২টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৭টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে, ১১টির দরপতনে।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে কাগজ ও মুদ্রণ খাত। লেনদেন প্রায় অর্ধেক কমেছে খাতটিতে। হাতবদল হয়েছে ৮৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ১৫৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
৩টি করে কোম্পানির দরবৃদ্ধি, ১টির অপরিবর্তিত দরে ও ২টির দরপতন হয়েছে।
চতুর্থ স্থানে থাকা বিবিধ খাতে লেনদেন হয়েছে ৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬টির অপরিবর্তিত ও ৪টির দরপতনে লেনদেন হয়েছে।
পঞ্চম স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ৬০ কোটি ৬০ লাখ, যা গতকাল ছিল ১০৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।
১টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৬টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে। ১৫টির লেনদেন হয় দর কমে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ দর বেড়ে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ টাকা ৩০ পয়সায়, যা আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ২১ টাকা ২০ পয়সায়।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল অ্যাপেক্স ফুডস। ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ২৫৮ টাকা ৫০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ২৩৭ টাকা ৭০ পয়সা।
মনোস্পুলের দর ৮ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়ে ৩৩৩ টাকা ৮০ পয়সায় শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে। আগের দিনের সমাপনী দর ছিল ৩০৮ টাকা ৫০ পয়সা।
এ ছাড়া দরবৃদ্ধির দশে ছিল- সোনালী আঁশ, জেনেক্স ইনফোসিস, পেপার প্রসেসিং, কোহিনূর কেমিক্যাল, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বসুন্ধরা পেপার ও তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল।
দরপতনের শীর্ষ ১০
সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ কমে শমরিতা হসপিটালের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৯ টাকা ৩০ পয়সা, যা আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ৯১ টাকা ৯০ পয়সায়।
ইস্টার্ন ক্যাবলসের দর ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ কমে ২০৩ টাকা ২০ পয়সায় প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। পূর্বের দর ছিল ২২৯ টাকা ৪০ পয়সা।
৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ দর কমে নাভানা ফার্মার শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে ১১২ টাকা ২০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সায়।
এ ছাড়াও পতনের তালিকায় শীর্ষ দশের মধ্যে ছিল মালেক স্পিনিং, লুবরেফ বাংলাদেশ, ওরিয়ন ইনফিউশন, মীর আকতার, সি-পার্ল, ইস্টার্ন হাউজিং ও ম্যাকসন স্পিনিং।