বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভ্যাটের সাড়ে ৬ কোটি টাকা পকেটে ভরেছে ৮ পাটকল

  •    
  • ৮ নভেম্বর, ২০২২ ১০:৩৩

ভ্যাট আদায় করেও জমা দেয়নি বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ৬ প্রতিষ্ঠান ইউএমসি জুট মিলস, দি ক্রিসেন্ট জুট মিলস, প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস, খালিশপুর জুট মিলস, স্টার জুট মিলস ও জাতীয় জুট মিলস এবং বাংলাদেশ জুট মিলস ও লতিফ বাওয়ানি জুট মিলস।

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় করা হলেও তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়নি। এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ছয় প্রতিষ্ঠানসহ আরও দুটি পাটকল। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৬ কোটি টাকার বেশি।

বিজেএমসির সার্বিক কার্যক্রমের ওপর কমপ্লায়েন্স অডিট রিপোর্টে এমন তথ্য পেয়েছে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।

ভ্যাট বাবদ আদায় করা অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়া বিজেএমসির বাইরের প্রতিষ্ঠান দুটি হলো নরসিংদী ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলস ও ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানি জুট মিলস। এই আটটি প্রতিষ্ঠান তিন অর্থবছরে ভ্যাটের টাকা জমা না দেয়ায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৯ টাকা।

নিরীক্ষা রিপোর্ট বলছে, মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১-এর ০৬ ধারা অনুযায়ী ভ্যাটের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমাদানে ব্যর্থতার কারণে ২ শতাংশ দণ্ডসুদ আদায়যোগ্য।

পাটকলগুলোর আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও চেয়ারম্যান এবং বিজেএমসি বরাবর চিঠি ইস্যু করে হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। জবাব না মেলায় ২১ জানুয়ারি তাদের পুনরায় চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত চিঠির কোনো জবাব দেয়নি মন্ত্রণালয় ও করপোরেশন।

বিজেএমসির যে ছয় পাটকলে ভ্যাট ফাঁকি

বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিলস লিমিটেড, খুলনার খালিশপুরের দি ক্রিসেন্ট জুট মিলস, প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস ও খালিশপুর জুট মিলস, খুলনা চন্দনীমহলের স্টার জুট মিলস ও সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠান ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এক কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ১৬৭ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

ছয়টি প্রতিষ্ঠানের জেনারেল লেজার, মিলের চূড়ান্ত হিসাব, সরবরাহকারীদের বিল পরিশোধ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, বিল রেজিস্টার, ভ্যাট আদায় রেজিস্টার এবং অন্যান্য রেকর্ড নিরীক্ষায় দেখা গেছে, বিভিন্ন মিল কর্তৃপক্ষ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে আদায় করা ভ্যাট বাবদ বড় অঙ্কের এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি।

বাংলাদেশ জুট মিলেও ভ্যাট ফাঁকি

নরসিংদীর ঘোড়াশালে অবস্থিত বাংলাদেশ জুট মিলস লিমিটেড ২০১৬-২০১৭ থেকে ২০১৮-২০১৯ পর্যন্ত তিন অর্থবছরে আদায় করা ভ্যাটের পুরো টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। অথচ জুট মিলস কর্তৃপক্ষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই ভ্যাট বাবদ আদায় করে এক কোটি ২৯ লাখ ৬৩ হাজার ৬০০ টাকা।

এ ছাড়া মিল কর্তৃপক্ষ ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভ্যাট আদায় করে ৭৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৯১ টাকা। তা থেকে তারা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৭৬ টাকা। সে হিসাবে জমা না দেয়া ভ্যাটের পরিমাণ ৪৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩০৫ টাকা।

অর্থাৎ বাংলাদেশ জুট মিলসের মোট ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৬ হাজার ৯০৮ টাকা।

লতিফ বাওয়ানি জুট মিলস

ডেমরার লতিফ বাওয়ানি জুট মিলস ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৭০ লাখ ৩৬৮ টাকা আদাল করেও তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি।

এ ছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৫ লাখ ৪২ হাজার ১১৪ টাকা ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৬ লাখ ৩৭ হাজার ২০২ টাকাসহ দুই অর্থবছরে মোট ১ কোটি ৮১ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৬ টাকা আদায় করেও তা জমা দেয়া হয়নি। তিন অর্থবছরে লতিফ বাওয়ানি জুট মিলস মোট ৩ কোটি ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

অভিযুক্ত ৮ প্রতিষ্ঠান যা বলছে

ভ্যাট আদায়ের পরও তা সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন এই ছয় পাটকল। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিলের আর্থিক সংকটের কারণে ভ্যাটের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ জুট মিলস বলছে, ভ্যাট বাবদ আদায় করা অর্থ যথাযথ হিসাবভুক্ত করে রাখা হয়েছে। অর্থসংস্থান সাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা পরিশোধ করা হবে।

লতিফ বাওয়ানি জুট মিলস জানিয়েছে, তারা নিরীক্ষা জিজ্ঞাসাপত্র যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করে তথ্যভিত্তিক জবাব দেবে।

মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় যা বলছে

নিরীক্ষা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করেছে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। তারা বলেছে, পাটকলগুলোর জবাব স্বীকৃতিমূলক। তবে আদায় করা ভ্যাটের অর্থ ব্যয় করার সুযোগ নেই। রাজস্ব বোর্ডের মূসক সংক্রান্ত সাধারণ আদেশ অনুসারে সব অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। দায়ীদের কাছে প্রতি মাসে ২ শতাংশ হারে দণ্ডসুদসহ আদায় করা ভ্যাট বাবদ সব অর্থ কোষাগারে জমা না করার সুযোগ নেই।

এ বিভাগের আরো খবর