বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আর কি ফিরে আসবে মৃৎশিল্পের দিন

  •    
  • ২ নভেম্বর, ২০২২ ০৯:২৭

দিনাজপুরের রামচন্দ্র পাল বলেন, ‘মাটির জিনিসের ব্যবহার উঠেই যাচ্ছে। পূজা-পার্বণে একটু বেশি বিক্রি হয়। সরকারি তেমন অনুদান আমরা পাই না। পূর্বপুরুষদের ব্যবসা বলে এটা ছাড়তেও পারি না। এই কাজ ছাড়া অন্য কাজ শিখি নাই। তাই ধরে আছি।’

সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা। দিনাজপুর জেলা শহরের মহারাজ গিরিজানাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে রামচন্দ্র পাল নামে এক মৃৎশিল্পী নিজের বানানো মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করছেন। বংশানুক্রমে রামচন্দ্র এই ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত। তার ভাই জগন্নাথ পাল এবং বৈদ্যনাথ পালও একই কাজে যুক্ত।

আগে তিন ভাই চাকা ঘুরিয়ে মাটির জিনিসপত্র প্রস্তুত করতেন। এখন বৈদ্যনাথ পাল চাকা ঘোরান না। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটির তৈরি জিনিসপত্র পাইকারি দরে কিনে তা খুচরা বিক্রি করেন।

কথা হয় রামচন্দ্র পালের সঙ্গে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘একটা সময় মাটির জিনিসপত্রের অনেক চাহিদা ছিল। লাভও ভালো হতো। কিন্তু বর্তমানে লাভ করা খুবই কষ্টকর। আগে এক ট্রলি মাটি নিয়ে এলে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ করা যেত। আর এখন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ ওঠানোই দায়।

‘আগে মাটি পাওয়া যেত, কিন্তু এখন আর মাটিও পাওয়া যায় না। আমাদের কাজই যেখানে মাটি নিয়ে, সেখানে মাটি সংকটই আমাদের কাল। অন্যদিকে খড়ির দাম বেশি। মাটির জিনিসের ব্যবহার উঠেই যাচ্ছে। পূজা-পার্বণে একটু বেশি বিক্রি হয়। সরকারি তেমন অনুদান আমরা পাই না। পূর্বপুরুষদের ব্যবসা বলে এটা ছাড়তেও পারি না। এই কাজ ছাড়া অন্য কাজ শিখি নাই। তাই ধরে আছি। সরকারি অনুদান পেলে ভালো হয়।’

রামচন্দ্র পালের ভাইদের কথাও একই রকম। অন্য মৃৎশিল্পীরাও বলেন, আগে মাটির জিনিস বিক্রি করে তাদের সংসার চলত। কাঁচামাল সংকট, জনসাধারণের মাটির জিনিসপত্রের ব্যবহারে অনীহা, আধুনিকতার ছোঁয়া, সরকারি অনুদানের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে দিনাজপুরের মৃৎশিল্প। বিসিক কর্মকর্তাও মনে করেন মাটির জিনিসপত্রের ব্যবহার দিন দিন কমে যাওয়ায় এই শিল্প বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।

বৈদ্যনাথ পালের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আগে চাকা ঘুরাইতাম। এখন মুদিখানায় ব্যবসা করি। আর পাশপাশি সৈয়দপুর, কাহারোল, কাঁওগাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি দরে জিনিস কিনে বিক্রি করি। এতে লাভ কম হয়। বাপ-দাদার শিখিয়ে যাওয়া ব্যবসা ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে না। তাই ধরে রাখছি।’

মমতা পাল নামের এক নারী মৃৎশিল্পী বলেন, ‘আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি এই কাজ করেই। স্বামী মারা গেছেন। উনি বানাতেন। এখন আমি বানাই হাত দিয়েই। চাকা ঘুরাইতে আমি পারি না। হাত দিয়ে যা যা বানানো সম্ভব, তাই বানাই। বর্তমানে মাটির সংকট হওয়ায় কাজ করে তেমন লাভ হয় না। একটা সময় হয়তো এই ব্যবসা চলবে না।’

পার্বতী পাল নামের এক মৃৎশিল্পী বলেন, ‘আমার স্বামী যখন বেঁচে ছিলেন, তখন থেকে এই ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। এখন মানুষের বাড়ি থাকি। আর এই কাজ করেই সংসার চলে। এখন আমার ভাইয়েরা চাকা ঘোরায়। এখন মাটি সংগ্রহ করতে হয় পুকুর শুকিয়ে গেলে। সেখানে মাটি দলা করে কিনে নিতে হয়। একটা মাটির দলা কিনে আনতে খরচ হয় ৭ থেকে ১০ টাকা করে। সব কিছু বাদ দিয়ে মোটের ওপর ৫০ টাকা লাভ হয়। এই ব্যবসা করে চলা খুবই মুশকিল।’

দিনাজপুর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক)-এর উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বর্তমানে মাটির জিনিসের ব্যবহার কমে আসায় এই শিল্প বিলুপ্তির পথে। কটেজ শিল্পের মধ্যে পড়ে মৃৎশিল্প। কটেজ শিল্পের মধ্যে আরও রয়েছে গবাদিপশু পালন, এমব্রয়ডারি শিল্প প্রভৃতি। মৃৎশিল্পের জন্য পৃথকভাবে ঋণের সহায়তা করা না হলেও কটেজ শিল্পের আওতায় তাদের জন্য ঋণের সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আর্থিক কোনো ধরনের অনুদানের ব্যবস্থা নেই।

এ বিভাগের আরো খবর