পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় চিনির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের চতুর্থ সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘চিনি নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব দেখছি না, চিনিটা অ্যাভেইলেবল। জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় চিনির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে৷ যে সমস্যা পেয়েছি, সেটি হলো গ্যাসের সাপ্লাই অপ্রতুলতার কারণে ৬৬ শতাংশের বেশি চিনি উৎপাদন করতে পারছে না।
‘চিনির সাপ্লাইটা ঠিকভাবে হওয়া দরকার। সরবরাহ ধীরগতি হলে সমস্যা। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে যেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সে দামে বিক্রি করা যাবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক চিনি গুদামে পড়ে আছে। সেটা প্রসেস করতে পারলে বাজারে আসবে। গ্যাসের সমস্যা সমাধান হলে এটি প্রসেস করা যাবে।
‘যারা গ্যাসের বিষয়টি দেখে তারা বলছে, পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটছে। বিদ্যুতের অবস্থা ইমপ্রুভ করবে, তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আশা করি দুই-এক দিনের মধ্যে গ্যাসের সাপ্লাই স্বাভাবিক হলে যে পরিমাণ চিনি দরকার, তা উৎপাদন সম্ভব হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিনের চাহিদা হচ্ছে ৭ হাজার টন, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ৫ হাজার টন। আমরা আশাবাদী। গ্যাসের সরবরাহ যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে উৎপাদন আমাদের যে লক্ষ্য অবস্থায় যেতে পারব। যা দরকার তা আমাদের হবে। বিশ্ববাজারে একই অবস্থা চলছে।
‘গ্যাস সরবরাহ বাড়লে দামে প্রভাব পড়বে কি পড়বে না, সেটা থেকে বড় কথা হলো সরবরাহ বাড়বে। আমরা ভোক্তা অধিকার দিয়ে সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করছি নির্ধারিত দাম ৯৫ টাকায় বিক্রির। তবে ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত মূল্য থেকে বেশি দাম নিচ্ছে, তবে আমরা ভয় পাচ্ছি ৯৫ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে সেটা। ভয় হচ্ছে সরবরাহটা যদি ধীরগতির হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা আরও সুযোগ নিতে পারে। ফলে গ্যাস সরবরাহ বাড়লে উৎপাদন বাড়বে। তখন বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ হবে। তখন ব্যবসায়ীরা এ সুযোগটা নিতে পারবে না। যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সে দামে ভোক্তারা পাবে।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের কষ্টের বিষয়টি স্বীকার করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করা হয়, ‘যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, গত এক মাসে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় একই শিরোনাম হয়েছে, সংসার আর চলছে না। মানে খরচ এত বেড়েছে যে সংসার আর চলছে না। বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনি কী মনে করেন?’
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা সত্যি কথা যে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টের পেছনে কিন্তু আমাদের চেয়ে বৈশ্বিক কারণ বেশি। এখন বৈশ্বিক কারণটা তো আমরা রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারব না।
‘প্রত্যেক মানুষের জীবনে কখনও ভালো সময় থাকে, কখনও খারাপ সময় থাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন সামনে দুর্ভিক্ষ হতে পারে, খাদ্যের অভাব হতে পারে। সে চিন্তা করেই কিন্তু উনি বারবার বলছেন। উনি সবসময় অনেক অ্যাডভান্স চিন্তা করেন যাতে করে আমাদের সমস্যা না হয়।’
আজকের সভা থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সুখবর আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের খবরটা দিচ্ছি যে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সয়াবিন তেলের বিষয়টি আমাদের ট্যারিফ কমিশন ঠিক করবে। আমি আজকে এখনই বলেছি, খুব শিগগিরই আবার বসে পুরো জিনিসটা অ্যাসেস করে, স্টাডি করে তারা নির্ধারণ করবে।’
গম আসছে কানাডা থেকে
ইউক্রেন-রাশিয়ার বাজার বন্ধ থাকায় কানাডাসহ অন্য দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা গম আনা শুরু করেছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি। তিনি আশা করেন, খুব শিগগিরই গমের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
টাস্কফোর্সের সভার বিষয়টি তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গমের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এটা নিয়ে আমাদের এক বড় ব্যবসায়ী বলল, তার একটি জাহাজ টার্কিতে আটকে ছিল। সেটা রওনা হয়েছে। সেখানে ৫৫ হাজার টন গম রয়েছে। অর্থাৎ গমেরও সরবরাহ বা সাপ্লাই ঠিক হয়ে যাবে, তবে ইউক্রেন হলো আমাদের প্রধান সরবরাহকারী দেশ।
‘সেখান থেকে আনতে পারলে গমের বাজার স্থিতিশীল হবে, তবে এখন দাম বেশি পড়লেও দেশের ঘাটতি মেটাতে কানাডা থেকে এনে আনার দেয়ার চেষ্টা করছি। অনেক ব্যবসায়ীরা কমিটমেন্ট করেছে, তাদের যা প্রয়োজন তা আনতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘গম আমাদের যে পরিমাণ আমদানির কথা ছিল, সেখানে একটু ঘাটতি দেখছি। ইউক্রেন-রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলে গম সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, তবে আমাদের ব্যবসায়ীরা এই বাজারে সমস্যার জন্য অন্য বাজার থেকে গম কেনা শুরু করেছে। যদিও দাম একটু বেশি পড়ছে।
‘কানাডা থেকে আসছে। তাদের মানও ভালে। এই বাজারটা স্বাভাবিক হলে আমাদের কোনো সমস্যা থাকবে না। আর কোনো বড় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি।’
ডালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন টিসিবির মাধ্যে আমাদের নির্ধারিত দামেই দিচ্ছি। ডালের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। সে কারণে হয়তো দাম কিছুটা বাড়তে পারে। ট্যারিফ কমিশন এ বিষয়ে দেখবে।
‘তারা যে দামটা বাড়িয়েছেন সেটা যৌক্তিক কি না সেটা তারা দেখবে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে সে প্রভাবটা এখানে এসে পড়েছে।’
ডলারের দামের কারণে বিশ্ববাজারে রড ও সিমেন্টের দাম কমলেও সে সুবিধা দেশে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও একটু ডিটেইলে যেতে হবে। বিশ্ববাজারে দাম কমার ফলে আমাদের যে সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, সেটা আমরা ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সে সুবিধা পাচ্ছি না। এখন ডলারের দাম যদি কমে তাহলে আমরা ভোক্তাদের সে সুবিধা দিতে পারব।
‘ওভারঅল চলমান অবস্থায় আমাদের ঘাবড়ানোর কিছু নেই। খাদ্যের যে উৎপাদন, সব মিলিয়ে খাদ্যের কোনো সমস্যা হবে না। মানুষের মূল ফোকাস থাকে খাদ্যে। সেটা ঠিক থাকলে কোনো সমস্যা হয় না। অন্যদিকে আপস করা যায়, কিন্তু খাদ্যে আপস করা যায় না।’