রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব হাউসে এখন আর চার্জ দিতে হবে না প্রবাসীদের। এ ছাড়া সব ব্যাংকে রপ্তানি নগদায়নে ডলারের দর ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে রপ্তানির পণ্য নগদায়নে ডলারের দর হবে ১০০ টাকা, যা আগে ছিল ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা।
রপ্তানির নতুন এই দর সোমবার থেকেই কার্যকর হবে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দর আগের মতোই ১০৭ টাকা বহাল রাখা হয়েছে। তবে রেমিট্যান্স পাঠাতে আর চার্জ বা মাশুল দেয়ার প্রয়োজন হবে না বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের। একই সঙ্গে বিদেশে ছুটির দিনেও রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন তারা।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) রোববার বৈঠকে বসে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বাফেদা চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম।
তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্স হাউসগুলো ও ব্যাংকে রেমিট্যান্সের সর্বোচ্চ দর আগের মতোই ১০৭ টাকা থাকবে। তবে রপ্তানি বিল সেটেলমেন্ট আগামীকাল (সোমবার) থেকে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০০ টাকা কার্যকর হবে। এটি আজকের সভার সিদ্ধান্ত।
‘রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব যে হাউস রয়েছে সেগুলোতে কমিশন নেয়া হতো। সেটা পুরোপুরি মওকুফ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা রেমিট্যান্স পাঠান তাদের কাছে এটা যেন কস্ট ফ্রি হয়। এদের কোনো রকম কমিশন লাগবে না।’
কমিশনে কত টাকা খরচ হতো এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটি খুব নমিন্যাল। রেমিট্যান্স অ্যামাউন্টের ওপর এটি ব্যাংক টু ব্যাংক, রেমিট্যান্স হাউস অনুযায়ী হতো। এক বা দুই ডলার- এমন হবে।’
বাফেদা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিদেশে রেমিট্যান্স হাউস বন্ধের দিনও খোলা থাকবে। বিদেশ থেকে যারা রেমিট্যান্স পাঠান তাদের যেন কোনো কর্মঘণ্টা নষ্ট না হয় সে জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
এবিবি চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেনসহ এই দুই সংগঠনের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আমদানির ক্ষেত্রে আগের মতোই রেমিট্যান্স আহরণ ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ব্যাংকগুলোর গড় খরচের সঙ্গে এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করবে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ স্প্রেড সীমা হবে এক টাকা।
এর আগে ২৩ অক্টোবর বৈঠকে রেমিট্যান্সে ডলারের দর ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা ১ নভেম্বর কার্যকর হয়। ওই সভায় রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের দর ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়।
৩১ অক্টোবর আবার বৈঠকে বসে এ দুই সংগঠন। ওই সময় সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে উচ্চ আয়ের প্রবাসী পেশাজীবীদের (হোয়াইট কলার ওয়েজ আর্নার) পাঠানো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে ১০৭ টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
রোববারের বৈঠকে সে সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
‘হোয়াইট কলার ওয়েজ আর্নার বলতে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, ব্যাংকার, নার্সসহ উচ্চ আয়ের পেশাজীবীদের বোঝানো হয়।
ডলারের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে ৮ সেপ্টেম্বর করণীয় নির্ধারণে এবিবি ও বাফেদার সঙ্গে আলোচনায় বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ডলারের একক রেট সংগঠন দুটি নিজেরা আলোচনা করে ঠিক করবে।
ওই বৈঠকে ডলারের বাজার পর্যবেক্ষণ ও আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি বুঝতে সময় নেয় ব্যাংক নির্বাহী ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর এই দুই সংগঠন।
পরে ১১ সেপ্টেম্বর এবিবি ও বাফেদা বৈঠক করে রপ্তানি আয়ে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম ৯৯ টাকা ও প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা দাম বেঁধে দেয়। ১২ সেপ্টেম্বর ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রবাসী আয়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। ওই বৈঠকে প্রবাসী আয় ছাড়া রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের দরে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশে দেশে মুদ্রার দরপতনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। সাত মাসেরও কম সময়ে দেশের মুদ্রার দর পতন হয়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। এই যুদ্ধ শুরুর আগে ডলারের বিপরীতে দর ছিল ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা।