রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলে বিশ্বজুড়েই চলছে অর্থনৈতিক সংকট। আভাস আসছে বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার। সে সংকটের বাইরে নয় বাংলাদেশও।
দেশের অত্যাধুনিক বিপণিবিতানগুলোতে পড়তে শুরু করেছে সেই ঝাঁজ। কমে গেছে রাজধানীর অনেক বিপণিবিতানে বিক্রি।
রাজধানীর আধুনিক বেশ কিছু বিপণিবিতানে বিভিন্ন পণ্যের বিক্রয়কর্মী, ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে বেচাবিক্রির হালনাগাদ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্ক। সে মলে গিয়ে কথা হয় ফ্রিল্যান্ড ব্র্যান্ডের ইনচার্জ সাজ্জাদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বিক্রি আগের থেকে একটু কমেছে। পোশাক মানুষের এসেনশিয়াল প্রোডাক্ট হলেও ঠেকে না গেলে পোশাক কেনা থেকে বিরত থাকছে। ফলে কোভিড-পরবর্তী সময়ে যেমন বিক্রি হয়েছিল, এই সময়ে তেমন ফ্লো আর নেই।’
বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে মানুষ সচেতন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ দিন দিন সচেতন হচ্ছে। কীভাবে ব্যয় কমানো যায়, এদিকে নজর বাড়াচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি সামনে ভালো দিন আসবে।’
সঙ্গীর জন্য পোশাক কিনতে আসা জেরিন তাবাসসুম নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘আমি প্রায়ই আমার পার্টনারকে গিফট দিয়ে থাকি। এখনও এসেছি গিফট হিসেবে শার্ট-প্যান্ট ও পাঞ্জাবি কিনতেই।’
অর্থনৈতিক এই অবস্থায় কিছুটা ভীতি কাজ করছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না আমার তেমন কোনো ভয় লাগছে না। যা হওয়ার তাই হবে। দেশের সব মানুষের যে অবস্থা হবে, তার বাইরে তো আমরা যেতে পারব না। তো এত চিন্তা করে লাভ কী? নিজের ইচ্ছাগুলোকে তো আর মাটি দিতে পারি না।
‘তাই সামর্থ্যানুযায়ী যখন যা প্রয়োজন তা করছি। তাই সামর্থ্যানুযায়ী যখন যা প্রয়োজন, সেভাবে নিজের ইচ্ছাগুলো পূরণ করার চেষ্টা করছি।’
বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের পোশাকের ব্র্যান্ড ইয়েলোর সেলস ম্যানেজার রকিবুল রবিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বিক্রি আগের মতোই আছে। তবে ইদানীং কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। মানুষ অত্যাবশকীয় উপাদান ছাড়া অন্য জিনিস কেনার প্রতি একটু সতর্ক হচ্ছে। তাই একটু ধীরগতি এসেছে বিক্রিতে। আশা করছি তা দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারব।’
পুরুষের চেয়ে নারী ক্রেতার সংখ্যা বেশি জানিয়ে একই মলের রাইস ব্র্যান্ডের বিক্রয়কর্মী নাহিদুল ইসলাম জানান, তুলনামূলক ক্রেতা কমলেও নারী ক্রেতা আগের মতোই আছে। এর কারণ হতে পারে, পুরুষরা একটু সচেতন হয়েছেন। কিন্তু তাদের সঙ্গীদের আবদার রাখতে তাদের কেনাকাটা করে দিচ্ছেন। তাই হয়তো নারী ক্রেতার সংখ্যা বেশি।
বিক্রি আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের এই অবস্থায় কিছুটা বিক্রি কমবে এটা তো স্বাভাবিক বিষয়। ধরুন আগে যদি প্রতিদিন বিক্রি হতো দুই লাখ টাকা, এখন সেটা হচ্ছে প্রতিদিন গড়ে এক লাখ ৫০ থেকে ৭৫ হাজার। এই আরকি ব্যবধান। তবে এই অবস্থা থাকবে না। সামনে বিভিন্ন ফেস্টিভ্যাল এলে তা কাটিয়ে উঠতে পারব।’
মোহাম্মদপুর রিং রোডে সারা লাইফস্টাইলের সেলস ইনচার্জ শফিউদ্দীন আহমেদ বলেন, তাদের বিক্রি মোটামুটি আগের মতোই আছে। সব সময় যেমন থাকে তেমনটা এখনও আছে। আগে প্রতিদিন গড়ে যেমন বেচাকেনা হতো বা ক্রেতা সমাগম হতো তেমনই হচ্ছে এখন।
বলেন, ‘আমরা কোনো পরিবর্তন লক্ষ করছি না। আমাদের বিক্রির পরিমাণ ভবিষ্যতে আরও বেশি হবে বলে আমি মনে করি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষ দিন দিন আধুনিক হচ্ছে। তাদের আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে দেশে নানা রকমের ফ্যাশন ব্র্যান্ড তৈরি হচ্ছে। তাই তরুণ-তরুণীদের চাহিদা অনুযায়ী তারা দেশের মানসম্মত কাপড় পাচ্ছে। এ জন্য দেখা যায় বিপণিবিতানগুলোতে সব সময় ভিড়ে লেগেই থাকে।’
তবে বর্তমান অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন করছে। ধরুন আগে ইচ্ছা হলেই যেমন মানুষ প্রয়োজন না থাকলেও একটা পোশাক কিনে ফেলত, তা আর এখন করছে না। কিছু একটা করতে গেলে একটু হলেও ভবিষ্যতের কথা ভাবছে।’