বিদায়ী সপ্তাহের শেষ দুই কর্মদিবসে ফ্লোর প্রাইস থেকে শেয়ারগুলোর বেরিয়ে আসার যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববারে তা কিছুটা উবে গেল।
আবারও কিছু শেয়ার যোগ হয়েছে ফ্লোর প্রাইসের তালিকায়। দিনভর উত্থান-পতনের লড়াই শেষে সূচক সামান্য বাড়লেও লেনদেন কমেছে ২০০ কোটির বেশি।
বুধ ও বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইসের বেশি বা কম দরে লেনদেন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা যেখানে ছিল ১৬৬ ও ১৫৪টি, সেটি আজ কমে হয়েছে ১৫৩টি। একই সঙ্গে ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হওয়া কোম্পানির সংখ্যাও বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার দুই শতাধিক কোম্পানির লেনদেন হয় অপরিবর্তিত দরে, যার দুই-একটি বাদে সবই ফ্লোর প্রাইসে ছিল। সেদিন এমন লেনদেন হয়েছে ২০২টি শেয়ারের। আজ সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৩টিতে।
চেক নগদায়নের আগেও শেয়ার কেনা যাবে বলে বিএসইসি থেকে আদেশ জারি এবং আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ফ্লোর প্রাইস না থাকার বিষয়টি জানানোর ঘটনায় আতঙ্ক কমে বাজার ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের দিকে ফিরবে বলে আশাবাদী হয়ে ওঠেন বিনিয়োগকারীরা।
গত তিন কর্মদিবসে ইতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন হওয়ায় সে আশা আরও জোরালো হয়ে ওঠে, তবে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে কিছুটা উল্টো পথে ছুটল পুঁজিবাজার।
দিনের শুরুতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়, তবে পরের ১০ মিনিটেই আবার আগের অবস্থানে চলে যায়। বেলা ১১টা ২২ মিনিটে সূচকে ২১ পয়েন্ট যোগ হয়। এরপর আবার দরপতনে সূচক পড়লেও আগের দিনের চেয়ে নিচে নামেনি।
এরপর যে উত্থান দেখা দেয়, তাতে দুপুর ১২টা ৫৪ মিনিটে আগের দিনের চেয়ে ২২ পয়েন্ট বেড়ে সূচক দিনের সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪৩২ পয়েন্টে দাঁড়ায়, তবে সেটিও স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ।
১টা ৪৪ মিনিটে সূচক পতনের আশঙ্কা তৈরি হয়, তবে শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ে লেনদেন শেষ হয় ৫ পয়েন্ট বেড়ে। ডিএসইএক্স অবস্থান করে ৬ হাজার ৪১৫ পয়েন্টে।
বৃহস্পতিবার ২২ কর্মদিবস পর প্রথমবারের মতো লেনদেন ছাড়ায় দেড় হাজার কোটি টাকার ঘর। লেনদেন হয় ১ হাজার ৫১২ কোটি ৪৪ লাখ ৯ হাজার টাকা, যা গত ২ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। সেদিন লেনদেন ছিল ১ হাজার ৫৩৩ কোটি ৪০ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
সেখান থেকে কমে রোববার হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৩১ লাখ ১২ হাজার টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ২৩৭ কোটি ১২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা কম।
আজ ৬২টি কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন হয়েছে দর বেড়ে। বিপরীতে কমেছে ৯১টির দর।
রোববারের লেনদেন পর্যালোচনা করেই বাজারকে মূল্যায়ন করার বিপক্ষে মত দেন ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আজকের বাজার দেখেই নেগেটিভ ভাব ঠিক হবে না। আগের সপ্তাহেও শেষে দিকে এসে বাজার গতি পেয়েছিল। বুধবার যেসব এ ক্যাটাগরির শেয়ার ক্রয় ছিল সেগুলো আজ ম্যাচিউরড ছিল, সেক্ষেত্রে ওইসব শেয়ারে কিছু প্রফিট ও সেল থাকতে পারে। আরও দুই দিন গেলে তারপর বোঝা যাবে, আসলে ফ্লোর থেকে বের হবে নাকি ফ্লোরের দিকে যাবে।’
সূচকে প্রভাব যাদের
৪ দশমিক ১৯ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।
বসুন্ধরা পেপারের দর ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৭০ পয়েন্ট।
বেক্সিমকো ফার্মা সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ১১ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে জেনেক্স ইনফোসিস, ইস্টার্ন হাউজিং, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, পূবালী ব্যাংক, বিকন ফার্মা, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ও আনোয়ার গ্যালভানাইজিং।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট সূচক কমেছে স্কয়ার ফার্মার দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ দশমিক ২৬ পয়েন্ট কমেছে সি-পার্লের কারণে। শেয়ার প্রতি দাম কমেছে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।
ওরিয়ন ফার্মার দর ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৮২ পয়েন্ট।
এ ছাড়া ইউনিক হোটেল, বেক্সিমকো লিমিটেড, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, কোহিনূর কেমিক্যাল, মনোস্পুল, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস ও একমি ল্যাবের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট।
শীর্ষ ৫ খাত যেমন
বৃহস্পতিবার ৫টি খাতের লেনদেন শতকোটি ছাড়িয়েছিল, যার মধ্যে তিনটিতে লেনদেন হয়েছিল দুই শ কোটির ওপরে। রোববার শতকোটির ওপরে লেনদেন হয়েছে ৩টি খাতে, যার দুটিতে ২০০ কোটি ছাড়িয়েছে। আর একটির লেনদেন হয়েছে শতকোটির কাছাকাছি।
শতভাগ কোম্পানির দরবৃদ্ধি পেয়ে লেনদেন হয়েছে একমাত্র জীবন বিমায়। এর বাইরে পাটের ২টি বা ৬৬.৬৭ শতাংশ ও সেবা খাতের ২টি বা ৫০ শতাংশ কোম্পানির দরবৃদ্ধি দেখা গেছে।
সবচেয়ে বেশি অপরিবর্তিত দরে লেনদেন হয়েছে বস্ত্র খাতে, ৪৬টি কোম্পানির। এ ছাড়াও এ তালিকায় ছিল প্রধান খাতের মধ্যে ব্যাংকের ২৮টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৮টি, মিউচুয়্যাল ফান্ডের ২৬টি, জ্বালানির ১২টি ও সাধারণ বিমার ১১টি কোম্পানি।
২১১ কোটি ৬১ লাখ টাকা লেনদেন করে শীর্ষে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। আগের দিনে লেনদেন আরও বেশি ছিল, ২২৭ কোটি ৬৭ লাখ। ৬টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৫টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে, ১০টির দরপতনে।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। হাতবদল হয়েছে ২০৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা বৃহস্পতিবার ছিল ২৪২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তার আগের দিনে লেনদেন আরও বেশি ছিল, ৩১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
৪টি করে মোট ১২টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে আগের দরবৃদ্ধি, দরপতন ও অপরিবর্তিত দরে।
১৭৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা লেনদেন করে তৃতীয় স্থানে ছিল প্রযুক্তি খাত। আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ২০০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ৫টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। ৪টি কোম্পানির দরপতন হয়েছে।
চতুর্থ সর্বোচ্চ ৯৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে প্রকৌশল খাতে। ৪টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৩টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে। ১৫টির লেনদেন হয় দর কমে।
পাঁচে থাকা কাগজ ও মুদ্রণ খাতে হাতবদল হয়েছে ৭৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। ৩টির লেনদেন হয়েছে দরপতনে।
জীবন বিমা, সাধারণ বিমা, জ্বালানি, সেবা ও আবাসন ও বস্ত্র খাতে লেনদেন হয়েছে ৭২ থেকে ৫৪ কোটির মধ্যে।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দর বেড়ে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭ টাকা ৬০ পয়সায়, যা আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ১৬ টাকায়।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ৮১ টাকা ৬০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ৭৪ টাকা ২০ পয়সা।
জেনেক্স ইনফোসিসের দর ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে ৯৬ টাকা ১০ পয়সায় শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে। আগের দিনের সমাপনী দর ছিল ৮৭ টাকা ৪০ পয়সা।
এ ছাড়া দরবৃদ্ধির দশে ছিল- বসুন্ধরা পেপার, সিনোবাংলা, বিডি ওয়েল্ডিং, প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ ও পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
দরপতনের শীর্ষ ১০
সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ কমে মনোস্পুলের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩২১ টাকায়, যা আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ৩৪৭ টাকা ৮০ পয়সায়।
হাক্কানিপাল্পের দর ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে ৬৩ টাকা ১০ পয়সায় প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। পূর্বের দর ছিল ৬৮ টাকা ২০ পয়সা।
৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ দর কমে আরএসআরএম স্টিলের শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে ১৭ টাকা ৭০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ১৮ টাকা ৮০ পয়সা।
এ ছাড়াও পতনের তালিকায় শীর্ষ দশের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস, সি-পার্ল, কে অ্যান্ড কিউ, পেনিনসুলা চিটাগং, পেপার প্রসেসিং, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স।