দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানোর কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মনে করেন, জ্বালানির দাম কমালেই মূল্যস্ফীতি কমে আসবে; সুদ হার বাড়িয়ে নয়।
রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে শনিবার সকালে আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে জসিম উদ্দিন এমন মন্তব্য করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতির কাছে প্রশ্ন ছিল, সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা। আপনি কী মনে করেন?
জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি একমত নই। বর্তমানে দেশে আমানতের সুদের হার বেঁধে দেয়া আছে ৬ শতাংশ। অর্থাৎ কেউ ব্যাংকে টাকা রাখলে ৬ শতাংশ সুদ পাবেন। আর ঋণের সুদ হার বেঁধে দেয়া আছে ৯ শতাংশ।’
বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে। আর ব্যাংকগুলো জনগণকে দিচ্ছে মাত্র ৬ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বার বার বলে আসছেন মানুষের টাকার মান কমে যাচ্ছে। তারা টাকা হারাচ্ছে।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে দেশে আমানত ও ঋণে বেঁধে দেয়া সুদ হার পালন হচ্ছে না। ব্যাংকগুলো মানুষকে ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। আমরা এ অবস্থায় ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বাড়াতে চাচ্ছি না। তাহলে কারখানাগুলো তাদের সক্ষমতা হারাবে।’
‘মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে উত্পাদন ঠিক রাখতে হবে। জ্বালানি খাতে সরকার ভর্তুকি বাড়ালে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো আমানতে ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। আর ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ। ব্যাংকগুলো দক্ষ হলে এবং খরচ কমালে তাদের তো এর মধ্যেই মুনাফা হওয়া সম্ভব।
‘ব্যাংকের খরচ কমানো গেলে সুদের হার বাড়ানোর দরকার পড়ে না। ব্যাংকগুলোকে খরচ কমাতে হবে। এখন সবাইকে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে। আমাদের কেন এত ভাড়া দিয়ে ব্যাংকের শাখা খুলতে হবে? চীনের এত বড় অর্থনীতি; সেখানে কিন্তু ব্যাংকগুলো এত লাক্সারি দেখায় না।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সুদের হার বাড়ালে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটা আমি মনে করি না। সুদের হার বাড়ালে মূল্যস্ফীতি কমবে না। আবার কারখানাগুলো টাকা ফেরত দিতে পারবে না।
‘গত দুই বছরে টেক্সটাইল খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। গত কয়েক বছরে ৬০ থেকে ৭০টি স্পিনিং মিলে বিনিয়োগ এসেছে। তারা তো একটি পরিকল্পনা করে আসছে। এখন সুদের হার বাড়িয়ে দিলে তারা সেটা কিভাবে মেটাবে? দিনের শেষে তো টাকাটা তাকে ফেরত দিতে হবে।’
আলোচনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন ইআরএফ-এর সহ-সভাপতি ও বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরো চিফ এম শফিকুল আলম।